অনিয়মের অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে শনিবার রংপুর নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজে তালা দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
সেই সাথে তারা অনশন মানববন্ধনসহ আলটিমেটামও দিয়েছে।
এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নার্সিং কলেজে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, নিয়ম বর্হিভূতভাবে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে রশিদ ছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায়, টাকা না দিলে শিক্ষার্থীদের ফেল করে দেওয়া, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা এবং শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নার্সিং কলেজের কয়েকজন শিক্ষককের অপসারণের দাবিতে ঈদের আগে বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসুচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ সাদিকা বেগমকে প্রধান করে সেবা অধিদপ্তর ঢাকা থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত ২৫ জুন রংপুরে এসে তদন্ত করে যায়। তদন্ত শেষে গত ২১ জুলাই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকার সেবা অধিদপ্তরের পরিচালক নীলুফার ফরহাদের কাছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রংপুর নার্সিং কলেজের শিক্ষক একরামুল হক রিংকুকে রংপুর মেডিকেল কলেজে ও সর্দার আবুল কাশেমকে কুড়িগ্রাম নার্সিং কলেজে এবং গাড়িচালক আইয়ুব আলীকে রাজবাড়ি নার্সিং কলেজে বদলি করা হয়। এছাড়া নার্সিং কলেজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রংপুর নার্সিং কলেজের ছয় শিক্ষার্থীকে ডেপুটিশনে রাজশাহী নার্সিং কলেজে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই ছয় শিক্ষার্থী হলেন- শাহ মোস্তফা মনোয়ার, সুমি আক্তার, লাভলী ইয়াসমিন লিমা, চিত্রা রায়, রাকিবুল ইসলাম ও শিহাব হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা রংপুর নার্সিং কলেজের সকল কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর তারা নার্সিং কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
সমাবেশে বলা হয়, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাদের ছয়জনের বিরুদ্ধে ডেপুটিশনের যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাও বাতিল করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে তাও মনগড়া। তাই আগের তদন্ত কমিটি বাতিল করে নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করতে হবে।
সমাবেশ থেকে রোববার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও সমাবেশ, ২৭ জুলাই সংবাদ সম্মেলন এবং ২৯ জুলাই আমরণ অনশন কর্মসুচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুমি আক্তার, মোস্তফা মনোয়ার, রাকিবুল ইসলাম, শিহাব প্রমূখ।
রংপুর নার্সি কলেজের অধ্যক্ষ লুতফুন নেসা জানান, রাজশাহী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ সাদিকা বেগমকে প্রধান করে সেবা অধিদপ্তর ঢাকা থেকে গঠন করা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। এতে দুই শিক্ষক এবং একজন গাড়ি চালককে বদলি এবং ছয় শিক্ষার্থীকে রাজশাহী নার্সিং কলেজে ডেপুটিশনে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ মেনে নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ সবার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ২৮ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফরম পুরণ চলবে। এরপর ৬ অগাস্ট তাদের পরীক্ষা। কিন্তু গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর কারণে সাধারণ শিক্ষাথীরা জিম্মি হয়ে পড়ছে।
অধ্যক্ষ অবিলম্বে আন্দোলন ছেড়ে শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. বিমল কুমার বর্মণ জানান, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে না এলে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম কিবরিয়া জানান, নার্সিং কলেজে বর্তমানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।