কারও চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে চোখেমুখে কাজ না পাওয়ার অনিশ্চিত আশঙ্কার দৃষ্টি।
দূতাবাসে অবস্থান নেওয়া এসব প্রবাসীদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন, মো. সজল মোল্লা, মো. লতিফ মিয়া, মো. নুরুল ইসলাম ও মো. আতাউর রহমান জানান, বাংলাদেশ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের সৌদি রিয়াল উপার্জনের বড় বড় স্বপ্ন দেখিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রবাসী সাইফুল, নাজিম ও রুবেল জানান, বেশ কিছুদিন আগে দূতাবাসে এসেছেন তারা। বর্তমানে ২১ জন এখানে। বাংলাদেশ থেকে অপরাজিতা ওভারসিস, মেসার্স ফালাহ ইন্টারন্যাশনাল, আহমদ আল আমিন লিমিটেড, এক্সিলেন্ট ওভারসিজ, বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল এসব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তারা সৌদি আরব আসেন।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বাংলাদেশে নিজেদের এলাকা ঢাকা, বরিশাল ও নোয়াখালীর দালালদের মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সির ভিসা প্রসেসিং করে তারা সৌদি আরব এসেছেন। প্রত্যেকে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা এজেন্সিকে দিয়ে কাজের শর্ত পূরণ করে ঢাকা থেকে বিমানে উঠেন।
সৌদি আরবে আসার পর তাদের ছোট ছোট গ্রুপে রিয়াদের রোকন আল মাসাদি কোম্পানি ফর কন্ট্রাকটিং, সৌদি ইউনিয়ন, মাজা আল দোহা কন্ট্রাকটিং এস্টাবলিশমেন্ট ইত্যাদি কোম্পানিতে নেওয়া হয়।
কিন্তু তাদের অভিযোগ, সৌদি আরব আসার পর এসব কোম্পানিতে ঢাকার শর্ত অনুযায়ী তাদের কাজ দেওয়া হয়নি।
এদের অনেকের কাছে কাজের শর্ত লেখা কাগজে দেখা গেছে ইনডোর ক্লিনার, সাধারণ শ্রমিক ইত্যাদি কাজে আটশ রিয়াল বেতন এবং খাবারের জন্য অতিরিক্ত দুইশ রিয়াল লেখা আছে। কাজের সময়সীমা বলা হয়েছে দৈনিক আট ঘণ্টা এবং অতিরিক্ত কাজে ওভারটাইম হিসেবে প্রতি এক ঘণ্টায় দেড় ঘণ্টা করে মূল বেতনের হিসাবে দেওয়া হবে।
কিন্তু প্রবাসীদের অভিযোগ, এসব শর্তের সবকিছুই এখন মিথ্যা স্বপ্ন এবং প্রতারণায় পরিণত হয়েছে।
তারা বলছে, সৌদি আরবে এসব কোম্পানি তাদের শর্তানুযায়ী কাজ না দিয়ে বিভিন্ন স্থানে সাময়িকভাবে কাজ করিয়ে বেতনভাতা কিছুই দেয়নি। তাছাড়া থাকার জায়গাগুলো ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, সৌদি কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছে মাসিক বেতন চাইতে গেলে তাদেরকে মারধর এবং কোম্পানি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।
দুর্ভোগ পোহানো প্রবাসীরা জানান, অন্য কোন উপায় না পেয়ে কোম্পানি থেকে বের হয়ে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো. সারোয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।