অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক: জিহাদি সংগঠন ইসলামিক ষ্টেটস’র (আইএস) উত্থান নিয়ে নানামূখী বক্তব্য রয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়। অভিযোগে প্রকাশ, ইহুদি রাষ্ট্রটিকে টিকিয়ে রাখার জন্যই বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-১৬, ইসরাইলি সিক্রেট সার্ভিস ‘মোসাদ’ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সীই (সিআইএ) সম্মিলিতভাবে সৃষ্টি করেছে আইএস।
সাবেক মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) সাবেক ঠিকাদার এডওয়ার্ড স্নোডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে গোপন নথি প্রকাশ করেছিলেন তাতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইসলাইলের গোয়েন্দা সংস্থা সিরিয়া ও ইরাকে আইএস’র উত্থানে সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। নথিতে বলা হয়, ইহুদি রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখতে হলে রাষ্ট্রটির সীমান্তে একটি শত্রু তৈরী করতে হবে।
আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদীর আসল নাম সিমন এলিয়ট হচ্ছেন একজন ইহুদি পিতামাতার সন্তান। ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বাগদাদির আরেক নাম ইমির দাশ যে কিনা আবু বকর আল বাগদাদী নামে পরিচিত।সাবেক আল কায়েদা কমান্ডার ও ইসলামিক ডেমোক্রাটিক জিহাদ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নাবিল নাঈম বৈরুত ভিত্তিক প্যান আরব টিভি ষ্টেশন আর-মেদিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আইএসসহ আল কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত জেহাদি দলগুলো মার্কিন সিআইএ’র জন্য কাজ করছে। তিনি ভবিষ্যতবানী করেন, চলমান সংঘর্ষ ২০১৬ সালের মধ্যে সৌদি আরব গালফ এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।
আবু বকর আল-বাগদাদী সম্পর্কে বলা হয় তিনি মোসাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বক্তৃতা কিভাবে করতে হয় সে ব্যাপারে মোসাদের তত্ববধানে প্রশিক্ষণ পান তিনি।
২০১৪ সালের ১৬ জুলাই বাইরাইনের গালফ ডেইলি নিউজ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, মার্কিন বৃটিশ ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস’কে দিয়ে যে অভিযান পরিচালনা করে তার সাংকেতিক নাম দেয়া হয়েছিলো ’অর্নেটস নেষ্ট’।
ইরানের সাবেক গোয়েন্দা বিভাগের মন্ত্রী হায়দার মোসলেহি ইরানের বিপ্লবী গার্ডের পত্রিকা ফার নিউকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরাইলের মোসাদ, মার্কিন সিআইএ ও বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই১৬ আইএস সৃষ্টি করেছে। মোসলেহি আরও বলেন, সৌদি আরক ও গালফভূক্ত বেশ কয়েকটি দেশ ডলার আইএস ও বোকো হারাম সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ওই তিনটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। কিউবা’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিডেল ক্যাস্ট্রো ও সিরিয়ার সাবেক জাতীয় সরকারের প্রেসি দিয়ে আইএস’কে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরও ইরানের মন্ত্রীর
বক্তব্যের সঙ্গে সূর মিলিয়ে ইউরো নিউজকে বলেছেন, সিরিয়ার জাতীয় কোয়ালিশন সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ জারবা’রও একই অভিযোগ।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক অধ্যাপক ডেভিড ফিলিপস বলেছেন, ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আইএস’র উত্থানের পেছনে তিন গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকলেও পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই), জর্দান, তুরস্ক, সৌদি আরবকেও এই ষড়যন্ত্র থিওরীর অংশ হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, তিনটি বিদেশী সংস্থার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে দেশগুলো। আইএস’র জিহাদি কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য সৌদি আরব দলটিকে অর্থ সহায়তা, তুরস্ক অস্ত্র পাচার, মেডিকেল সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর কেমব্রিজের হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বক্তৃতায় প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন, ‘ওবামা প্রশাসন ও মধ্যপ্রাচ্যে তার সহযোগীদের সবচেয়ে বড় ভূল হচ্ছে আইএসকে গতিশীল করে তোলা। ওবামা প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির আওতায় আইএসকে অস্ত্র জোগান দেয়া হচ্ছে।’ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, সামরিক কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে স্বীকারও করেছেন, ইসরাইল, ন্যাটো, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের মাধ্য আমেরিকা আইএসকে অর্থ, সামরিক সহায়তা দিচ্ছে গোপনে।
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিভাগের চেয়ারম্যান স্যার ম্যালকম রিফকাইন্ড বলেছেন, আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি হচ্ছেন সিআইএ ও মোসাদের একজন এজেন্ট। স্নোডেনের প্রকাশিত নথিতে দেখা যায়, ‘অর্নেট নেষ্ট’ এর নেপথ্য রহস্য হচ্ছে ইসরাইলকে রক্ষা করা। ইসরাইলের মানচিত্রের পরিধি বিস্তৃত করা।