দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যাদের ”যৌনদাসী” হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল জাপান তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে বলে ২০১৫ সালে যে চুক্তি সই হয়েছিল তাতে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা মাথায় রাখা হয় নি।
মন্ত্রণালয়ের এক প্যানেল বলছে যেসব নারী এখনও সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পরেও বেঁচে আছেন, তাদের মতামত এই চুক্তিতে আমলে নেওয়া হয় নি ।
বিষয়টি নিয়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের যে কূটনৈতিক বিতণ্ডা রয়েছে তা অবসানের চেষ্টায় দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্বতন সরকার এই চুক্তিতে সই করে।
দ: কোরিয়ায় বিষয়টি নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তাদের হিসাব অনুযায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের সামরিক বাহিনীর গণিকালয়গুলোতে দুই লক্ষের মত কোরিয়ান মহিলাকে জোর করে যৌনদাসী হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদের বলা হতো ”কমফর্ট উইমেন”।
সমালোচকরা বলছেন যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের সঙ্গে কোনরকম আলোচনা ছাড়াই এই চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছিল। এই চুক্তিতে জাপানে এর জন্য আইনি দায়িত্ব স্বীকার করে নি এবং যাদের দিয়ে একাজ করানো হয়েছিল তাদের সরাসরি ক্ষতিপূরণ দেবার কথাও বলা হয় নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ক্যাং কিয়াং হোয়া বলেছেন, দক্ষিণ কোরীয় সরকার এখন প্যানেলের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করবে এবং সেসময় গণিকালয়ে যারা কাজ করেছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলবে।
”এই চুক্তি, ওই ঘটনার শিকার হয়েছিলেন যারা, তাদের দাবি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। মানবাধিকার ইস্যু সমাধানের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্তদের কথাটা মাথায় রাখাই দস্তুর,” তিনি বলেন।
তবে জাপান ও দ: কোরিয়া মধ্যে দুবছর আগে হওয়া এই চুক্তি প্রসঙ্গে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী টারো কানো বলেছেন, এই চুক্তিতে কোন পরিবর্তন আনার চেষ্টা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের এই চুক্তিতে অনেক কিছু গোপন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
কী আছে দুবছর আগে সম্পাদিত চুক্তিতে
২০১৫-র চুক্তিতে জাপান ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছিল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য এক তহবিলে এক বিলিয়ন ইয়েন দিতে সম্মত হয়েছিল।
এতে ক্ষমা চেয়েছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং এর জন্য জাপান ”গভীরভাবে দায়িত্ববদ্ধ” বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়া এর বদলে আশ্বাস দেয় সোলে জাপানী দূতাবাস এবং বুসানে জাপানী কনস্যুলেটের সামনে আন্দোলনকারীরা এই ”যৌনদাসীদের” যে প্রতীকী মূর্তি বসিয়েছে তা তারা সরিয়ে নেবে।
আন্দোলনকারীরা এই নারীদের নিগ্রহের বিষয়টির প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে মূর্তিগুলো বসায়।
এই মূর্তিগুলো দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানী সৈন্যদের জন্য গণিকালয়ে এধরনের ”যৌনদাসী” হিসাবে যেসব মেয়েরা কাজ করতেন তাদের বেশিরভাগই ছিলেন কোরীয়। এছাড়াও চীন, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, এবং তাইওয়ানের মেয়েদেরও এসব গণিকালয়ে কাজ করতে বাধ্য করা হতো।
এদের কেউ হয়ত স্বেচ্ছায় একাজ করেছেন, কিন্তু বেশিরভাগকেই পাচিকা বা পরিচ্ছন্নকর্মী হিসাবে বেতন দিয়ে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী এদের বেশিরভাগকেই জোর করে কাজে পাঠানো হয়।