রসগোল্লার আবিষ্কার কোথায়- তা নিয়ে এর আগে তুমুল হৈচৈ আর আইনি লড়াই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আর ওড়িশার মধ্যে।
রসগোল্লার পরে এবার বিরিয়ানি নিয়ে লড়াই বেঁধেছে দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্যে।
ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের বিরিয়ানি পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছে আগেই।
একসময়ে অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী ছিল হায়দ্রাবাদ শহর। কিন্তু পুরনো অন্ধ্র ভেঙ্গে এখন তৈরি হয়েছে নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানা। আর রাজধানী হায়দ্রাবাদ পড়েছে তেলেঙ্গানার ভাগ্যে।
অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের সব দপ্তরই এখন চলে গেছে বিজয়ওয়াডার কাছে, তাদের নতুন তৈরি হওয়া রাজধানী শহর অমরাবতীতে।
আর পুরনো রাজধানী শহরের সঙ্গে সঙ্গেই তারা হারাতে বসেছে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির ব্র্যান্ড ভ্যালুও।
তাই অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য চেষ্টা করছে নিজস্ব বিরিয়ানি ব্র্যান্ড তৈরি করতে। খুঁজেও পেয়েছে তারা নিজস্ব এক রেসিপির বিরিয়ানি। এর নাম ‘বঙ্গু বিরিয়ানি’।
বিশাখাপতনমের কাছে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র আরাকু উপত্যকার আদিবাসীদের রন্ধনপ্রণালী থেকে এসেছে এই বঙ্গু বিরিয়ানি।
এই নামের রহস্য হল বঙ্গু বা বাঁশের খোলে দমে রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি।
অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, তিনি নতুন অন্ধ্র প্রদেশেরও মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি পর্যটন দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে বঙ্গু বিরিয়ানিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা চালাতে হবে, তৈরি করতে হবে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির পাল্টা ব্র্যান্ড।
এই নিয়েই বেঁধেছে বিরিয়ানির লড়াই।
“এটা ছেলেমানুষি হচ্ছে। একে আঞ্চলিকতাবাদ ছাড়া আর কি বলব? অন্ধ্রের নিজস্ব কি অসাধারণ সব আমিষ খাবার রয়েছে, যেমন গোঙ্গুরা মাংসাম। শত শত বছরের পুরনো চিরাচরিত সেই খাবার ছেড়ে বিরিয়ানি নিয়ে পড়েছে ওরা। আর বিরিয়ানিটা তো অন্ধ্রের নিজস্ব রেসিপিও নয়। সেটা তো নিজামদের হাত ধরে গেছে হায়দ্রাবাদে।” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ভারতের প্রখ্যাত খাদ্য সমালোচক-ঐতিহাসিক ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পুষ্পেশ পন্থ।
তার মতে, “অন্ধ্রের নিজস্ব খাবারে তো চাল, মরিচ আর সামুদ্রিক মাছের চলন বেশি। আবার পুথারেকু বা পেপার সু্ইটের মতো মিষ্টি রয়েছে, যেটা তৈরি করা সত্যিই একটা শিল্পকর্ম। সেইসব রেসিপিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করতে পারত ওরা। সেটা না করে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির পাল্টা একটা বিরিয়ানির ব্র্যান্ড তৈরি করার কোনও যুক্তি দেখছি না আমি।”
তবে বঙ্গু বিরিয়ানিকে যেভাবে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে সমর্থনও রয়েছে অনেকের।
যেমন হায়দ্রাবাদের সেলেব্রিটি শেফ মি. ইয়াদাগিরি। তিনি বঙ্গু বিরিয়ানির চিরাচরিত রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে যোগ করেছেন নিজের কিছু কৌশল।
মি. ইয়াদাগিরি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি পুরো পৃথিবীতে জনপ্রিয় ঠিকই, কিন্তু বঙ্গু বিরিয়ানি বা কিছুটা একই পদ্ধতিতে তৈরি কাবাবের মতো বঙ্গু চিকেনও খুবই সুস্বাদু। এগুলো এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কিন্তু খাদ্য রসিকদের খুশি করার মতো বা সাধারণ মানুষের জিভে জল আনবেই এগুলো। তবে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির সঙ্গে পাল্লা দিতে এখনও সময় লাগবে বঙ্গু বিরিয়ানি বা বঙ্গু চিকেনের।”
‘বঙ্গু বিরিয়ানি’ কি?
বেশ মোটাসোটা বাঁশের খোলে রান্না হয় এই বিরিয়ানি, যা হায়দ্রাবাদী, লক্ষ্ণৌ পোলাও (যা লক্ষ্ণৌ বিরিয়ানি নামে পরিচিত), কলকাতা বিরিয়ানি বা কেরালার বিরিয়ানি রান্নার থেকে একেবারে আলাদা পদ্ধতি।
“হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি বা লক্ষ্ণৌ বিরিয়ানি অথবা কলকাতা বিরিয়ানি যেমন হান্ডিতে দম দিয়ে তৈরি হয়, বঙ্গু বিরিয়ানিতে দম দেওয়া হয় বাঁশের খোলের ভেতরেই,” বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন শেফ মি. ইয়াদাগিরি।
“ভেজানো কাঁচা চালের সঙ্গে পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, তেজপাতা, ঘি সব একসঙ্গে পুরে দিতে হবে বাঁশের খোলের ভেতরে। তার মধ্যেই হাড় ছাড়া মুরগীর টুকরো দিতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে পরিমাণ মতো জল। তারপরে বাঁশের খোলের মুখ বন্ধ করে কাঠকয়লার আঁচে দিতে হবে। আধঘণ্টা থেকে ৩৫ মিনিট মতো ভাপে সেদ্ধ হবে বাঁশের খোলের ভেতরে থাকা চাল, মাংস আর সবজি,” বলছিলেন মি. ইয়াদাগিরি।
বঙ্গু চিকেন তৈরি করতে হলে মুরগির মাংসে কাবাবে যেসব মশলা দেওয়া হয়, সেগুলো মাখিয়ে একই পদ্ধতিতে বাঁশের খোলের ভেতরে পুড়ে দিতে হবে।
তারপরে কয়লার আঁচে বাঁশের খোলটা দিয়ে দিলেই হবে। আধঘণ্টা পরে একবার পরখ করে নিতে হবে যে মুরগী ঠিকমতো রান্না হয়েছে কি না।
পুষ্পেশ পন্থ অবশ্য বলছেন, “এমনিতেই বিরিয়ানি নিয়ে একটু বেশিই হৈচৈ হয়, হাইপ তোলা হয়। এখন দেখছি রসগোল্লার লড়াইয়ের পরে বিরিয়ানি নিয়েও দুই রাজ্যে লড়াই বাধল।”
সূত্র, বিবিসি