বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহ জেলার অন্তত ৩৫টি গ্রামে গত বেশ কয়েক বছর যাবত ছাগল পালন বন্ধ রয়েছে।
জেলার প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, স্থানীয় সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামগুলোতে ছাগল পালন বন্ধ রাখা হয়েছে।
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ৩৫টি গ্রাম ছাড়াও আশপাশের আরো কিছু উপজেলায় এ প্রবণতা বিস্তৃত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: হাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, গ্রামে ছাগলের দ্বারা ফসলের ক্ষেত নষ্ট হবার ঘটনাকে কেন্দ্রে করে বিভিন্ন সময় মারামারি, এমনকি খুন-খারাবির ঘটনাও ঘটেছে অতীতে।
সে কারণেই গ্রামের ‘মাতব্বররা’ ছাগল পালন নিষিদ্ধ করেছেন বলে মি: রহমান জানান।
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায়ই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতো। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছাগল নিয়ে বিরোধ একটি বড় কারণ ছিল বলে মনে করেন স্থানীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা।
শৈলকূপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ রেজার কথায় এর সত্যতাও পাওয়া গেল।
মি: রেজা বিবিসি বাংলাকে জানান, মনোহরপুর ইউনিয়নের কিছু গ্রামেও ছাগল পালন নিষিদ্ধ আছে।
তিনি বলেন, ছাগলের দ্বারা ফসলের ক্ষেত নষ্ট হওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় এলাকায় রক্তপাত হয়েছে।
এই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, গ্রামের ‘মুরুব্বিরা’ মিলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ‘মুরুব্বিরা’ যখন কোন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন চেয়ারম্যান হিসেবে কিছু করার থাকে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান কবির হোসেন জোয়ারদার বলেন, তিনি যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানেও গত বেশ কয়েক বছর ধরে কেউ ছাগল পালন করে না।
এক সময় তাঁর নিজেরও ১০-১২টি ছাগল ছিল বলে তিনি জানান।
“ছাগলগুলো জবাই দিয়ে গরীব মানুষকে খাইয়ে দিয়েছি,” বললেন মি: জোয়ারদার। তিনি বলেন, এলাকার সবাই মিলে ছাগল পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান দাবি করেন, যেসব এলাকায় ছাগল পালন নিষিদ্ধ রয়েছে, সেসব জায়গায় মানুষের মধ্যে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড কমেছে।
তবে ছাগল পালন নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে প্রান্তিক ও ভূমিহীন লোকজন বেকায়দায় রয়েছে বলে জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মি: রহমান।
ছাগল পালনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর নানাভাবে চেষ্টা করলেও তাতে খুব একটা ফল হয়নি।
“এক সময় ৪৫টি গ্রামে ছাগল পালন নিষিদ্ধ ছিল। গত কয়েক বছরে আমরা সেটি কমিয়ে ৩৫টি পর্যন্ত আনতে পেরেছি। এই ৩৫টি গ্রামে গত বেশ কয়েক বছর ধরে ছাগল পালন হয় না।”
হাফিজুর রহমান জানান, এসব গ্রামের উদাহরণ কাজে লাগিয়ে আশপাশের কিছু এলাকায় একই পন্থা কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহের যে গ্রামগুলোতে ছাগল পালন নিষিদ্ধ রয়েছে, সেগুলো অন্যতম সেরা জাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের জন্য প্রসিদ্ধ।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বাচ্চা প্রসবের চার মাসের মাথায় সেটি বিক্রয়যোগ্য হয়ে উঠে এবং বাজারে যার দাম থাকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ফলে ছাগল পালনের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন কর্মকর্তারা।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের গড় ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজি। তবে এসব ছাগল ৩০ থেকে ৩২ কেজি পর্যন্তও হতে পারে বলে তারা জানালেন।
সূত্র, বিবিসি