জগলুল হুদা ::পাহাড়ের জুমের ধান কেটে উঠানো ব্যস্ততা সময় কেটেছে আদিবাসী পরিবার গুলিতে । তবে প্রবল বৃষ্টিপাঠ ও বৈরী আবাহওয়া কারনে আদিবাসীদের ভাল ফলন না হওয়াই মুখের হাঁসি নেই। আদিবাসীদের মাঝে প্রতিবছর ধান কাটার শেষে নব্বান্ন উৎসবে মেতে উঠে ।চলতি বছরে এই উৎসবে আনন্দ কমে গেচ্ছে । বান্দরবানে থানছি উপজেলায় দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জুম চাষীরা ।২০০৬-০৭ সালে ইঁদুর বন্যা,বন্য শুকরে তান্ডব এবং এ বছরে বৈরী আবাহওয়া কারনে আদিবাসীদের জুমের উৎপাদিত পাকা ধান,মরিছ,মিস্তি কুমড়া,চাল কুমড়া, ভুট্টা, মারফা, তিল,কলা ইত্যাদি ও অন্যান্য ফসল সময় মত তুলতে পারেনি । এই বছরে আদিবাসীদের মুখের হাঁসি ফুটেনি । সরেজমিনে গিয়ে আদিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বড় মধক পাড়ায় মংক্যচিং মারমা ৪২ সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন ৬ বছর আগে ইঁদুর বন্যা ও বন্য শুকর তান্ডবে তার এলাকায় প্রায় ৩০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । তিনি ১০ হাঁিড় ধান জুমের ফসলের মধ্যে সব মিলে ৭০/৮০ হাঁড়ি (১০ কেজি ধান)এক হাঁড়ী পেয়েছে । বাড়ীতে ১০/১২জন লোকে দুই/তিন মাসে খোরাগী পেয়েছে বাকি মাস গুলি নিয়ে দিশেহারা । রেমাক্রী এলাকায় পনেডং পাড়ার অদমং কারবারী ৬৫ সাথে কথা হয় ,তার এলাকায় ২০টি পাড়ার মধ্যে ৮শত জুম চাষী আছে তারা সকলে জুমের ধান ভাল ফলন হয়নি তাই ছেলেমেয়েদের নব্বান্ন উৎসবে মেতে উঠতে পারেনা । অভিরাম বৃষ্টিপাঠ ও বৈরী আবাহওয়া কারনে ধান কাটাতে পারিনি তবে সম্ভব ও হয়নি বৃদ্ধা বয়সে ছেলে মেয়েদের কান্না শুনতে। তিন্দু ইউনিয়নের জুমীয়া গিড়ি চন্দ্র ত্রিপুরা ৫২ সাথে কথা হলে তিনি জানান,একবার ইঁদুর বন্যা মোকাবিলা করতে ৬টি বছরে ও অধিক সময় লাগে । আবার বন্য শুকর খেয়ে তাদের পাড়ায় ৪০ পরিবার মাথা হাত দিয়ে বসে আছে । চলতি বছরে অভিরাম বৃষ্টি ও বৈরী আবাহওয়া কারনে জুমের ভাল ফলন হয়নি। যা পেয়েছে তা দিয়ে নিজেরা কি খাব আর ছেলে মেয়েদের কি দিয়ে পড়াব । জিন্নাপাড়া এলাকার পারিং ম্রো ৫৩ সাথে কথা হলে তিনি ও একই কথা বললেন। উপজেলা সদরে ইউপি মেন্বার শৈখ্যাই ম্রো ৪৫ সাথে তার জুমে কথা হলে গত বছরে বন্যা শুকরে তান্ডবে ও এই বছরে বৈরী আবাহওয়া কারনে জুমের ধান ও বিভিন্ন ফসল উঠাইতে হিমশিম খাচ্ছে । আবার অনবরত বৃষ্টি কারনে অবস্থিত ধান গুলির নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এলাকার অধিকাংশ জুমচাষীরা এবারে ৩ মাসের খোরাগ ছাড়া পাওয়া যাবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি । খোজ নিয়ে জানা গেচ্ছে, থনাছি উপজেলা ৪টি ইউনিয়নের ১১ হাজার পরিবারে মধ্যে প্রায় ১০ হাজারেও বেশী জুম চাষী টানা বৃষ্টি ও বৈরী আবাহওয়া কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে এলাকাবাসীদের মন্তব্য ।এইদিকে থানছি সদরে ওয়াক চাক্কু পাড়া প্রধান থাওয়াই কারবারী সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত বছর ছোট ছোট বন্য শুকরে দল বেঁধে আমাদের জুমের ধান কাটা অবস্থাতে ও পিচ্ছন থেকে জুমের ধান সাবার করে ফেলেছে আবার এই বছরে ভাল ফলন হয়নি। বলিপাড়া এলাকায় বান্দরবান থানছি সড়কে পাশে জুম চাষী অংবাই মারমা ,সাখয় ম্রো,চন্দ্র মনি ত্রিপুরা সাথে কথা হলে তারা জানান,এবারে ভারী বৃষ্টি হওয়ার এবং রোদ্র তাপমাত্রা বেশী কারনে জুমের পাকা ধান অধিকাংশ নষ্ট হয়েছে । বলিপাড়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি সহসভাপতি ক্যসাউ মারমা জানান,বলিপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় নাইতিং ও সেকদু মৌজায় প্রায় ১২শত পরিবার জুম চাষীর মধ্যে এই বছরে ও অধিকাংশ জুমের ভাল ফলন হয়নি। রেমাক্রী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছা সেবক লীগের সভাপতি মালিরাম ত্রিপুরা জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার সকলের জুম চাষী দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভারী বৃষ্টি হওয়া ও বৈরী আবাহওয়া কারনে অধিকাংশ পরিবারের জুমের ধান আশানুরুপ ফলন হয়নি।তিন্দু ইউনিয়নে চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে সিনিয়র সহ সভাপতি সিগরাং ত্রিপুরা জানান,তার এলাকার ২ হাজার জুম চাষী এবারে ভাল ফলন ও উৎপাদন করার সম্ভব হয়নি।এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী (উদ্ভী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর সাথে কথা হলে তিনি বৈরী আবাহওয়া ও টানাও অবিরাম বৃষ্টি হওয়ায় জুম চাষীদের ভাল ফলন হয়নি অধিকাংশ পরিবারের ধান উঠাতে পারবেনা তাদের কষ্ট জীবন দেখলে খারাপ লাগে। উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, উপজেলা ৩৭৪০ বর্গকিলোমিটা পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ধংস করে ফেলেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়া মূল্যবান কাঠ বাঁশ বেত ইত্যাদি মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করেছে। বিশাল এলাকা অরক্ষিত রয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে তোলা পশুপাখি জীব জন্তু হরিণ,বাঁঘ,ভাল্লুক,ময়না পাখি সহ অসংখ্য জীব জন্তুকে জীবনের প্রয়োজনের মেরে ফেলে খেয়ে ফেলেছে। সুতারাং প্রকৃতি ডাক আর অনিয়মিতভাবে হওয়ার কারনে পাহাড়ে ধান তিল, ভূট্টা,আম,তুলা,আদা,হলুদ ইত্যাদি উৎপাদন শক্তি হ্রাস পাওয়ার ফলে এই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।#