চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য টিকা গ্রহণের এ উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই টিকা নিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
বেইজিং এর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেহেদী হাসান সানী বলেন, “কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিয়ে আমি শুরু থেকেই আগ্রহী ছিলাম। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সিনোফার্মের বিবিবিপি-করভি টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রেখে আমাদেরকে ছেড়ে দেয়। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করি এবং এখানে আমাদের শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বেচ্ছাসেবীসহ সবার সহযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করবো। সব মিলিয়ে খুবই ভাল একটি অভিজ্ঞতা।”
টিকা নেওয়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় জানিয়ে ফাহিম আহমেদ শুভ্র বলেন, “গত ২৩ এপ্রিল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে সব বিদেশি শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন সিনোভ্যাক এর প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ইনজেকশনের জায়গায় একদিন হালকা ব্যাথা ছাড়া আর কোন সমস্যা হয়নি। টিকা নেওয়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ স্বেছায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই কঠোর মনিটরিংয়ে খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”
‘চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সে’ পিএইচডি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী শিরিন আক্তার বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করোনাভাইরাস টিকার প্রথম পর্ব সিনোভ্যাক দেওয়া হয়েছে। টিকাদানকেন্দ্র আমাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানিয়েছিল। সকাল ৯টায় থেকে কাছের হাসপাতালে টিকাদান শুরু হয়েছিলো। এ টিকার মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত থাকবে।”
কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে হুজু ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত মোস্তাক আহমেদ নিশাত জানান, হাসপাতালের ডাক্তাররা প্রথমে কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা করেন যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, সর্দি-কাশি আছে কিনা। টিকা গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিদ্যমান নেই। তবে ইনজেকশনের জায়গায় একদিন হালকা ব্যাথা ছাড়া আর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।
টিকা দেওয়ার পর ৩০ মিনিট টিকাদান কেন্দ্রে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে যাতে শারীরিক কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা দেখার জন্য। চিকিৎসকরা প্রাথমিক কিছু পরামর্শ দেন, যেমন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোসল না করা, ঝাল জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকা, প্রচুর পরিমাণে হালকা গরম পানি খাওয়া এবং ৭ দিন মদপান না করা।
এদিকে চীনা ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার চায় বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশে অবস্থারত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন তারা। সঙ্গে জমা দেওয়া হয় স্বেচ্ছায় চীনা টিকা নিতে ইচ্ছুক প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর একটি তালিকা।
পাশাপাশি চীনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা মনে করেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীন ফিরতে না পেরে বাংলাদেশে অবস্থারত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চীনে উৎপাদিত টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত যাতে করে তারা চীনে দ্রুত ফিরতে পারে।