বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারী বিরোধী দলের মনোনয়ন তালিকায় এবার বেশ কিছু তরুণ প্রার্থী রয়েছেন।
কিন্তু এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আলোচনায় এসেছেন শেখ সারহান নাসের তন্ময়, যদিও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এর আগে তার নাম খুব এটা শোনা যায়নি।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাটের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ সারহান নাসের তন্ময়।
যদিও মনোনয়ন পাবার আগে থেকেই ফেসবুকে রীতিমত ভাইরাল তিনি।
দলের মনোনয়ন পাবার পর নিজের ফেসবুক পাতায় সুদর্শন এই তরুণ লিখেছেন, “আমাদের অনেক স্বপ্ন আছে, আমরা সুন্দর বাংলাদেশ চাই। শুধু বাগেরহাটের নয়, সারা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের আমি একজন প্রতিনিধি। বাগেরহাটের পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মতো আমারও অনেক স্বপ্ন আছে”।
কিন্তু এই দলীয় মনোনয়ন পাবার আগে থেকেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে তার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও।
এসব ছবি ও ভিডিও’র নীচে রাজনৈতিক নানা মন্তব্য যেমন এসেছে তেমনি ব্যক্তিগতভাবে করা অনেক মন্তব্যও চোখে পড়ে।
বিশেষ করে তরুণী বা নারীদের নামে আসা অসংখ্য মন্তব্য দেখা যায় যেখানে শেখ তন্ময়কে তাদের কেউ ‘ক্রাশ’ কিংবা কেউবা ‘নায়ক’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন।
ফেসবুকে মেয়েদের এই আগ্রহকে তিনি কীভাবে দেখছেন?
দেখতে তুলনামূলক লম্বা, সুন্দর ও নায়কোচিত চেহারার এই তরুণকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে মেয়েদের এই আগ্রহকে তিনি কীভাবে দেখেন ?
জবাবে বিবিসি বাংলাকে শেখ তন্ময় বলেন, “আমরা তরুণ বলেই তরুণদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। যারা আমার সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করছেন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ”।
কিন্তু রাজনীতির বদলে তিনি সুদর্শন বলেই তার প্রতি এতো আগ্রহ কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ জন্য আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
“কিন্তু আমি মনে করি এদেশের তরুণরা আমাদের মাধ্যমেই তাদের স্বপ্ন দেখছে দেশ নিয়ে। আগ্রহের মূল কারণ এটাই। কারণ তরুণরা এখন সবাই দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।”
ফেসবুকে কিছু মন্তব্য
ফেসবুকে শেখ তন্ময়ের একটি পোস্টে সামাইরা স্বর্ণা নামে একজন লিখেছেন “আপনি অনেক জলদি বিয়ে করে ফেলছেন”।
তানিয়া বৃষ্টি লিখেছেন “বাংলাদেশে হ্যান্ডসাম নায়কের অনেক অভাব। আপনি জয়েন করছেন না কেন?আপনি তো পুরো বলিউড নায়কদের মতো দেখতে”।
আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে শেখ তন্ময়ের একটি ছবির নীচে পিয়ালি দত্ত নামে একজন লিখেছেন, “দিজ পিকচার ওয়াজ টু মাচ হার্মফুল ফর মাই হার্ট..তন্ময় ইউ আর মোর কিউট নাউ দেন ইউর চাইল্ডহুড” অর্থাৎ এই ছবি আমার হৃদয়ের জন্য ক্ষতিকর.. তন্ময় তুমি ছোটবেলার চেয়ে এখন বেশি কিউট।”
“শেখ সারহান নাসের তন্ময় ভাইয়া, আমরা আপনাকে কতোটা পছন্দ করি, আপনাকে কতোটা ভালোলাগে তা হয়তো আপনি বুঝে গেছেন ! আমরা সব মেয়েরা (ছেলেদের কথা জানিনা ) আপনার জন্য নির্বাচনী প্রচারণা করা শুরু করে দিয়েছি, আপনার কোনো চিন্তা নেই! আপনি শুধু দয়া করে একটা কাজ করবেন !তাহলো আপনি প্রতিদিন আপনার নতুন নতুন ছবি আমাদের জন্য প্রকাশ করবেন আর তাতেই আমরা খুশি!”- মন্তব্য করেছেন সীমা আরিফ।
অন্যদিকে অনেক নারী তার প্রতি ভালোবাসাও প্রকাশ করছেন!
“কত্ত সুন্দর একটা পোস্ট দিচ্ছি আমার টাইমলাইনে, আপনার জন্য শুধু ‘আই লাভ ইউ” লিখেছেন সাথিলা আরাবি মেহেরজান।
তবে মি: তন্ময়ের পোস্ট শেয়ার দেয়া নিয়ে অনেককে মজা করতেও দেখা গেছে। বিশেষ করে প্রেমিকদের। যেমন রাফিম হাছানাত হিযবু ফেসবুকে শেখ তন্ময়কে লিখেছেন- ” ভাইই, আমার গার্লফ্রেন্ডরে একটু ব্লক করে দেন, ও আপনার কথা বলতে বলতে কান ঝালাপালা বানাই পেলতাছে, অসহ্য লাগছে ! আর পারছি না…..”।
একজন একটি পোস্ট কমেন্টে শেখ তন্ময় ও তাঁর স্ত্রীর ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “ধোঁকা খাইলাম! দিতাম না ভোট..” । সাথে জুড়ে দিয়েছেন কান্নার ইমোজি।
কীভাবে রাজনীতিতে এলেন তন্ময়
বিবিসি বাংলাকে শেখ সারহান নাসের তন্ময় বলছেন, “একটা পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক আবহেই আমি বড় হয়েছি। ফুফু (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা)কে একেবারে কাছে থেকে দেখছি সেই ছোটবেলা থেকে। বাবাও রাজনীতি করছেন। সব মিলিয়ে রাজনীতি আমার কাছে নতুন নয়”।
তবে দলীয় রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা হয়েছে তাঁর ২০১৭ সালে বাগেরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সদস্যপদ লাভের মধ্য দিয়ে।
মূলত এরপরই নানা সভা সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করেন ১৯৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করা শেখ তন্ময় যিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের নাতি ।
তার বাবা শেখ হেলাল উদ্দিন বর্তমানে বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্যও দলের মনোনয়ন পেয়েছেন।
শেখ সারহান নাসের তন্ময় সম্পর্কে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য
শেখ তন্ময় বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন শৈশবে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ঢাকায় পড়ালেখার পর তিনি ভারতে একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। পরে আবার ঢাকায় এসে ও লেভেল এবংএ লেভেল পড়া শেষ করেন।
এরপর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারীর পর তিনি আবার ভারতে যান ও এরপর ২০১২ সালে আবার ঢাকায় ফেরেন।
এরপর উচ্চশিক্ষার্থে লন্ডন যান। পরে ঢাকায় এসে বিয়ে করেন এবং মাঝে কিছুদিন সিঙ্গাপুরে চাকুরীও করেছেন।
গত বছরের শেষ দিক থেকে পুরোদমে রাজনৈতিক কাজে মনোযোগী হন আর তখন থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়।
সুত্র,বিবিসি