ইতালির রোম প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক জমির হোসেন। উনার লেখা প্রথম গ্রন্থ ” প্রবাসে মেঘ জোৎস্না “।
বইটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
> পুরো বই জুড়ে হাজার হাজার সীমানার দূর দেশে থেকেও অটুট দেশপ্রেম, প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের করণীয়,প্রবাসের মাটিতে বাংলাদেশীদের করণীয় বিষয় গুলো বিভিন্ন ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
> পরিবারের সবাই কে ভালো রাখবার জন্য প্রবাসের মাটিতে একজন মানুষের সীমাহীন বিসর্জন আর না পাওয়া গুলো কে লেখক ভীষণ মানবিক ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একজন প্রবাসী দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়। যে টাকা গুলো দিয়ে নিজের সহযোগিতা করা যেত সেই টাকা গুলো পরিবারের জন্য, দেশের উপকারের জন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়।
> লেখক বইটির অধিকাংশ লেখা তে প্রবাসীদের চোখের পানি লুকিয়ে, প্রবাসের মাটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম আর অটুট মনোবল আর দেশপ্রেম কে খুব সহজ সরল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন।
> রক্ত পানি করে দেশের জন্য টাকা পাঠান প্রবাসীরা। কিন্তু সেই প্রাণের বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, খাবারে ভেজাল, রাজনীতি তে কিছু অসাধু মানুষের ঘৃণ্য অপরাধ, বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি,দূতাবাস গুলো তে সঠিক সময়ে সঠিক সহযোগিতার অভাব , প্রবাসের মাটিতে আত্মীয় স্বজনহীন ঈদের দিন…এই ধরনের বহুবিধ বিষয় গুলো লেখক এর লেখনীতে উঠে এসেছে।
> ইতালির অপরূপ সৌন্দর্য্যের ভেনিস নগরী, টেনেরিফ দ্বীপ, লন্ডন ব্রিজ এর অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য গুলো লেখক খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
> মানুষের জানার কোন শেষ নেয়। জমির হোসেন ভাই এর এই বই মাধ্যমে জানলাম, ভেনিস এ এম্বুলেন্স এর জন্য পানিপথ কে কাজে লাগাতে হয়।
আমি জানতাম ভেনিস এর চারিদিকে পানি আর পানি। রোগীর জরুরী অবস্থার জন্যও পানি পথ একমাত্র পথ, এই প্রথম আমি জানলাম।
> টেনেরিফ দ্বীপ এ ” আস সুন্না ” নামে একটি মসজিদ তৈরী করেছেন সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা। বিষয় টা আমাকে বিস্মিত আর মুগ্ধ করেছে। লেখক অদ্ভুত সুন্দর ভাবে টেনেরিফ দ্বীপ এর সৌন্দর্য উনার লেখনী তে ফুটিয়ে তুলেছেন।
> প্রবাসীদের লাশ দেশে প্রেরণ এর জন্য সরকার কতৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
> ইটালির আকাশে পৃথিবীর সকল দেশের বিমানের পাশাপাশি বাংলাদেশের বলাকা বিমান কে আবারও দেখতে চাওয়ার ইচ্ছের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে লেখক এর প্রবল দেশপ্রেম।
> ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা আর মাতৃহারা জীবনে নি
রন্তর সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে ছিল লেখক এর। মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম লেখক এর লেখনীতে প্রবল।
আর তাই প্রবাসী হয়েও হৃদয়ের মন্দিরে লাল সবুজের পতাকা।
> লেখক হাজার মাইল দূরের দেশে থেকেও কলুষমুক্ত একটি বাংলাদেশের জন্য হৃদয়ে ধারণ করেন স্বপনের ডালপালা।
তিনি বাংলাদেশ কে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চান।
ইলিশ মাছের বাড়ী চাঁদপুর লেখক এর জন্মস্থান।
চাঁদপুরের সাহিত্য সংস্কৃতির ছোঁয়া, কিছু গুণী মানুষ এর ভালোবাসা নিয়ে আরো বহু দূরের পথ পাড়ি দিতে চেয়েছেন লেখক।
> প্রবাসীদের লুকিয়ে রাখা দুঃখ কষ্ট, সীমাহীন বিসর্জন সংগ্রাম, দেশের রেমিট্যান্স এ প্রবাসীদের অবদান, উন্নত দেশের মাটিতে থেকেও অটুট দেশপ্রেম, নতুন দেশের মাটিতে নতুন ভাষা আর বিভিন্ন আঘাত বুক পেতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে পুরো বইয়ের লেখা গুলো তে।
লেখক এর এই বই টি এইবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ ( ঢাকা, বাংলাদেশ) এ চৈতন্য প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। মূল্য ২০০ টাকা।
প্রতি বছর ইটালি সহ অনেক দেশে যাবার জন্য অনেক তরুণ দালাল এর সহযোগিতা নেয়।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফাঁদে আটকে যায়। তারপরে ইউরোপের কোন এক সাগরে ভেসে ওঠে তাদের লাশ।
আবার কখনো বা শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
আমাদের এই ধরনের সম্ভাবনাময়ী তরুণদের যেন প্রবাসের কোন সাগরে লাশ হয়ে ভেসে উঠতে না হয়, এইজন্য আপনারা যারা প্রবাসী, যারা লেখক তাদের কাছে আমরা মানুষের উপকারে আসবে এই ধরনের লেখা বই আমরা আরোও পড়তে চাই।
একজন নিরপেক্ষ পাঠক হিসেবে লিখছি, জমির হোসেন ভাই এর লেখা এই বই টি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
বইটার নাম যথার্থ হয়েছে। চৈতন্য প্রকাশনার প্রকাশক কে ধন্যবাদ সুন্দর একটা বই পাঠক কে উপহার দেয়ার জন্য।
লেখক এর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
বই টি দেশ বিদেশের যে কোনো জায়গা থেকে রকমারি ডটকম এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা যাবে।
লেখক-
ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক ও উপস্থাপিকা