অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক: বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এর উপর নিউইয়র্কে ‘ছোট্ট সন্ত্রাসের খবর’ দেখে সাংবাদিক-কলামিষ্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ব্যাথিত হয়েছেন।
২২ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে ‘ড. ফখরুদ্দীনের উপর হামলার চেষ্টার খবরে আমি ব্যথিত’ শিরোনামে এক নিবন্ধে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সাথে তার সম্পর্কের বর্ণনায় জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকলে ফখরুদ্দীন বয়সে ছোট হলেও অনুজ প্রতিম বন্ধু ছিলেন। নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সহকর্মী ছিলেন। পরে সহপাঠী বন্ধু সাবেক কূটনীতিক ফারুক আহমদ চৌধুরী ও ইনাম আহমদ চৌধুরীর বোনকে বিয়ে করায় এই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়।
ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এর উপর নিউইয়র্কে সন্ত্রাসের বিস্তারিত বর্ননাও তিনি করেছেন।
দেশে একটি অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত হাসিনা সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরই ২০০৯ সালে ড. ফখরুদ্দীন আহমদ আমেরিকায় ফিরে যান এবং সেখানেই গত কয়েক বছর যাবত্ নিভৃত নীরব জীবন যাপন করছেন। দেশের কোনো ব্যাপারেই আর নাক গলাচ্ছেন না। এই মানুষটি কিছুদিন আগে নিউইয়র্কের জ্যামেইকা মুসলিম সেন্টারে শুক্রবারের জুমার নামাজ আদায় এবং তার এক বন্ধুর জানাজার নামাজে যোগ দিতে যান।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, “ড. ফখরুদ্দীন আহমদ তার বন্ধু আবদুল মুনিম চৌধুরীর জানাজায় যোগ দিতে একাই মসজিদে আসেন। মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ঘোষণা দেন এখন আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা এবং আবদুল মুনিম খানের বন্ধু ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। তার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মসজিদে উত্তেজনা দেখা দেয়। তিনি তড়িঘড়ি বক্তব্য শেষ করেন। মসজিদ কমিটির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। জানাজার নামাজ শেষে তিনি মসজিদ থেকে বের হতেই তাকে গালাগালি দিয়ে তেড়ে আসেন কয়েকজন বাংলাদেশি মুসল্লি। এই মুসল্লিরা বলতে থাকেন বাংলাদেশকে ৫০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছেন এই ফখরুদ্দীন আহমদ। তার এই মসজিদে এসে দোয়ায় যোগ দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। মসজিদ কমিটি আবারো মারমুখো মুসল্লিদের ঠেকান। মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাসা করেন। স্যার, দেশ কেমন চলছে? তিনি কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত মসজিদ এলাকা ত্যাগ করেন। ২০০৯ সালে দেশ ছেড়ে আসার পর থেকে ড. ফখরুদ্দীন আহমদ আমেরিকার মেরিল্যান্ডে বসবাস করছেন। কখনো জনসম্মুখে আসেননি। এই প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কে তাকে জনসম্মুখে দেখা গিয়েছিল। তিনি জনতার আক্রোশের মুখে পড়েছিলেন।”
সংবাদপত্রে এই খবরটি পাঠ করে আমি ব্যথিত হয়েছি। তার কারণ এই নয় যে, মঈন-ফখরুদ্দীন সরকার নামে পরিচিত একটি সেনা পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি আমার কোনো সমর্থন ছিল; কিংবা কোনো পতিত স্বৈরাচারী জনরোষের সম্মুখীন হলে আমার মনে ব্যথা লাগে। কিন্তু ড. ফখরুদ্দীন আহমদ নিউইয়র্কে কিছুসংখ্যক বাংলাদেশির রোষের সম্মুখীন হওয়ার খবরে ব্যথিত হয়েছি এজন্যে যে, ফখরুদ্দীন কোনো স্বৈরাচারী ছিলেন না। স্বৈরাচারী হওয়ার মতো কোনো মানসিক ধাতও তার ছিল না। তিনি একজন নিরীহ নির্বিরোধ শান্ত প্রকৃতির মানুষ। তাকে ধরে বেঁধে এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বসানো হয়েছিল।
গাফ্ফার চৌধুরীর দাবি:
আমি যতোদূর জানি, মাইনাস টু থিয়োরি বাস্তবায়নের ব্যাপারে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের কোনো আগ্রহ ছিল না। ছিল তার সরকারের কয়েকজন অসামরিক উপদেষ্টার। তাদের নিপীড়ন থেকে শেখ হাসিনাকে কিছুটা হলেও মুক্ত রাখার জন্য তিনি একাধিকবার নিজের প্রভাব খাটিয়েছেন। তার প্রতি দেশের মানুষের একটি ক্ষুদ্র অংশের হলেও এই রোষ দেখে আমি তাই ব্যথিত। এই রোষ যাদের উপর জাগ্রত হওয়া উচিত ছিল, যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে সত্যই বিপর্যস্ত করেছেন, তাদের প্রতি জনরোষ জাগ্রত হতে না দেখে আমি বিস্মিত হই।
গাফফার চৌধুরী বরাবরের মত আলোচ্য নিবন্ধেও ড. ফখরুদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য ড. ইউনূসের কূটকৌশলকে দায়ি করেছেন।
গাফফার চৌধুরীর বর্ননায়:
তাকে (ড. ফখরুদ্দীন) এই পদ গ্রহণে রাজি করানোর ব্যাপারে নেপথ্য নায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তার সহপাঠী ও বন্ধু ড. ইউনূস। দেশের সেনাবাহিনী গোড়ায় আন্তরিক ভাবেই চেয়েছিলো দেশে ইয়াজউদ্দীনকে সামনে খাড়া করে বিএনপি-চালিত যে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কারসাজির নির্বাচন দ্বারা যে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের সূচনা করতে চলেছে, তা প্রতিহত করা এবং সেনা সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। এই উদ্দেশ্যে তারা নোবেল জয়ী ড. ইউনূসকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিল।
ড. ইউনূস একজন চতুর ব্যবসায়ী। তিনি সম্ভবত এই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি। অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াতের প্রতি তার প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকায় তার দ্বারা পরিচালিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাক তাও তিনি চাননি। তিনি হয়তো ভেবেছেন, আগে এই প্রস্তাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সফল হোক, দেশের রাজনীতি ক্লিন করার নামে হাসিনা ও খালেদা দুই নেত্রীকেই রাজনীতি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করুক, তখন তিনি হিরো সেজে কোনো তত্ত্বাবধায়ক অস্থায়ী সরকারের নয়, একেবারে পছন্দের স্থায়ী সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির পদে বসবেন। তার পেছনে আমেরিকা, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা জোটের সমর্থনতো আছেই এবং থাকবেও।
আমার ধারণা, এই পরিকল্পনা অনুসারেই (ড. ইউনুস) জেনারেল মঈনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরীক্ষামূলক ব্যবস্থায় তিনি জড়াতে চাননি, বরং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অর্থনীতি বিভাগে তার চাইতে ভালো ছাত্র, সহপাঠী এবং বন্ধু ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে স্কেপগোট করতে চেয়েছেন। ড. ফখরুদ্দীন ইউনূস-শিবির, একটি সুশীল সমাজ ও একটি তথাকথিত নিরপেক্ষ মিডিয়া গোষ্ঠীর গোপন পরিকল্পনাটি জানতে পারেননি, বা তাকে জানানো হয়নি। এই গোপন পরিকল্পনা থেকেই মাইনাস টু থিয়োরির জন্ম, যাতে পরে উচ্চাভিলাষী সামরিক নেতাদের জড়ানো হয়। ফখরুদ্দীন এই বিশ্বাসেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করেছিলেন যে, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্ধারিত মেয়াদের জন্য প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন। মেয়াদ শেষে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তিনি চলে যাবেন।
পরে বুঝতে পারেন, তিনি ফাঁদে পড়েছেন। এখন তার কিছু করার নেই। পদত্যাগ করতে চাইলে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে তাতে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে। তিনি রাজনীতিক ছিলেন না। তাই রাজনৈতিক সাহস দেখাতে পারেননি। কর্মজীবনে চাকরিজীবীর নির্দেশ মানার মানসিকতা দ্বারা চালিত হয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত নির্দেশ মেনেই চলেছেন।
মানুষ ড. ফখরুদ্দীন আহমদ সম্পর্কে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন:
ছাত্রজীবনে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র রাজনীতিতে ফখরুদ্দীন জড়িত ছিলেন বলে আমার জানা নেই। বড় বড় উচ্চপদে চাকরি করেছেন। কখনো রাজনীতিতে জড়িত হননি। বাংলাদেশে বিএনপি’র শাসনামলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়েছিলেন। কোনো খারাপ রেকর্ড রেখে যাননি। তিনি যখন বিশ্বব্যাংকে চাকরি করেন এবং ওয়াশিংটনে বসবাস করেন, তখন একবার ওয়াশিংটনে গিয়েছিলাম। এক কমন ফ্রেন্ডের বাসায় আমার দাওয়াত ছিল। আমার অন্যান্য বন্ধুর সঙ্গে ফখরুদ্দীনও এসেছিলেন সেই বাসায়। সারা রাত ধরে আড্ডা হয়েছে। ফখরুদ্দীন এমনিতেই একটু লাজুক প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু সারা রাত আড্ডায় ছিলেন।
তিনি যখন বাংলাদেশের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, তখন একবার দেশে গিয়েছিলাম। নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে নিজের গ্রাম পর্যন্ত ঘুরে এসেছি। (তখন জঙ্গি অথবা জামায়াতি সন্ত্রাস ছিলো না এবং বিএনপি’র সমর্থকদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার ভয়ও ছিলো না)। ফখরুদ্দীনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, আমার জন্য দোয়া করুন। যথাসময়ে নির্বাচন দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি যেন দায়িত্ব শেষ করতে পারি।
প্রয়োজনের বেশি একদিনও যে পদ আঁকড়ে থাকার ইচ্ছা তার ছিলো না, এই সত্যটি আমি জানি। কেন তিনি তা পারলেন না, সে আরেক ইতিহাস; সে কথায় পরে আসছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে বসার ইচ্ছাও তার ছিলো না। কেন যে বসতে বাধ্য হয়েছিলেন, সে ইতিহাসও পরে জানতে পেরেছি। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের রাজনীতি করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না। ফলে দেশের এক সংকট সন্ধিকালে অস্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী প্রধান হওয়ার ব্যবস্থাটি যে তার জন্য ছিল একটি ফাঁদ, এটা পরে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তখন তার কিছু করার ছিল না। এই স্ট্রেইন তিনি সহ্য করতে পারেননি। তাই এক জনসভায় তিনি আকস্মিকভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। তাকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার হাসপাতালে আনতে হয়েছিল।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থণ করে গাফফার চৌধুরী লিখেছেন:
আমি এখনো বিশ্বাস করি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন ক্ষমতায় না এলে দেশ একটি ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হতো। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা চালিত ইয়াজউদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি ছিল অবৈধ ও স্বৈরাচারী। তাকে সরিয়ে সেনাসমর্থিত নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিতে বাধ্য হওয়ায় এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়নি বরং দেশ একটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা থেকে বেঁচে গেছে।
এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে এবং দেশবাসীর অকুণ্ঠ ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে পারতেন যদি তারা তাদের অরিজিনাল প্লানে নিষ্ঠ থাকতেন। অর্থাৎ নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতেন। কিন্তু তা তারা করেননি। ইত্যবসরে কোনো কোনো সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষমতায় স্থায়ীভাবে থাকার আগ্রহ দেখা দেয় এবং সেনা সমর্থিত অথবা সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ বাড়তে থাকে।
কিছু সেনা কর্মকর্তার ক্ষমতা লিপ্সারই সুযোগ গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন দেশের ইউনূস-শিবির, একটি সুশীল সমাজ এবং তাদের সমর্থক একটি তথাকথিত মিডিয়া গোষ্ঠী। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল একটি বিদেশি সাহায্যপুষ্ট শক্তিশালী এনজিও গোষ্ঠী। তাদের ইচ্ছা, দেশে গুড গভরনেন্সের নামে এনজিও প্যাটার্নের একটি অনির্বাচিত, অরাজনৈতিক সরকারকে ক্ষমতায় বসানো। কিন্তু তাদের এই ইচ্ছাপূরনের সবচাইতে বড় বাধা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মতো একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দলের ক্ষমতায় থাকা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন নিয়ে তারা কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবেন না এটা তারা জানেন। সেই চেষ্টা কয়েক দফা করে সুশীল সমাজের ড. কামাল হোসেন, তার গণফোরাম এবং তার সমমনা দল ও নেতারা নির্বাচনে গো-হারা হেরেছেন। সুতরাং নির্বাচন এড়িয়ে সেনাবাহিনীর সাহায্যে হাসিনাকে রাজনীতি ত্যাগে কিভাবে বাধ্য করা যায় সে লক্ষ্যেই মাইনাস টু থিয়োরি তৈরি করা হয়েছিল এবং সেনা পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দ্বারা সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল।
আমি যতোদূর জানি, মাইনাস টু থিয়োরি বাস্তবায়নের ব্যাপারে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের কোনো আগ্রহ ছিল না। ছিল তার সরকারের কয়েকজন অসামরিক উপদেষ্টার। তাদের নিপীড়ন থেকে শেখ হাসিনাকে কিছুটা হলেও মুক্ত রাখার জন্য তিনি একাধিকবার নিজের প্রভাব খাটিয়েছেন। তার প্রতি দেশের মানুষের একটি ক্ষুদ্র অংশের হলেও এই রোষ দেখে আমি তাই ব্যথিত। এই রোষ যাদের উপর জাগ্রত হওয়া উচিত ছিল, যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে সত্যই বিপর্যস্ত করেছেন, তাদের প্রতি জনরোষ জাগ্রত হতে না দেখে আমি বিস্মিত হই।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সাহস এবং কঠিন মনোবলের জন্য সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যায়। হাসিনা-নেতৃত্ব ধ্বংস করাই ছিল মাইনাস টু থিয়োরির আসল লক্ষ্য। বেগম জিয়াকে তাতে যোগ করা হয়েছিল লোক দেখানোর জন্য। বেগম জিয়াকে রাজনীতি ছাড়তে ও দেশত্যাগে বাধ্য করতে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো অসুবিধাই ছিলো না। সেনাবাহিনীর নির্দেশের কাছে মাথা নিচু করে তিনি তার দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে দেরি করেননি। নিজেও সউদি আরবে চলে যেতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু সকল ভীতি ও নির্যাতনের মুখেও শেখ হাসিনা দেশ ও রাজনীতি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় শুধু দেশ বাঁচেনি; বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনও বেঁচেছে। নইলে এতোদিনে তিনি সউদি আরবের রিয়াদে উগান্ডার ইদি আমিনের পরিত্যক্ত বাড়িতে বাস করতেন।