লন্ডনে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে হামলায় এ পর্যন্ত চার জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছে। এটি ছিল ২০০৫ সালের পর এ লন্ডনে এপর্যন্ত সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা। কিভাবে এই হামলা চালানো হয়? এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে:
কী ঘটেছে:
বুধবার বিকেল পৌনে তিনটার সামান্য আগে একজন হামলকারী একটি গাড়ি ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় তার গাড়ি তুলে দেয় পথচারীদের ওপর। দুজন নিহত হয়, আহত হয় আরও বহু মানুষ। এরপর গাড়িটি এসে ধাক্কা দেয় পার্লামেন্ট ভবনের রেলিং এ। ছুরি হাতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এরপর হামলাকারী পার্লামেন্ট ভবনের দিকে দৌড়ে যায়। সেখানে পুলিশ তাকে বাধা দেয়। তখন একজন নিরস্ত্র পুলিশ অফিসার কীথ পামারকে ছুরিকাঘাত করে হামলকারী। কীথ পামার নিহত হন।
হামলাকারীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় পুলিশ। নিহত হয় হামলাকারীও।হামলার সময় ঘটনাস্থলের দৃশ্য কেমন ছিল?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেখানে ছিল খুবই আতংকজনক এবং বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতি।
রিচার্ড টাইস নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তিনি ওয়েস্টমিনস্টার টিউব স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসছিলেন পৌনে তিনটার দিকে। তখন পুলিশ তাকে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখেন ব্রিজের ওপর অনেক লোক আহত হয়ে পড়ে আছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। রিচার্ড টাইস জানতে পারেন, ফুটপাথে লোকজনের ওপর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয়া হয়েছিল। ব্রিজের দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত এভাবে লোকজনকে চাপা দিতে দিতে গাড়িটি এগিয়েছে।
“আমি গুনে দেখেছি পুরো ব্রিজে আটজন লোক পড়ে ছিল। অন্তত আটজন।”এ ঘটনায় কারা আহত বা নিহত হয়েছেন?
নিহত পুলিশ অফিসারের নাম কীথ পামার। বয়স ৪৮। তিনি ছিলেন পুলিশের পার্লামেন্টারি এবং ডিপ্লোমেটিক প্রটেকশন কমান্ডের সদস্য। তিনি পনের বছর ধরে পুলিশের চাকুরিতে ছিলেন।
নিহত একজন পথচারীর নাম আয়শা ফ্রেড। তিনি ডিএলডি কলেজ, লন্ডনে কাজ করতেন। হামলাকারি ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ দিয়ে যখন গাড়ি তুলে দিয়েছিল লোকজনের ওপর তখন তিনি আহত হন।
নিহত আরেকজনের ৫০ বছর বয়সী একজন পুরুষ। সাতজন আহত মানুষের অবস্থা খুবই আশংকাজনক। আরও ২৯ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
আহতদের মধ্যে আছে তিনজন পুলিশ অফিসার। তারা একটি অনুষ্ঠান থেকে পায়ে হেঁটে ফিরছিলেন ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর দিয়ে।
একদল ফরাসী স্কুল ছাত্রও ঐ সময় ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর ছিলেন। এদের তিনজন আহত হয়েছেন।
ল্যাংকাশায়ারের এজ হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ছাত্রও এই ঘটনায় আহত হন। আহত হয়েছেন পাঁচ জন দক্ষিণ কোরিয় পর্যটক।
হামলাকারী কে? তার পরিচয় কি জানা গেছে?
প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জানিয়েছেন, হামলাকারীর জন্ম ব্রিটেনেই এবং একবার ব্রিটেনের নিরাপত্তা বাহিনী তার ব্যাপারে তদন্তও করেছে জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে। তবে পুলিশ এখনো তার নাম প্রকাশ করেননি।
পুলিশ বলছে, তারা হামলাকারী কে, তা জানেন। এখন তারা হামলাকারীর অন্য সহযোগী কারা ছিল তাদের ধরার চেষ্টা করছেন। পুলিশ সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে হামলকারী কে তা জানার চেষ্টা না করার জন্য।
পুলিশ বলছে, হামলাকারী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বা ইসলাপন্থীদের সন্ত্রাসবাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল বলে তারা অনুমান করছে।
হামলাকারী কি উদ্দেশ্যে হামলা করেছে, কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে এবং তার সহযোগী কারা ছিল, পুলিশের তদন্তে এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠী আইএস লন্ডনে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। আইএস এর বার্তা সংস্থা ‘আমাক’ দাবি করছে ইসলামিক স্টেটের একজন ‘সৈনিক’ এই হামলা করেছে।