আজ সোমবার,২৫ আষাঢ় ১৪২৫ বঙ্গাব্দ,০৯ জুলাই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ। স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৯নং আমতৈল ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ”আমার চাচা” এলিম উল্লাহ্ মৃত্যুবরণ করেছেন।
চাচার মৃত্যুতে শোকেবিহ্বল এলাকার প্রতিটি মানুষ। সবার মুখে মুখে শুধু একটি কথাই শুনা যাচ্ছে, গ্রামটা কেনো জানি মুরব্বী শূন্য হতে চলেছে।
প্রবাসী জীবনে বহু প্রবাসীর মৃত্যুর সংবাদ লিখতে গিয়ে প্রায় সময়ই মনে হয়েছে,আমি আজ যাঁদের মৃত্যুর সংবাদ লিখছি, কাল হয়তো আমার মৃত্যুর সংবাদ আমারই কোনো এক সহকর্মী লিখবে।
মূলত মৃত্যু প্রত্যেক মানুষের জীবনে অনিবার্য, সেটি হতে পারে আজ, নয় কাল, আর না হয় পরশু নিশ্চিত।
তবে প্রবাসী জীবনে মৃত্যু কেউই আশা করেননা, যদিও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটছে।
যে কথা বলছিলাম, মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমে অবস্থিত খুশহাল পুর গ্রাম, যে গ্রামটি হচ্ছে আমার জন্মস্থান।
আমার মরহুম বাবা ছিলেন একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সৎ আদর্শবান হতে বাবা প্রায় সময়ই উপদেশ দিতেন।
বাবাও যে ছিলেন একজন সৎ ও আদর্শবান জনপ্রতিনিধি তাতে কোনো সন্দেহ ছিলনা, কেননা বাবার জীবদ্দশায় অনেক কথাই শুনেছি খোদ বাবার মুখ থেকেই। আর এলাকার মানুষের মুখ থেকে সৎ ও আদর্শবান বাবার নানা কাজের প্রশংসা এখনো শুনে থাকি।
কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রবাসী জীবনের এক পর্যায়ে বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হয়েছে, এমনকি মমতাময়ী মায়েরও।
তারপর একে একে অনেক অনেক আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হচ্ছে এই প্রবাসে বসেই।
প্রায় সময়ই বলে থাকি যে, এই প্রবাসটা যতটা না দিয়েছে, তার অনেক অনেক গুণ বেশি কেড়ে নিয়েছে।
তবুও সর্বনাশা প্রবাস জীবন শুধু আমাকেই নয়, পরদেশে থাকা অভাগা প্রবাসী কাউকেই ছাড়ছে না।
সর্বশেষ, প্রবাসী জীবনে হারালাম আমার চাচা সাবেক চেয়ারম্যান এলিম উল্লাহ্কে।
একটা সময় পরম শ্রদ্ধাভাজন সদ্য মরহুম এ চাচার কাছ থেকে অবর্ণনীয় স্নেহ পেয়েছি, পরামর্শ পেয়েছি, উপদেশ পেয়েছি তথা (প্রবাসী হবার পর) সংসারের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে আমাকে প্রায় সময়ই বলতেন।
আজ চাচা না ফেরার দেশে চলে গেছেন, এ মুহূর্তে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে চাচার অনেক কথা মনে পড়ছে।
দুই যুগেরও বেশি সময় আগের কথা, একদিন এলিম চাচা আমাকে বললেন, (আঞ্চলিক ভাষায়) ওবা তোমারার যে কালা বড় একটা ছাগল আছে, ওটার মাংস আমারে খাওয়াইতায় অইবায়।
তো আমি আর তখন কতোটুকুই বা বুঝি, চাচাকে বললাম জি চাচা অবশ্যই খাওয়াবো।
তারপর, যখনই চাচা আমাকে দেখতেন, সেই ছাগলের মাংস খাওয়ানোর আবদার তুলে ধরতেন। (আঞ্চলিক ভাষায়) কইবা তোমারার কালা ছাগল ওটা খাওয়াইলায় না? তখন আমার জবাব বরাবরের মতো ছিল, জি চাচা (আঞ্চলিক ভাষায়) আব্বারে কইমুনে।
একটা সময় যখন প্রাপ্তবয়স্ক হলাম, ঠিক তখন বুঝতে পারলাম যে, চাচা তো আসলে আমার সাথে জোঁক করতেন।
হ্যাঁ, সে যাই হোক তবুও মনে হয় যেনো চাচাকে ছাগলের মাংস খাওয়াতে না পারার দুঃখ পুরোটাই রয়ে গেলো।
সদ্য মরহুম চাচাকে আল্লাহ্ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমীন।