অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ রাত পোহালেই ঈদ। ত্যাগ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের এই ঈদ মানুষকে মহান অর্জনের শিক্ষায় আলোকিত করে। প্রকৃত অর্জন যে ভোগে নয়, ত্যাগেই- এই বার্তাই পৌঁছে দেয় মানুষের হৃদয়ে।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। যদিও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের কোথাও কোথাও সোমবারই (১২ সেপ্টেম্বর) উদযাপিত হয়েছে ঈদ।
হজরত ইব্রাহিমের (আ.) আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর ধরে কোরবানির প্রচলন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। সে অনন্য ঘটনার স্মরণেই কোরবানির শুরু।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে এই ঈদের দিনটি নির্ধারিত। জিলহজের চাঁদ ওঠার পর বলে দেওয়া যায়, কবে এবার ঈদের দিন। ঈদের ঠিক একদিন আগে পবিত্র হজ। সে হিসেবে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। আর তার পরদিন অর্থাৎ সোমবার ঈদ হয়েছে সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানান দেশে।
ঈদের নিরাপত্তা
ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্নস্থানে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের জামাতকে যেকোনো প্রকাশ আপদমুক্ত করতে মোতায়েন থাকছে বাড়তি পুলিশি টহল। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও এর আশপাশের এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
বাড়ি ফেরা
রাস্তাঘাটে নানান ঝক্কিঝামেলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে নাড়ির টানে রাজধানী ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চে করে সোমবারও অনেকে ফিরেছেন বাড়ি। আর যারা যেতে পারেননি তারা ঈদের দিন কিংবা পরদিন ঢাকা ছেড়ে যাবেন। কারণ এবার ঈদে রয়েছে লম্বা ছুটি। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও এলাকায় গেছেন ঈদ উদযাপনে। তারা এলাকায় কোরবানি দেবেন, ঈদ করবেন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে।
ঈদের বাণী
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া সরকার ও বিরোধীদলের সিনিয়র রাজনীতিক, বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নেতারা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আবদুল হামিদ তার বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান। বলেন, ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি অপরিসীম আনুগত্য ও ভালোবাসার এক অনুপম নিদর্শন। পরমতসহিষ্ণুতা, সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার মাধ্যমে শান্তি সম্প্রীতিময় বিশ্বসমাজ গঠন করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, আসুন আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে বিভেদ-বৈষম্যহীন সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
ঈদের নামাজ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ঈদগাহ, খেলার মাঠ ও মসজিদকে প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রধান জামাত জাতীয় ঈদগাহে হবে। এছাড়া নামাজ হবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ মহানগরীর প্রায় ৪০০ স্থানে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে ২২৮টি এবং উত্তরে ১৮০টি স্থানে ঈদের জামাত হবে।
প্রধান ঈদ জামাত সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে। আবহাওয়া খারাপ হলে জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে চলে যাবে। জাতীয় ঈদগাহে পাঁচ হাজার নারীসহ এক লাখের বেশি মানুষ যাতে নামাজ আদায় করতে পারেন- সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। নামাজ পড়াবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তাছাড়া বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাতগুলো হবে সকাল ৭ টায়, ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে।
সংসদ সচিবালয়ের উদ্যোগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজের সূচি রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল ৮টা ও ৯টায় দু’টি জামাত হবে। এছাড়াও ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রধান ফটকে এবং শহীদুল্লাহ হলে ৮টায় ঈদের জামাত। ধানমন্ডির সোবহানবাগ জামে মসজিদে নামাজ হবে সকাল সাড়ে ৭টায়।
পাশাপাশি দেশের সব বিভাগীয় শহর ও উপজেলা এবং গ্রামে গ্রামে পৃথক পৃথক ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।