খেলাধুলা ডেস্ক: সূচী অনুযায়ী আজ (বুধবার) হওয়ার কথা ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের দুটি ম্যাচ। যার একটিতে মুখোমুখি হবে বায়ার্ন মিউনিখ ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যটিতে আতলেতিকো মাদ্রিদের প্রতিপক্ষ ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটি। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের টিম বাসে বোমা হামলার কারণে মোনাকোর সঙ্গে তাদের ম্যাচটি এ দিন হয়নি। সেটিও তাই হবে আজ রাতেই। মানে বুধবার রাতে হচ্ছে তিনটি ম্যাচ। তবে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবে বায়ার্ন বনাম রিয়ালের ম্যাচটিই। শুধু সেরা দুই দলের লড়াই বলেই নয়, বায়ার্নের ঘরের মাঠ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনার ম্যাচটিতে ফুটবল পিপাসুদের মন ভরাতে যে থাকছে আরও অনেক রসদই!
ম্যাচটা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১.৪৫ মিনিটে। আদতে কোয়ার্টার ফাইনাল। কিন্তু শুরুর আগে অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনার ম্যাচটাকে কেউ বলছেন কোয়ার্টার ফাইনালের আদলে আসলে ফাইনাল। কেউ বলছেন এটা আসলে গুরু-শিষ্যের লড়াই। কেউ বলছেন, ম্যাচটা কার্লো আনচেলত্তির প্রতিশোধের মিশন। কেউ বলছেন ম্যাচটা আসলে জাবি আলোনসো, টনি ক্রুস, আরিয়েন রোবেনদের পুনর্মিলনী। তাদের কারো কথাই মিথ্যে নয়। বায়ার্ন-রিয়ালের লড়াইয়ে জড়িয়ে থাকছে এর সবই।
দুই দল মিলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোট ১৬ বার! রেকর্ড ১১ বার রিয়াল মাদ্রিদ। পাঁচ বার বায়ার্ন। সর্বশেষ চার মৌসুমেই মধ্যে তিনবারই চ্যাম্পিয়ন রিয়াল-বায়ার্ন। রিয়াল দুবার, বায়ার্ন একবার। দুই দল মিলে ফাইনালে খেলেছে ২৪ বার। তার চেয়েও বড় কথা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ১৭ বার মুখোমুখি হয়েছে রিয়াল-বায়ার্ন। উপরের এই তথ্যগুলোই বলছে, রিয়াল-বায়ার্নের ফাইনালে দেখা হলেই ভালো হতো। দুই দলের প্রত্যাশাও ছিল সেটাই। কিন্তু ড্র দুর্ভাগ্য তাদের কোয়ার্টার ফাইনালেই মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তবে ম্যাচটি ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে যে উন্মাদনা, তাতে কোয়ার্টার শব্দটা বাদ দিয়ে ম্যাচটাকে ফাইনাল বলাই যায়! তো অলিখিত এই ফাইনালে জয়ের জন্য দুই শিবিরই মরিয়া।
বায়ার্ন কোচ কার্লো আনচেলত্তির জন্য এটা আবার এক ধরনের প্রতিশোধের মিশন। ২০১৩-১৪ মৌসুমে সেমিফাইনালে এই বায়ার্নকে হারিয়েই রিয়ালকে ফাইনালে তুলেছিলেন আনচেলত্তি। পরে রিয়ালকে উপহার দেখিয়েছিলেন বহুল কাঙ্খিত ‘লা ডেসিমা’। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দশম শিরোপা। কিন্তু দারুণ ওই অর্জনের পরও আনচেলত্তি-রিয়াল অধ্যায়ের শেষটা হয়েছে তিক্ততায়। সেই আনচেলত্তি এখন বায়ার্নের কোচ। ২০১৫ সালে রিয়াল ছেড়ে আসার পর রিয়ালের মুখোমিুখ হচ্ছে এই প্রথম। আনচেলত্তি চাইছেন, যেকোনো মূল্যে ম্যাচটা জিতে মনের জ্বালা জুড়াতে।
বুধবার রাতে আনচেলত্তি যখন বায়ার্নের ডাগ আউটে দাঁড়াবেন, প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের ডাগ আউটে থাকবেন তারই শিষ্য জিনেদিন জিদান। আনচেলত্তি রিয়ালে থাকার সময়ই কোচ হিসেবে অভিষেক হয় জিদানের! ছিলেন আনচেলত্তির সহকারী। জিদান খেলোয়াড়ী জীবনেও শিষ্য ছিলেন আনচেলত্তির। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত জুভেন্তাসে ছিলেন ফরাসী কিংবদন্তি। জিদানের শেষ দুই বছরে জুভেন্তাসের কোচ ছিলেন আনচেলত্তি। গুরু-শিষ্যের সেই শ্রদ্ধা-ভক্তির সম্পর্ককে চাপা রেখে আজ তারা একে অন্যের প্রবল প্রতিপক্ষ। দুজনেই আলাদা আলাদা ছক কষছেন, একে অন্যকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য। গুরু-শিষ্যের এই লড়াইয়ে কে জেতে, সেটা জানা যাবে রাতেই। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আনচেলত্তি-জিদান দুজনেই।
আনচেলত্তি-জিদানের জন্য যেটা গুরু-শিষ্যের লড়াই, জাবি আলোনসো, টনি ক্রুস, রোবেনদের জন্য সেটা আসলে হয়ে যাচ্ছে পুর্নমিলনী। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জাবি আলোনসো বায়ার্নে যোগ দেওয়ার আগে ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছেন রিয়ালে। সেই সাবেক ক্লাবেরই মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। টনি ক্রুস, রোবেনের ক্ষেত্রেও ঘটনাটা একই। জার্মান মিডফিল্ডার ক্রুস রিয়ালে যোগ দেওয়ার আগে খেলেছেন বায়ার্নে। ডাচ রোবেন বায়ার্নের যোগ দেওয়ার আগে দুই বছর খেলেছেন রিয়ালে। আজ তাই তারা সাবেক ক্লাবেরই মুখোমুখি। এক সময় যে ক্লাবের জয়ের জন্য সামর্থের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন, আজ নিজেদের উজাড় করে দেবেন তাদেরই হারিয়ে দিতে। হায়রে পেশাদারিত্ব!
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই