সব বাধা বিপত্তি ভেঙ্গে মেয়েরা জাতি গঠনের পথে এগিয়ে যাবে। কোনো বাধায় মেয়েদের এগিয়ে চলাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় শুক্রবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের উদ্দেশে ‘গার্লস লিড দ্য ওয়ে’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন তিনি।
নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় আমার শান্তি আর উন্নয়ন চিন্তার অন্যতম ভিত্তি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা মেয়েদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে চলা আটকে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশের মানুষই এখন সচেতন, আর সাধারণ মানুষ জানে তাদের জন্য কোনটা ভালো কোনটা মন্দ।
তিনি বলেন, মৌলবাদীরা এক সময় মেয়েদের শিক্ষার বিরুদ্ধে ছিলো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা সে চ্যালেঞ্জ উতরে গেছি। আমরা বিশ্বাস করি জাতির জন্য শিক্ষাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমরা যদি মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে পারি আর তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিতে পারি তারা নিজেরাই তখন অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের অবসানে সরকারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাল্যবিয়ের অবসানে এরই মধ্যে আমরা বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি। এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে সময়োপযোগী করা হয়েছে, আর নেওয়া হয়েছে জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এখন বেশি স্কুলে যাচ্ছে। তবে গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি দেখলে মেয়েদের অগ্রগতি এখনও অসম রয়ে গেছে, সংঘাতময় এলাকাগুলোতে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে। বিশ্বের ছয় কোটি শিশু এখনও স্কুলে যেতে পারছে না, যাদের অধিকাংশই মেয়ে। টেকসই উন্নয়নে ২০৩০ সালের এজেন্ডায় এই দিকটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের সমতার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল বাংলাদেশ তা অর্জন করেছে। এই অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন কোনো কিছুকেই আমরা কোনো সুযোগ দেবো না।
নারী শিক্ষা নিশ্চিত করতে তার সরকার যে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নারীরা দেখিয়েছেন সুযোগ পেলে তারা যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। আর সরকার হিসেবে আমাদের কাজই হচ্ছে নারীর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে তারা সমতা ও মর্যাদার জীবন নিশ্চিত করতে পারেন।
মেয়েরা যাতে স্কুলে নিরাপদ থাকতে পারে সে লক্ষে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তাদের বিভিন্ন কৌতুহল ও জিজ্ঞাসার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বিশেষ করে মেয়েদের নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
বাল্য বিয়ে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েরা শিক্ষিত হলে, কাজ করলে নিজের ব্যাপারে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তার সরকার ওই বিষয়টিই নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
বক্তৃতা শেষে সকল প্রোটোকল ভেঙ্গে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা ডায়াসে ছুটে এসে প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে ধরে ও ছবি তোলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলায় কথা শুনতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, উচ্চশিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে তারা যেনো জাতি গঠনে নিজেদের নিয়োজিত করে।