মার্কিন পণ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাল্টা শুল্ক কার্যকরে খাপ্পা ট্রাম্প এবার ইউরোপ থেকে আমদানি করা গাড়িতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ১০ ও ২৫ শতাংশ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় হুইস্কি, মোটরসাইকেল, জুতা, কয়েক ধরনের কাপড়, ওয়াশিং মেশিন ও কমলার রসসহ বেশকিছু পণ্যে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে ইইউ। শুক্রবার থেকে তা কার্যকরও হচ্ছে।
জোটের ২৮টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি করা প্রায় ৩২০ কোটি মূল্যের পণ্য থেকে এই শুল্ক নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ইউরোপ।
মার্কিন পণ্যে ইইউ-র শুল্ক কার্যকরের ঘটনাই তাঁতিয়ে তুলেছে দেশটির প্রেসিডেন্টকে।
“যদি এই শুল্ক ও বাধা সরিয়ে নেওয়া না হয়, তুলে নেওয়া না হয়, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আসা তাদের সব ধরনের গাড়িতে ২০ শতাংশ শুল্ক বসাবো। সেগুলোকে (গাড়ি) এখানেই বানাও,” শুক্রবারে টুইটারে দেওয়া হুমকিতে ট্রাম্প এমনটাই বলেন।
আমদানি করা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে কিনা, মাসখানেক আগে থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। অগাস্টের আগেই এ কাজ শেষ হবে বলে আশা মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের।
ইইউ থেকে আমদানি করা ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে এখনই আড়াই শতাংশ শুল্ক দিতে হয়; পিকআপ ট্রাকের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ আরও বেশি, ২৫ শতাংশ।
বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপ করা শুল্কের পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ।
ইউরোপের শীর্ষ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফোকসভাগেন, দেইমলার ও বিএমডব্লিউর মতো অনেকেরই যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা আছে।
জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেই যত গাড়ি সংযুক্ত করে, সে পরিমাণ গাড়ি তারা জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে না বলে খাত সংশ্লিষ্ট তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
শুক্রবার টুইটারে দেওয়া ট্রাম্পের হুমকির পরপরই ইউরোপের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম পড়তে থাকে। ফোর্ড ও জেনারেল মটরসের মতো মার্কিন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর দরও খানিকটা কমে যায়; সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এ চিত্র পাল্টাতে থাকে, শেষ পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানিগুলোর শেয়ার মূল্য দিন শুরুর অবস্থানের ওপরেই থাকে।
আমদানি করা গাড়িতে শুল্ক বসানো নিয়ে বেশ কয়েকমাস ধরেই কাজ করছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের হুমকির পর কয়েক মাসের মধ্যে চীন ও ইউরোপের গাড়িতে মোটা অংকের শুল্ক বসতে যাচ্ছে বলেই ধারণা। তবে এ পদক্ষেপ ইউরোপ ও চীন থেকে আমদানি করা মার্কিন গাড়ির খাতকে ‘একেবারেই ধ্বসিয়ে দিতে পারে’ বলেও শঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।
অভ্যন্তরীণ শিল্পের সুরক্ষা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য দেশের ভেতরেই আরও চাকরির সুযোগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা বাৎসরিক সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে বসেছে নতুন শুল্ক। পাল্টা পদক্ষেপে হাজারের ওপর মার্কিন পণ্যে শুল্ক দিয়েছে বেইজিংও।
উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনার কথা বলে মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে নতুন মার্কিন প্রশাসনের।
চীন ও ইউরোপের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ পাল্টাপাল্টি শুল্কের লড়াই বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে বলেই শঙ্কা বিশ্লেষকদের।