রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নের শান্তিরহাটে
প্রেমের অপরাধে মেয়ে পক্ষের নির্মম নির্যাতনের শিকার
নির্মাণ শ্রমিক পারভেজ (২০) মারা গেছেন।
রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
২৭ নম্বর সার্জারি বিভাগে কারারক্ষীর প্রহরায় চিকিৎসাধীন
অবস্থায় তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহত
পারভেজের বড় বোন শাহিনা আক্তার।
গত ৬ আগস্ট থেকে কারাবন্দি হিসেবে চমেক হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন ছিলেন নির্যাতনের শিকার নির্মাণ শ্রমিক
পারভেজ। এর আগে গত ১ আগস্ট প্রেমের অপরাধে তাকে দুই
দিন নির্মমভাবে নির্যাতন করে অপরহণ ও নারী নির্যাতন
মামলায় পুলিশের হাতে তুলে দেন পারভেজের প্রেমিকের
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পৌরসভার গোডাউন
এলাকার এ নির্মাণ শ্রমিকের বৃদ্ধ মা ও ছোট্ট বোনকে নিয়েই
ছিল ছোট জগৎ সংসার। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে
সংসার জীবনের ছোট্ট নৌকাটি একাই টেনে চলছিলেন আপন
মনে।
কিন্তু ২০১৪ সালের শেষের দিকে ২০ বছরের এ যুবকের মনেও
উঁকি দিয়েছিল এক প্রেমপাখি! তবে পারভেজের মন মন্দিরের
দরজায় নাজমা আক্তার নামে এক প্রেমপাখি বারবার কড়া
নাড়লেও সেই ডাকে প্রথমে সাড়া দেননি নির্মাণ শ্রমিক
পারভেজ। প্রেম আহ্বানকারী নাজমাদের চেয়ে আর্থিকভাবে
অস্বচ্ছল হওয়ায় নিজেকে রাখতে চেয়েছেন প্রেম নামের সেই
‘ভয়ঙ্কর’ খেলার বাইরে। তবে নাজমা নামের তরুণীটির প্রায়
দু’মাসের প্রাণপণ চেষ্টায় অবশেষে খুলেছিল পারভেজের মন
মন্দিরের বন্ধ কপাট!
এরপর থেকে পারভেজ-নাজমা নামে এই প্রেমিক জুটির মধ্যে
চলে নিয়মিত বিরতিতে রুটিন করে দেখা-সাক্ষাৎ। পারভেজ
কাজের ফাঁকে ঠিকই সময় বের করে সেরে নিতেন ডেটিং পর্বটি।
তাদের এই দেখা-দেখিতে রুটিন থেকে একটু দেরি হলেই নাজমা
হাত কেটে নিজের রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিতেন প্রেমিক
পারভেজের কাছে! রক্তের কালিতে লেখা সেই চিঠি পেয়ে
প্রেমিক পারভেজও ব্যাকুল হয়ে উঠতেন প্রেমিকার জন্য!
প্রেমের টানে ছুটে যেতেন প্রিয়তমা নাজমার কাছে।
তাদের এই প্রেমকাহিনী এক কান দুই কান করে জানাজানি হয়
পরিবার থেকে সমাজে। এতে এক সময় বাধ সাধে অবস্থাসম্পন্ন
নাজমার পরিবার। তাদের প্রেমে যতো বাধা আসছিল, বিপরীতে
তাদের প্রেমের তীব্রতা ও আকর্ষণও বাড়ছিল দ্বিগুণ গতিতে!
প্রেমের বয়স ৯ মাস পার হতে না হতেই গত ২০ জুন এক সাথে
ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে পারভেজ-নাজমা ঘর থেকে বের হয়ে
পাড়ি দেন অজানার উদ্দেশ্যে।
তাদের সেই পথ গিয়ে থেমেছিল সমুদ্রকন্যা কক্সবাজার জেলা
সদরের কতুবদিয়া বাজারে। সেখানে পরিচিত এক ‘বড় ভাইয়ের’
বাসায় উঠে দু’জনই এক সাথে সংসার জীবন কাটানোর পর
একপর্যায়ে প্রেমিকা নাজমার পরিবারের মিথ্যা আশ্বাসে পাঁচ
সপ্তাহ পর আপন গৃহে ফিরে আসেন নাজমা, সাথে পারভেজও।
আর নাজমার পরিবারের কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে ‘জামাই
আদর’ পেতে ছুটে গিয়েছিলেন পারভেজও। তবে তার কপালে
জামাই আদর না জুটলেও জুটেছে প্রেম করার ‘অপরাধে’ নির্মম
নির্যাতন। তার শরীরের ওপর দিয়ে চালানো হয়েছে ভয়াবহ
নির্যাতন। তাকে এক রাত এক দিন অবর্ণনীয়ভাবে আঘাতের পর
গুরুতর আহত করে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় স্থানীয় ইউপি
সদস্যের সহযোগিতায় তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে।
পুলিশও বিনাবাক্যে প্রেমের ‘অপরাধে’ অপরাধী পারভেজকে
অপহরণ ও নারী নির্যাতনের মতো গুরুতর মামলায় গ্রেপ্তার
দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এরপর
থেকে দিনমজুর ‘প্রেম অপরাধী’ পারভেজের ঠাঁই হয় চট্টগ্রাম
কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে। সেখান থেকে অবস্থার
অবনতি হওয়ায় গত ৬ আগস্ট থেকে তাকে ভর্তি করানো হয়
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।