Menu |||

ফুটবল বাতাসে এমনভাবে বাঁক খায় কি করে?

এবারের বিশ্বকাপে মনে করে দেখুন স্পেনের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোর সেই ফ্রি কিক, অথবা সুইডেনের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে টোনি ক্রুসের ফ্রি কিকটির কথা।

কিভাবে বলটা বাতাসে এতখানি বাঁক খেয়ে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের ‘দেয়াল’কে বোকা বানিয়ে গোলে ঢুকে যেতে পারে?

ফুটবলের পাশাপাশি যারা ক্রিকেট খেলাও দেখেন তারা জানেন, ক্রিকেট বলও বোলারের হাত থেকে বেরিয়ে বাতাসে বাঁক খায় – যাকে বলে সুইং। কিন্তু ক্রিকেট বলের আকৃতি, গড়ন, তার সেলাই – সবকিছুই ফুটবলের চাইতে একেবারেই আলাদা।

ক্রিকেট বলের চেয়ে আকৃতিতে অনেক বড়, বাতাস ভরা, আড়াআড়ি কোন সেলাই নেই – তার ওপর হাতের পরিবর্তে পায়ে খেলা হলেও ফুটবল এমনভাবে বাতাসে বাঁক খায় কিভাবে?

এই ‘সোয়ার্ভিং ফ্রি কিকের’ ব্যাপারটা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ১৯৫০এর দশকের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ডিডি। তিনিই প্রথম ব্যাপারটা খেয়াল করেন যে যদি এমনভাবে শট নেয়া যায় যে বলটা ঘুরতে ঘুরতে যাবে – তাহলে বাতাসে তার গতিপথ অনেকখানি বেঁকে যায়।

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

তখনকার দিনের যে চামড়া দিয়ে ফুটবল বানানো হতো তা খুব পানি শুষে নিতো, ভিজলেই বলটা ভারি হয়ে যেতো। তাই ইউরোপে – যেখানে শীতকালে অনেক বৃষ্টি হয় – সেখানে বল বাতাসে তেমন ঘুরতো না।

কিন্তু ব্রাজিলের মত ল্যাটিন আমেরিকান দেশে গরম এবং শুকনো আবহা্ওয়ায় সে রকম সমস্যা ছিল না। তাই এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে এই টেকনিক দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলেই আবিষ্কৃত হয়েছিল।

১৯৬০এর দশকে এক বিরাট পরিবর্তন আসে ফুটবল বানানোর ক্ষেত্রে। এমন সিনথেটিক সামগ্রী দিয়ে বল তৈরি হতে থাকে যা ভিজলেও পানি শুষবে না। তাই কিছুদিনের মধ্যেই ইউরোপের খেলোয়াড়রাও শিখে গেলেন কিভাবে ডিডির মতো বাঁকানো ফ্রিকিক নিতে হয়।

ব্যাপারটার পেছনে আছে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র। একটা ফুটবল যখন বাতাসে ঘুরতে ঘুরতে যায়, তখন তা পেছনের অংশে বাতাসের আলোড়ন তৈরি হয়, আর সামনে ও দু’পাশে বাতাসের চাপের একটা পার্থক্য তৈরি হয় – যা বলের গতিপথকে বাঁকা করে দেয়।

কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে বিজ্ঞানীদের অনেক বছর লেগেছে।

তা হলো: যে চামড়ার টুকরোগুলো সেলাই করে বলটা তৈরি – সেই সেলাইয়ের খাঁজগুলোরও একটা ভূমিকা আছে বলের বাঁক খাওয়ার ক্ষেত্রে।

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

ফুটবলের সবচেয়ে পরিচিত ডিজাইন হলো ষড়ভূজ আকৃতির ৩২টি বা ২৬টি চামড়ার টুকরো বা ‘প্যানেল’ সেলাই করে তৈরি।

কিন্তু ২০০৬ সালে জার্মানির বিশ্বকাপের সময় এডিডাস কোম্পানি ‘টিমগাইস্ট’ নামে যে বল তৈরি করে – তাতে প্যানেল ছিল মাত্র ১৪টি।

ফুটবলের পেছনের বিজ্ঞান নিয়ে একটি বই লিখেছেন ড. কেন ব্রে।

তিনি বলছেন, বিজ্ঞানীরা দেখলেন ফুটবলের প্যানেল সংখ্যা যত বেশি হবে – বাতাসে বলের গতিপথ ততই স্থিতিশীল হবে অর্থাৎ কম বাঁক খাবে।

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

কিন্তু প্যানেল যদি কম হয়, আর তার সাথে বলটা যদি বাতাসে ঘোরে – তাহলে তা বেশি বাঁক খাবে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কতটা বাঁক খাবে তা আরো অনেকখানি নির্ভর করছে, যে খেলোয়াড়টি ফ্রিকিক নিচ্ছেন তিনি শট নেবার সময় বলটিকে কতখানি ঘোরাতে চাইছেন।

যদি ঘূর্ণন বেশি হয় তাহলে বলটা একটা ‘স্বাভাবিক’ বাঁক নেবে, আর যদি ঘূর্ণন কম হয় – তাহলে বলটা অপ্রত্যাশিত রকমের বাঁক নিতে পারে, যা গোলকিপারদের আন্দাজ করা খুবই কঠিন।

ফ্রিকিক নিতে ওস্তাদ খেলোয়াড়রা নানা ভাবে বলকে স্পিন দিতে পারেন, অনেকটা বেসবল বা ক্রিকেটের বোলারদের মতই।

ফ্রান্সের থিয়েরি হেনরি বা ব্রাজিলের রোনাল্দিনিও সাইডস্পিন দিতে দক্ষ ছিলেন। আর ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহ্যামের অস্ত্র ছিল টপস্পিনের মতো একটা কৌশল, যাতে বলটাকে খুব বেশি ঘুরতে দেখা যেতো না, কিন্তু এটা যে কিভাবে কতখানি বাঁক নিতে যাচ্ছে – তা বুঝতে গোলরক্ষকরা হয়রান হয়ে যেতেন।

ফ্রি কিকের ওস্তাদরা এখনো গোলরক্ষকদের নাকাল করে চলেছেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী

» কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে

» সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে

» ফারুকীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়

» পাকিস্তান থেকে সেই আলোচিত জাহাজে যা যা এল

» মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার

» কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

» ক্ষমা না চাইলে নুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়

» বাকু থেকে ফিরলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস

» শুক্রবার আহত ও শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

ফুটবল বাতাসে এমনভাবে বাঁক খায় কি করে?

এবারের বিশ্বকাপে মনে করে দেখুন স্পেনের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোর সেই ফ্রি কিক, অথবা সুইডেনের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে টোনি ক্রুসের ফ্রি কিকটির কথা।

কিভাবে বলটা বাতাসে এতখানি বাঁক খেয়ে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের ‘দেয়াল’কে বোকা বানিয়ে গোলে ঢুকে যেতে পারে?

ফুটবলের পাশাপাশি যারা ক্রিকেট খেলাও দেখেন তারা জানেন, ক্রিকেট বলও বোলারের হাত থেকে বেরিয়ে বাতাসে বাঁক খায় – যাকে বলে সুইং। কিন্তু ক্রিকেট বলের আকৃতি, গড়ন, তার সেলাই – সবকিছুই ফুটবলের চাইতে একেবারেই আলাদা।

ক্রিকেট বলের চেয়ে আকৃতিতে অনেক বড়, বাতাস ভরা, আড়াআড়ি কোন সেলাই নেই – তার ওপর হাতের পরিবর্তে পায়ে খেলা হলেও ফুটবল এমনভাবে বাতাসে বাঁক খায় কিভাবে?

এই ‘সোয়ার্ভিং ফ্রি কিকের’ ব্যাপারটা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ১৯৫০এর দশকের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ডিডি। তিনিই প্রথম ব্যাপারটা খেয়াল করেন যে যদি এমনভাবে শট নেয়া যায় যে বলটা ঘুরতে ঘুরতে যাবে – তাহলে বাতাসে তার গতিপথ অনেকখানি বেঁকে যায়।

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

তখনকার দিনের যে চামড়া দিয়ে ফুটবল বানানো হতো তা খুব পানি শুষে নিতো, ভিজলেই বলটা ভারি হয়ে যেতো। তাই ইউরোপে – যেখানে শীতকালে অনেক বৃষ্টি হয় – সেখানে বল বাতাসে তেমন ঘুরতো না।

কিন্তু ব্রাজিলের মত ল্যাটিন আমেরিকান দেশে গরম এবং শুকনো আবহা্ওয়ায় সে রকম সমস্যা ছিল না। তাই এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে এই টেকনিক দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলেই আবিষ্কৃত হয়েছিল।

১৯৬০এর দশকে এক বিরাট পরিবর্তন আসে ফুটবল বানানোর ক্ষেত্রে। এমন সিনথেটিক সামগ্রী দিয়ে বল তৈরি হতে থাকে যা ভিজলেও পানি শুষবে না। তাই কিছুদিনের মধ্যেই ইউরোপের খেলোয়াড়রাও শিখে গেলেন কিভাবে ডিডির মতো বাঁকানো ফ্রিকিক নিতে হয়।

ব্যাপারটার পেছনে আছে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র। একটা ফুটবল যখন বাতাসে ঘুরতে ঘুরতে যায়, তখন তা পেছনের অংশে বাতাসের আলোড়ন তৈরি হয়, আর সামনে ও দু’পাশে বাতাসের চাপের একটা পার্থক্য তৈরি হয় – যা বলের গতিপথকে বাঁকা করে দেয়।

কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে বিজ্ঞানীদের অনেক বছর লেগেছে।

তা হলো: যে চামড়ার টুকরোগুলো সেলাই করে বলটা তৈরি – সেই সেলাইয়ের খাঁজগুলোরও একটা ভূমিকা আছে বলের বাঁক খাওয়ার ক্ষেত্রে।

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

ফুটবলের সবচেয়ে পরিচিত ডিজাইন হলো ষড়ভূজ আকৃতির ৩২টি বা ২৬টি চামড়ার টুকরো বা ‘প্যানেল’ সেলাই করে তৈরি।

কিন্তু ২০০৬ সালে জার্মানির বিশ্বকাপের সময় এডিডাস কোম্পানি ‘টিমগাইস্ট’ নামে যে বল তৈরি করে – তাতে প্যানেল ছিল মাত্র ১৪টি।

ফুটবলের পেছনের বিজ্ঞান নিয়ে একটি বই লিখেছেন ড. কেন ব্রে।

তিনি বলছেন, বিজ্ঞানীরা দেখলেন ফুটবলের প্যানেল সংখ্যা যত বেশি হবে – বাতাসে বলের গতিপথ ততই স্থিতিশীল হবে অর্থাৎ কম বাঁক খাবে।

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

কিন্তু প্যানেল যদি কম হয়, আর তার সাথে বলটা যদি বাতাসে ঘোরে – তাহলে তা বেশি বাঁক খাবে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কতটা বাঁক খাবে তা আরো অনেকখানি নির্ভর করছে, যে খেলোয়াড়টি ফ্রিকিক নিচ্ছেন তিনি শট নেবার সময় বলটিকে কতখানি ঘোরাতে চাইছেন।

যদি ঘূর্ণন বেশি হয় তাহলে বলটা একটা ‘স্বাভাবিক’ বাঁক নেবে, আর যদি ঘূর্ণন কম হয় – তাহলে বলটা অপ্রত্যাশিত রকমের বাঁক নিতে পারে, যা গোলকিপারদের আন্দাজ করা খুবই কঠিন।

ফ্রিকিক নিতে ওস্তাদ খেলোয়াড়রা নানা ভাবে বলকে স্পিন দিতে পারেন, অনেকটা বেসবল বা ক্রিকেটের বোলারদের মতই।

ফ্রান্সের থিয়েরি হেনরি বা ব্রাজিলের রোনাল্দিনিও সাইডস্পিন দিতে দক্ষ ছিলেন। আর ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহ্যামের অস্ত্র ছিল টপস্পিনের মতো একটা কৌশল, যাতে বলটাকে খুব বেশি ঘুরতে দেখা যেতো না, কিন্তু এটা যে কিভাবে কতখানি বাঁক নিতে যাচ্ছে – তা বুঝতে গোলরক্ষকরা হয়রান হয়ে যেতেন।

ফ্রি কিকের ওস্তাদরা এখনো গোলরক্ষকদের নাকাল করে চলেছেন।

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Thu, 21 Nov.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।