অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক: চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রফতানিতে দুরবস্থা চলছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ৩৭ শতাংশ। চিংড়ি ও হিমায়িত অন্যান্য মাছের মূল গন্তব্য ইউরোপে যায় ৮৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ শতাংশ মাছ রফতানি হয়। কিন্তু বড় এ দুই বাজারে দর কমে যাওয়ায় রফতানিমুখী এ খাতটি বেশ বেকাদায় পড়েছে। এ অবস্থায় রফতানিকারকরা আরও নগদ সহায়তা ও ব্লক ঋণ সুবিধা চান।
রফতানিকারকরা জানান, ইউরোপ অঞ্চলের মুদ্রার দর কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মাছ রফতানিতে তারা মূল্য কম পাচ্ছেন। এর মধ্যে কম দামের ভেন্নামি প্রজাতির চিংড়ি বাজার দখল করছে। এতে বাগদা ও গলদা চিংড়ি আরও কম দামে রফতানি করতে হচ্ছে। অন্য মাছের দরও কমে গেছে। গত অর্থবছরের শুরু থেকে টানা দরপতন চলছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মাছ রফতানি থেকে আয় হয়েছে মাত্র ৯৩৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এ সময়ে মাছ রফতানি কমেছে ৫৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জীবিত মাছ রফতানি কমেছে ৯৯ শতাংশের বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি রফতানি হওয়া চিংড়িতেও বিপর্যয় এসেছে। গত তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে চিংড়ি রফতানি কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মাছ রফতানিতে আয় হয় ৪ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি এসএম আমজাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমার কারণেই রফতানি আয়ে বিপর্যয় এসেছে। এখনও পরিমাণের দিক থেকে রফতানি তেমন কমেনি। বিদ্যমান বাজারে রফতানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দামের প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় টিকে থাকতে হলে কম খরচে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রফতানিমুখী এ খাতের দুরবস্থা কাটাতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশি বাগদা চিংড়ির রফতানি বাজার দখল করে নিচ্ছে ‘ভেন্নামি’ নামের একটি চিংড়ি প্রজাতি। দ্রুত বর্ধনশীল, অধিক উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ও দামে কম হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ভেন্নামি চিংড়ির চাহিদা বেশি বেড়েছে। এই চিংড়ির সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বাগদা চিংড়ির রফতানি বাজার।
সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববাজারে ইউরো ও রুবলের ব্যাপক দরপতনে মাছের দাম চলতি অর্থবছরের শুরুতে প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। গত অর্থবছরে যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও ফ্রান্সের বাজারে রফতানি কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকলেও এবার তা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কম দামে ভেন্নামি চিংড়ি রফতানি করছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ইকুয়েডরসহ বিভিন্ন দেশ। এ কারণে বাংলাদেশের বাগদা ও গলদার চাহিদা কমে গেছে দেশটির বাজারে। তাছাড়া এ বাজারে ফুড সেফটি মডার্নাইজেশন অ্যাক্টসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি ব্যাহত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত অর্থবছরে ৩ কোটি ৫২ লাখ ডলারে চিংড়ি রফতানি হলেও তার আগের অর্থবছরে ৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে হয়েছিল ৮ কোটি ১৫ লাখ ডলারের। ক্রমান্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কমছে চিংড়ি রফতানি।
কম দামে মাছ রফতানির কারণে চলতি মূলধনে ৪০ শতাংশ ঘাটতিতে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সমপরিমাণ অর্থের সুদমুক্ত বল্গক অ্যাকাউন্ট রেখে ঋণ পান তারা। নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার দাবি রয়েছে। বিদ্যমান নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থাকলেও সিলিং থাকার কারণে বাস্তবে ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি পাচ্ছেন না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।