আ,হ,জুবেদঃ খালাম্মার নিজ কোনো সন্তান না হওয়াতে তিনি যে খুব কষ্টে ছিলেন, তা মোটেও বলা যাবেনা। কারণ তিনি বোনের সন্তানদেরকে, ভাইয়ের সন্তানদেরকে নিজ সন্তানের দৃষ্টিতে দেখতেন।
মাঝে মাঝে আত্ম-সান্ত্বনা মূলক একথাও উনার মুখে শুনেছি যে, আমার সন্তান নেই,তাতে এক ক্ষেত্রে বেশ ভালোই হয়েছে। কারণ যদি আমার সন্তান হওয়ার পর, সেই সন্তান ঠিক মানুষের মতো মানুষ হতো না। তখন কী করতাম, তার চেয়ে সন্তান একেবারেই হয়নি সেই ভালোই হয়েছে।
কিন্তু একেবারেই নিঃসন্তান হওয়াও যে এক ধরনের অভিশাপ, এটি শুধুমাত্র ভুক্তভোগীরা’ই সহজে অনুভব করতে পারেন।
জীবনে দেখেছি অনেক নিঃসন্তান মানুষের অব্যক্ত কষ্ট, দেখেছি তাদের দুর্দশা, দুর্গতি এবং শেষ বয়েসের লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা।
যদিও আমার খালাম্মার এই সন্তানহীন জীবনে সেরকম কোনো কষ্ট ছিলনা, কিংবা কখনো দেখিনি সন্তানের মা না হওয়ার আফসোস।
কারণ আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় এক সন্তানহীন মায়ের কিছুটা হলেও কষ্ট লাঘব হয়েছিল।
খালাম্মার অনেক গুণাবলি আত্মীয়- স্বজন সহ সবাইকে দারুণ ভাবে মুগ্ধ করতো। যেমন তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য, নিয়মিত নামাজ, রোজা ,অতিথি আপ্যায়ন করানো এবং স্বজনদের কেউ অসুস্থ্য কিংবা বিপদগ্রস্থ হলে কোরান খতম মানত করা ও বড় তছবী ইত্যাদি।
খালাম্মাকে যারা খুব কাছ থেকে সবসময় দেখেছেন তাদের মতে, আমার খালাম্মা খুবই আল্লাহ্ ওয়ালা, ফরেজগার একজন মহিলা ছিলেন।
আমার খালাম্মা সদা হাস্যময়ী একজন মহিলা ছিলেন, জীবনে কখনো দেখিনি অকারণে কাউকে ধমক দিয়ে কথা বলেছেন, কাউকে কথার মাধ্যমে আঘাতপ্রাপ্ত করেছেন।
পরিবারের সবার সঙ্গে ছিল এক আত্মার সম্পর্ক, পারিবারিক বিশেষ অনুষ্ঠানে উনার উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক। মোটকথা, উনি ছাড়া পারিবারিক ভাবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজনই হতোনা।
আমার জীবনের শৈশবের বেশ কিছু সময় নানার দেশ সদর মৌলভীবাজারের বেকামুড়া গ্রামে কেটেছে। সেসময়’ই কেবল খালাম্মার অবর্ণনীয় ভালোবাসা পেয়েছিলাম, খালাম্মা নানার বাড়ি মাঝে মাঝে আসার সুবাদে।
দুই থেকে আড়াই যুগ আগের সেইসব হারানো দিনের সুখময় স্মৃতি গুলো মনে হলে এখনো অশ্রু ঝরে অবিরত।
খালাম্মা সবাইকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসতেন, বেশি বেশি করে খাবার খেতে আমাদেরকে নানান গল্প শুনাতেন।
বেকামুড়ার শাহ্দরঙ্গের মেলা মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতো, সেসময় উনি ছোট-বড় সবাইকে মেলা থেকে আমাদের পছন্দের জিনিস কেনার জন্য ১০/১৫/২০ টাকা করে দিতেন।
মামা,খালা,নানা ও নানী সহ সিনিয়র সবাই মেলায় যাওয়ার টাকা দিতেন, মেলায় গিয়ে সখের কতো কিছুই না কেনা হতো।
খালাম্মার মুখে উপদেশের বাণী প্রায় সময়’ই শুনতাম ……
চলবে ……………(২)