গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাংশের ১১ লাখ বাসিন্দাকে সরে যেতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়ার পর ইসরায়েলের স্থল আক্রমণ শুরু হল।
ইসরায়েলের পদাতিক বাহিনী ট্যাংকের ছত্রছায়ায় গাজা ভূখণ্ডের ভেতরে অভিযান শুরু করেছে, যার লক্ষ্য হল অধিকৃত ওই ভূখণ্ড থেকে হামাস যোদ্ধাদের ‘নির্মূল’ করা।
হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাংশে নজিরবিহীন হামলা চালানোর এক সপ্তাহের মাথায় এই স্থল অভিযান শুরু হল।
রয়টার্স লিখেছে, গত শনিবারের ওই হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনী কেবল আকাশপথেই গাজায় আক্রমণ চালিয়ে আসছিল। এবার তা স্থল যুদ্ধের রূপ নিল।
গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাংশের ১১ লাখ বাসিন্দাকে সরে যেতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল ইসরায়েল। সেই সঙ্গে সীমান্তে ট্যাংকের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সৈন্য সমাবেশ করা হচ্ছিল। ইসরায়েল যে স্থল আক্রমণ শুরু করতে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখনই।
শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল হামলা শুরুর আগেই গাজার উত্তরাংশের বহু মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ অংশে চলে যেতে দেখা যায়। তবে ঠিক কত সংখ্যক বাসিন্দা সরে যেতে পেরেছেন, সেই সংখ্যা জানা প্রায় অসম্ভব।
গাড়ির সঙ্গে ঘরের জিনিসপত্র বেঁধে কিংবা ট্রাকে চেপে যে যেভাবে পারেন পালানোর চেষ্টা করছিলেন তারা। অনেকে আবার থেকে যাওয়ার কথাও বলছিলেন।
ইসরায়েলের বোমায় গুঁড়িয়ে যাওয়া একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ নামের ২০ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি তরুণ রয়টার্সকে বলেন, “চলে যাওয়ার চেয়ে এখানে থেকে মরা ভালো। আমি এখানে জন্মেছি, এখানেই মরতে চাই।”
ইসরায়েল ওই হুমকি দেওয়ার পর হামাস গাজার বাসিন্দাদের যার যার বাড়িতে থাকার আহ্বান জানায়। ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথাও তারা বলে। মসজিদের মাইক থেকেও স্থানীয়দের যার যার বাড়িতে অবস্থান করার আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের ওই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। না হলে ভয়ঙ্কর মানবিক সঙ্কট তৈরি হবে বলেও সতর্ক করা হয়।
কিন্তু ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়াল অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি পরে বলেন, তাদের পদাতিক বাহিনী ট্যাংকের সহায়তা নিয়ে গাজার ভেতরে অভিযান চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি রকেট হামলাকারীদের ‘নির্মূল’ করার পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে তারা।
হামাস যোদ্ধারা গত শনিবার সীমান্ত পেরিয়ে তিন দিক থেকে ইসরায়েলের দক্ষিণ অংশে ঢুকে পড়ে। তাদের হামলায় অন্তত ১৩০০ ইসরায়েলি নিহত হয়, হামাস যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করেছে আরও দেড়শ জনকে।
পাল্টা জবাবে ইসরায়েল গাজায় হামাসের সামরিক শাখা এবং অবকাঠামোতে জোর বিমান হামলা শুরু করে। গত ছয়দিনে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী গাজায় ৬ হাজারের বেশি বোমা ফেলে, তাতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এর সাবেক কমান্ডার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াকভ আমিড্রোর স্বীকার করেছেন যে, হামাসের সঙ্গে লড়াই করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, হামাস যোদ্ধারা প্রবেশপথগুলোতে এবং রাস্তার অলি-গলিতে ফাঁদ কিংবা বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখবে।
ইসরায়েলের ধারণা, হামাসের প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা আছে। তাদের অস্ত্রের মধ্যে আছে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, রকেট চালিত গ্রেনেড, ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।
হামাসের আরও আছে রকেটের এক বিশাল ভান্ডার। যেগুলো তারা ইসরায়েলে নিক্ষেপ করে আসছে। লেখক ইয়াকভ কাটজ বলেন, হামাস নিজস্বভাবে আত্মঘাতী ড্রোনসহ ছোট ছোট ড্রোনও তৈরি করছে।
তাছাড়া হামাস গাজার বিভিন্ন অংশে হাজারো সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক তৈরি করে রেখেছে ইসরায়েলের সঙ্গে লড়ার জন্য, সেজন্যও ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
হামাসের যা নেই তা হচ্ছে, সাঁজোয়া যান, ট্যাংক এবং গোলাবারুদ- যেগুলো ইসরায়েলের আছে। কিন্তু স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বড় চ্যালেঞ্জ হল ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে লড়াই করা।
কাটজ বলেন, ইসরায়েলি সেনারা দরকার না পড়লে সুড়ঙ্গে ঢুকে লড়াই করতে যাবে না। কারণ, সুড়ঙ্গের আদ্যপান্ত হামাসেরই ভাল জানা থাকবে। তাই ইসরায়েলি সেনারা সুড়ঙ্গে না ঢুকে বরং বিস্ফোরক দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করবে।
হামাস যে ইসরায়েলিদের ধরে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করেছে, তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই জিম্মিদের কারণে গাজায় স্থল আক্রমণ শানাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ইসরায়েলকে।
মেজর জেনারেল আমিড্রোর অবশ্য বলেছেন, জিম্মিরা কোনো কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
“আমরা শেষ পর্যন্ত হামাসের সঙ্গে লড়ে যাব এবং অভিযান চলাকালেই আমাদেরকে ওইসব জিম্মিকে খুঁজে বের করতে হবে।”
সূত্র, বিডিনিউজ২৪ ডটকম