ডেস্ক নিউজ : ‘আমি আসার পর দেখছি মিডিয়ার ভাই-বোন আমাকে অনেক হেল্প করছেন। বন্ধু-বান্ধব, আমার শিক্ষক আমাকে নিয়ে মানববন্ধন করছে। রিয়েলি গুড। (তারপরই গলা জড়িয়ে আসে তার) প্লিজ দোয়া করবেন। আমরা একটা নরমাল ফ্যামিলি, সাইক্লোনের মতো একটা ঝড় গেছে।’
শুক্রবার সকালবেলা সংবাদকর্মীদের সাথে এভাবেই শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দীর্ঘ দেড় মাস পর বাসা ফেরা মুবাশ্বার হাসান সিজার।
শুরুতেই তিনি জানান, জানালা আছে, জানালা বাইরে থেকে সিল করা। আর ওই সাইডে আরেকটা রুম আছে, চার-পাঁচ জন কথা বলতেছে। তো, এখানেই ছিলাম। আমি অনেক দিন পর আজকেই সূর্য্যের আলো দেখতেছি (হেসে দেন)।
তিনি বলছিলেন, আসার সময় তাদের মধ্যে টাকা পয়সা নিয়ে নানা ধরনের ডিসকাশন হইছে। একটা গাড়ির মধ্যে বসাইছে, তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা কিছু একটা হইছে। গাড়ি কতক্ষণ চলছে, এক ঘণ্টাও হইতে পারে, দেড় ঘণ্টাও হইতে পারে।
কোথায় নামিয়েছে সেটিরও ব্যাখ্যা দেন তিনি। তিনি জানান, আমাকে এয়ারপোর্ট রোডের ওইখানে নামাইয়া দিছে। চোখ বন্ধ করে একজনের কোলের মধ্যে শোয়ায়ে রাখছিলো। পরে বলছে, তুই যাগা। পেছনে ফিরা তাকাইলে মাইরা ফালামু। তো আমি এয়ারপোর্ট রোড থেকে পেছন দিকে চলে আসি। পকেটে টাকা পয়সা কিছু ছিলো না।
‘তো সিএনজিরে থামাইছি। সিনজিওয়ালার থেকে ফোন দিছি, আমি আসতেছি তোমরা নিচে থাকো। পরে বাসায় গেট খুলে তাকে পাঁচশো টাকা না কত দেয়া হইছে।
কিছু দাবি করেছিলো কিনা অপহরণকারীরা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিজার বলছিলেন, তারা বোধহয় আমার প্রোফাইল বুঝতে পারে নাই। বলছিলো, ‘তুই তো অনেক জায়গায় কাজ করোস! তুই টাকা দে।’ তো আমার কাছে সাতাশ হাজার টাকা ছিলো। ওইটা ওরা নিয়ে নিছে। ক্রেডিট কার্ড ওইদিন কি কারণে যেন আমি নেই নাই।
অপহরণকারীরা দ্বিধায় ছিলেন জানিয়ে সিজার বলেন, ওদের নিজেদের মাঝে একটা ব্যাপার নিয়ে বাগবিতণ্ডা ছিলো একটি জিনিস নিয়ে- এরে কি ছাড়বো না এরে মারবো। তো তাদের মধ্যে একজন কোনো কারণে মিসিং ছিলো। তাদের মধ্যে এই কারণে ভয় ছিলো। আমার ধারণা।
তিনি বলছিলেন, বেসিকালি কিডন্যাপড না হইলে বোঝা যাবে না যে ব্যাপারটা কতটুকু আন রিয়েল। খাবার যতটুক মনে আছে হেটেল থেকে দিতো।
কথা বলতে গিয়ে বারবার ডুলু ডুলু হয়ে এদিক সেদিক হেলেদুলে পড়ছিলেন সিজার। এক পর্যায়ে তার বাবা এসে তাকে নিয়ে যান।
উল্লেখ্য, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড স্যোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার গত ৭ নভেম্বর বিকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ৭ নভেম্বর সকালে দক্ষিণ বনশ্রীর বাসা থেকে বের হয়ে মুবাশ্বার নিজের কর্মস্থল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে যান। সেখান থেকে বিকালে আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের একটি মিটিংয়ে গিয়েছিলেন। মিটিং থেকে বের হওয়ার পরপরই নিখোঁজ হন তিনি।
তার খোঁজ জানতে ঢাকার খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা বাবা। তবে মুবশ্বার নিখোঁজের পর কোনও মুক্তিপণ বা চাঁদা দাবি করেনি কোনো সংঘবদ্ধ চক্র।