ডেস্ক নিউজ : মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালালে কিংবা এতে মদদ দিলে ১৪ বছর জেল বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রেখে ”ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮”এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। তবে আগে একই অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছিল।
অনুমোদনের জন্য খসড়া আইনটি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সাইবার ঝুঁকি রোধে আইনটি কঠোর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খসড়ায় মোট নয়টি অধ্যায় ও ৬৩টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় দেখা যায়, সাইবার সন্ত্রাস রোধে খসড়ায় নতুন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিচারকাজ চলাকালে বিচারক প্রয়োজন মনে করলে কোনো ডিজিটাল অপরাধের টেকনিক্যাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারবেন।
এছাড়া মহাপরিচালক কর্তৃক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত একটি নতুন বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
৫৪ ধারায় অপরাধের গুরুত্ব ও দণ্ডের মাত্রার ভিত্তিতে কতিপয় অপরাধকে আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য এবং কতিপয় অপরাধকে অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ধারা-১৮ (১)(ক)কে আদালতের সম্মতিসাপেক্ষে আপসযোগ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ধারা-৬২এ আইন কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ধারা ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ বিলুপ্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
খসড়া আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যা মিথ্যা, অশ্লীল এবং যা মানুষের মনকে বিকৃত ও দূষিত করে, মর্যাদাহানি ঘটায় বা সামাজিকভাব হেয় প্রতিপন্ন করে; অথবা কেউ যদি স্বেচ্ছায় কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পাঠ করলে বা দেখলে বা শুনলে তা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে, তাহলে তিনি দুই মাস থেকে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
নতুন এ আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই এজেন্সি ডিজিটাল সন্ত্রাসরোধে তাৎক্ষণিকভাবে যে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সমিশন বন্ধ করে দিতে এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে।
বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও বাংলাদেশের জন্য হুমকি ও ক্ষতিকর কিছু, অন্যকোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে কিংবা সম্পদ নষ্ট করে এমন কিছু, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তা, প্ররোচনা ও এমন সংশ্লিষ্ট অপরাধ সাইবার সন্ত্রাস হিসেবে গণ্য হবে এবং উপরোক্ত শাস্তির আওতায় পড়বে।
নতুন আইনে কম্পিউটারে কিংবা মোবাইল ফোন সংক্রান্ত প্রতারণা ও হুমকি দেয়ার জন্য নির্ধারিত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধের জন্য এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে। তাছাড়া কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ডিভাইস সংক্রান্ত ডিজিটাল জালিয়াতির অপরাধেও একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া ইলেকট্রনিকমাধ্যমে প্রতারণার উদ্দেশ্যে কেউ অন্যের পরিচয় ধারণ করলে কিংবা অন্যের তথ্য নিজের বলে চালালে এই অপরাধের জন্য এক থেকে ৫ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনের ধারা-৭এ মহাপরিচালকের অতিগুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণার ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু মহাপরিচালকের পরিবর্তে সরকারকে এ ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ধারা-১৩এ জরুরী পরিস্থিতিতে মহাপরিচালকের নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা এবং ধারা-১৪এ নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে অপ্রযোজনীয় বিবেচনায় উক্ত ধারাসমূহ বাদ দেয়া হয়েছে।
নতুন এ আইনে পর্ণোগ্রাফীর জন্য আলাদা শাস্তির বিধান রাখা হলেও এসব বিষয় পর্ণোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ এর আওতাভুক্ত হওয়ায় এসব ধারা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।