রোববারের হামলায় নিহতদের স্মরণে তিন মিনিটের নীরবতা পালন করেছে শ্রীলংকা, বহাল আছে জরুরি অবস্থাও।
এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে নিহতদের জন্য গণ শেষকৃত্য।
কর্তৃপক্ষ ওই হামলার জন্য দায়ী করছে ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত বা এনটিজে নামক একটি জিহাদি গোষ্ঠীকে।
এ পর্যন্ত ৪০ জনকে আটক করেছে পুলিশ তবে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
গণ শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে কলম্বোর উত্তরে নেগম্বো শহরে সেন্ট সেবাস্টিয়ান গির্জায়।
এ গির্জাতেও রোববার ভয়াবহ হামলা হয়েছিলো।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৩০মিনিটে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শোক ও শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান শুরু হয়।
রোববার যে সময়ে বোমা হামলা শুরু হয়েছিলো সে সময়টিকেই নীরবতা পালনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে এবং নীরবতা পালনের সময় মানুষ মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানায় নিহতদের প্রতি।
হামলায় প্রাণ হারালো যারা
শ্রীলংকায় ইস্টার সানডের ভয়াবহ হামলায় গির্জা ও হোটেলে নিহত হয়েছে ৩১০ জন। কী জানা যাচ্ছে নিহতদের সম্পর্কে?
নিহতদের মধ্যে প্রায় সবাই শ্রীলংকার নাগরিক যদিও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন কমপক্ষে ৩১ জন বিদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন বিস্ফোরণে।
বিদেশীদের মধ্যে ব্রিটেন, ভারত, ডেনমার্ক, সৌদি আরব, চীন, তুরস্ক এবং বাংলাদেশের নাগরিকরা রয়েছেন।
সরকার ইতোমধ্যেই গুজব ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
এসব কারণে বিস্তারিত খবর আসতেও সময় লাগছে, এরপরেও বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো কিছু মানুষের সম্পর্কে যা জানা গেছে তা নীচে তুলে দেয়া হলো:
শ্রীলংকার তারকা শেফ সামান্থা মায়াদুন্নে ও তার কন্যা নিসাঙ্গা
বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে প্রথম যাদের পরিচয় যাওয়া গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির সুপরিচিত শেফ সামান্থা মায়াদুন্নে।
বিস্ফোরণের ঠিক কিছুক্ষণ আগেই তার মেয়ে নিসাঙ্গা সাংগ্রি লা হোটেলে সকালের নাস্তা গ্রহণের সময় তোলা তাদের পরিবারের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন।
পরে তাদের পরিবারের এক সদস্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানায় যে সামান্থা ও নিসাঙ্গা দুজনেই মারা গেছেন।
“এ কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন” লেখেন তিনি।
সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের চার কর্মী
হোটেলের একটি রেস্টুরেন্টের চার কর্মী নিহত হয়েছেন এ ঘটনায়।
“এটা ছিলো ব্যস্ত একটি সকাল। রবিবারের সকাল ও বুফে ব্রেকফাস্ট। তাই এটা আমাদের খুবই ব্যস্ততম একটি সময়,” হোটেলটির একজন মুখপাত্র বলছিলেন বিবিসিকে।
“তারা রেস্তোরায় সার্ভ করছিলো। এর মধ্যে একজন লাইভ ফুড স্টেশনে হোপারস (শ্রীলংকান পেনকেক) বানাতো”।
নিহত চারজন হলেন- সান্থা, সাঞ্জিভানী, ইব্রাহিম ও নিসথার।
সাংগ্রি লা হোটেলের তিন স্টাফ
ফেসবুকে এক বিবৃতি দিয়ে হোটেলটি জানিয়েছে যে তাদের তিন কর্মী গুরুতর আহত হয়ে।
তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি।
ডেনিশ বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ীর তিন সন্তান
ডেনিশ ধনকুবের আন্দ্রেস হোচ পোভলসেনের তিন সন্তান নিহত হয়েছে রোববারের হামলার ঘটনায়।
তাঁর একজন মুখপাত্র এটি নিশ্চিত করেছেন বিবিসি’র কাছে।
তবে তাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি।
মাত্র চার দিন আগেই সন্তানদের একজন শ্রীলংকায় তোলা একটি ছবি ইন্সটগ্রামে পোস্ট করেছেন।
মিস্টার পোভলসেন (৪৬) ব্যাপক জনপ্রিয় অনলাইন রিটেইলার আসস এর বড় অংশীদার।
ব্রিটেনের আট নাগরিক
কলম্বোতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার জেমস দাউরিস ব্রিটিশ নাগরিকদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
এর মধ্যে এক পরিবারের তিন জন রয়েছেন।
বেন নিকলসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন তার স্ত্রী আনিতা, ১৪ বছর বয়সী পুত্র অ্যালেক্স ও ১১ বছর বয়সী আন্নাবেল সাংগ্রি লা হোটেলে নিহত হয়েছেন।
চার রাজনীতিকসহ আট ভারতীয়
নিহত আট ভারতীয়র মধ্যে পাঁচজন ব্যাঙ্গালুরুতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।
তারা জনতা দল পার্টির সদস্য।
কর্ণাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারাস্বামী টুইট বার্তায় বলেছেন তিনি এসব নেতাকর্মীকে ব্যক্তিগতভাবেই চিনতেন।
জানা গেছে তারা হোটেলে পৌঁছেই সরাসরি ব্রেকফাস্ট টেবিলে গিয়েছিলেন।
আর ৫৮ বছর বয়সী একজন রোববার সকালেই দুবাই থেকে কলম্বো গিয়েছিলেন স্বজনদের সাথে দেখা করতে।
কেরালার এই নারী স্বামীর সাথে দুবাইতে বসবাস করতেন।
দুই তুর্কি প্রকৌশলী
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনাদলু তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
প্রকৌশলী সেরহান সেলচুক নারিসি ২০১৭ সাল থেকে কলম্বোতে বাস করছিলেন।
তার পিতা আনাদলুকে জানিয়েছেন সেরহান সেখানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভবন নির্মাণ কাজে জড়িত ছিলেন।
আরেকজন হলেন ভিগিত আলী কেভাস, তিনিও একজন প্রকৌশলী।
তবে বিস্ফোরণের সময় তারা কোথায় ছিলেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
অস্ট্রেলিয়ান মা ও মেয়ে
নেগম্বো শহরে সেন্ট সেবাস্টিয়ান গির্জায় নিহত হয়েছেন এক অস্ট্রেলিয়ান মা ও তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে।
মানিক সুরিয়ারাচি ও মেয়ে আলেক্সান্দ্রিয়া গির্জায় রোববারের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন স্বামী সুদেশ কলণের সাথে।
তিনি যখন একটু বেরিয়েছিলেন গির্জা থেকে তখনি বিস্ফোরণটি ঘটে।
“প্রচণ্ড শোরগোল শুনলাম। দেখলাম আমার মেয়েটি ফ্লোরে এবং আমি তাকে তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে এর মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছিলো। এবং এরপরই দেখি আমার স্ত্রী”।
বাংলাদেশী রাজনীতিকের নাতি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতিও এ ঘটনায় নিহত হয়েছে।
কলম্বোর হোটেলে বিস্ফোরণে সে মারা যায়।
তার পিতাও ওই ঘটনায় আহত হয়েছে।
এছাড়াও নিহতদের মধ্যে রয়েছে পর্তুগালের ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার রুই লুকাস, ডাচ নাগরিক মনিক অ্যালেন, যুক্তরাষ্ট্রর নাগরিক ডিয়েটের কোভালস্কি এবং ওয়াশিংটনের স্কুল ছাত্র কিয়েরেন শাফরিটজ ডি জয়সা।
যদিও স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম বলছে কমপক্ষে চারজন আমেরিকান এই ঘটনায় নিহত হয়েছে।
সূত্র, বিবিসি