আমাদের শরীরের অপরিহার্য উপাদান রক্ত। আর পানি হলো রক্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পানি প্রতিটি অঙ্গের জন্য ভীষণ জরুরী। আমরা যে খাবার খাই তা হজম হওয়ার জন্য, খাবারের পুষ্টি উপাদানগুলো সঠিকভাবে রক্তে মেশার জন্য পানি যথেষ্ট উপকারি।
পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, কমায় পেটের গ্যাসের পরিমাণ। অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে বুকে জ্বালা পোড়া হয়, দেখা দেয় বদহজম, বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে।
অতিরিক্ত গ্যাস হয়ে ডায়রিয়াও হয় অনেক সময়। তাই এসব সমস্যা থকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত পানি পান করুন।
প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত।
প্রাপ্ত বয়স্কর নীচে বা বৃদ্ধ বয়সের জন্য ২৪ ঘন্টায় এক লিটার পানি যথেষ্ট। তবে যারা কিডনির জটিলতায় ভুগছেন, তারা চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী পানি পান করবেন।
কারণ অনেক সময় এই ধরনের রোগীদের অসুখের মাএার উপর পানি পান করাটা নির্ভর করে।
আমাদের নাক মুখের ছিদ্র দিয়ে আমাদের দেহে অনেক রকম জীবাণু ঢুকে যায়। এই জীবাণুগুলোকে মূত্র ও ঘামের মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয় পানি।
কিডনির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে পানি। কিডনি ছাঁকন যন্ত্রের মতো। প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার মতো পানি পান করা হলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল হবে।
পরিণামে হৃৎপিন্ডের কার্যক্ষমতা বাড়বে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে। আর হৃৎপিন্ড সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য বাড়বে মানুষের কর্মশক্তি।
হঠাৎ করে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু করেছেন তারা প্রচুর পরিমাণে পানি খান।
এতে খাবার নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের ত্বকে বিরূপ প্রভাব পড়বে না। নিয়মিত পানি পান করলে ত্বকও হয় তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ।
পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার সাম্যাবস্থা বজায় রাখে। ফলে হাত পায়ের তলায় জ্বালা পোড়া বা গরম ভাব দূর হয়।
মানুষের মুখে ও মাথাতে স্নায়ু থাকে অনেক বেশি। এই স্নায়ু বা নার্ভকে সতেজ করে পানি।
দেহের প্রতিটি প্রান্তে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচলের জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে পানি পান। আর সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচলে নার্ভগুলোও পুষ্টি পায়। তাই নিয়মিত পানি পান করাটা ভীষণ জরুরি।
যেকোনো বড় বা ছোট অপারেশনের পরে দেহে সেলাই থাকলে প্রচুর পানি পান করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না। ফলে সেলাই এর উপরও চাপ পড়বে না।
খাবার নিয়ন্ত্রণ ও প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে শরীরে ফ্যাট সেলের পরিমাণ কমে যায়। রক্তে ফ্যাট এর পরিমাণ কমলে উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
আর যারা উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তারা প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। এতে হৃদপিন্ড থেকে সঠিকভাবে রক্ত সারা দেহে প্রবাহিত হবে।
দীর্ঘ বছর ডায়াবেটিস থাকলে মানুষের অঙ্গগুলো দুর্বল হয়ে যায়। নিয়মিত সঠিক খাদ্যাভাস ও পানি পান করলে প্রতিটি অঙ্গে পানি পৌঁছাবে।
ফলে অঙ্গগুলো দুর্বলতার হাত থেকে রক্ষা পাবে। সন্তান জন্ম নেওয়ার পরে মায়েরা পানি নিয়মিত খাবেন।
যারা দৈহিক পরিশ্রম করেন খুব বেশী, তারা পানি পান করবেন নিয়মিত। তবে সবাই কে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
কারণ বিশুদ্ধ পানির অভাবে নানা ধরনের পানিবাহিত অসুখ হয়।
ডাঃ ফারহানা মোবিন,
লেখক, চিকিৎসক ও উপস্থাপিকা
বারডেম হসপিটাল, ঢাকা- বাংলাদেশ।