লন্ডনে মুস্তাফিজকে আতিথ্য দেওয়া এজিএম সব্বির বিকেলে মুস্তাফিজকে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার আগেই ক্রিকেটাররা সমবেত হয়েছিলেন। প্রিয় তারকাকে কাছে পেয়ে তারা ছবি তোলেন ও অটোগ্রাফ নেন। উৎসাহ পেয়ে এরা সবাই এখন বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।
এক ঝাঁক খুদে ক্রিকেটারের মাঝে এসে মুস্তাফিজ তার চোট এবং চোট সারাতে অস্ত্রোপচার করালে আগামী ছয় মাস খেলতে না পারার আশংকা -সবই যেন ভুলে গিয়েছিলেন। সারাক্ষণই ছিলেন বেশ সতেজ ও উৎফুল্ল। তাই খুদে ক্রিকেটারদের ক্রিকেট খেলার অনুরোধে ভবনের পেছনের খানিকটা ফাঁকা স্থানে চলে যান।কাঁধে চোট থাকায় মুস্তাফিজ বোলিং করেননি; হাতে তুলে নেন ব্যাট। উৎসাহী বোলারদের প্রায় এক ডজনেরও বেশি বলে ব্যাট চালালেন। একজন তো বলেই বসলেন, ব্যাটিং এর নমুনা দেখে তো মনেই হয় না ‘ব্যাটিং প্রবলেম’!
ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের উৎসাহ যোগান মুস্তাফিজ। ভালো ক্রিকেটার হতে কঠোর অনুশীলনের উপর জোর দেন।
“শেখার শেষ নাই। আমি ভোরে বাড়ি থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে অনুশীলনের জন্য যেতাম। তারপরও অন্য খেলোয়াড়দের আগে পৌঁছতাম।”
ইংল্যান্ডে এসে বাবা-মার অভাব মু্স্তাফিজ যে বোধ করছেন তা বোঝা গেল। জীবনে সাফল্য পেতে হলে সবসময় বাবা-মার দোয়া চাইতে খুদে ক্রিকেটারদের উপদেশ দেন তিনি।
ইংল্যান্ডে চোটের কারণে দুটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারেনি বলে কিছুটা হতাশ তার কণ্ঠ, “আমার ভাগ্য খারাপ, আপনাদেরও ভাগ্য খারাপ।”টাওয়ার হ্যামলেটস টাইগার্স, অর্থ্যাৎ লন্ডন টাইগার্সের টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার আট বছরের জর্জ মুনস এসেছিল তার মা ভিক্টোরিয়া অ্যালেনের সঙ্গে। ভিক্টোরিয়ার তৎপরতা দেখে মনে হয়েছিল, তিনি বোধহয় দলের ফিজিও। জিজ্ঞেস করলে বললেন, “আমি জর্জের মা। তবে জর্জসহ দলের সব বাচ্চাদেরই দেখাশুনা করে থাকি।”
জর্জের মতো আরো কয়েকজন ইংলিশ শিশু-কিশোর এসেছিল বিশ্ব ক্রিকেটে সাড়া জাগানো মুস্তাফিজকে দেখতে।
অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ক্যাপিট্যাল কিডস এর ডিরেক্টর অব ক্রিকেট শহীদুল আলম রতন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টাওয়ার হ্যামলেটস ক্রিকেট ক্লাবের ক্রিকেটারদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার জন্যই আমরা তাদের সামনে তাদের রোল মডেল ও আইকনিক ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমানকে এনেছি।”
রতন জানান, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত টাওয়ার হ্যামলেটস ক্রিকেট ক্লাবে প্রায় ১০০ জন ক্রিকেটার রয়েছে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এদের অধিকাংশই লন্ডনে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে উঠা বাঙালি।
ইসিবির লেবেল থ্রি কোচ এবং কোচ এডুকেটর হিসেবে দায়িত্ব পালনরত রতন অদূর ভবিষ্যতে কাউন্টি এবং ইংল্যান্ড জাতীয় দলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারদের দেখা যাবে বলে আশা করেন।রতন জানান, ২০০৮ সালে জুনিয়র টিম হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটস ক্রিকেট ক্লাবের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন এই ক্লাবের সিনিয়র দলও রয়েছে এবং এরা মিডলসেক্স চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ টুর্নামেন্টের ডিভিশন টুতে খেলছে।
বাংলাদেশে থাকাকালে ক্রিকেট বোর্ড এর ন্যাশনাল কোচ ও মালয়েশিয়ার অনুর্ধ ১৯ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করা রতন ২০০৮ সালে ক্যাপিট্যাল কিডস ক্রিকেটের ডেভেলপমেন্ট হেড কোচ হিসেবে যোগদান করেন।
অনুষ্ঠানের সহ-উদ্যোক্তা লন্ডন টাইগার্সরের অপারেশন ডিরেক্টর জাওয়ার আলী জানান, লন্ডনের প্যাডিংটন, সাউথ হল, টাওয়ার হ্যামল্যাটস এবং রেড ব্রিজে তাদের অফিস রয়েছে। সাউথ হলে তাদের দু’টি নিজস্ব ক্রিকেট মাঠ এবং একটি ফুটবল মাঠ রয়েছে। সরকার থেকে বিনামূল্যে ২৫ বছরের জন্য এগুলো তাদেরকে ইজারা দেয়া হয়েছে।জাওয়ার আলী জানান, পূর্ব লন্ডনে তাদের দেড়শ’ ক্রিকেটারের মধ্যে সবাই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তবে পশ্চিম লন্ডনের দেড়শ’ ক্রিকটোরের মধ্যে বেশ কিছু ভারতীয় ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় আছে।