আ,হ,জুবেদঃ গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল অন্যতম একটি প্রাণী যে বহু কাল ধরে মানুষের একান্ত কাছাকাছি অবস্থান করার সৌভাগ্য লাভ করেছে। নরম স্বভাবের এই প্রাণীটির বেশ কিছু আকর্ষনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেকের কাছে সে অতি আদরের।
কুয়েতে এরকমই অনেক আদরে আছে এক বিড়াল, আর সেটি বিড়াল প্রীতি এক মিমের ঘরে।
তবে বিড়ালের আগে কুকুর সম্পর্কে আলোকপাত করছি। পৃথিবীতে অগণিত কুকুর প্রীতি মানুষের কথা আমরা শুনেছি,পৃথিবীর বহু বিখ্যাত লোকের কুকুর-প্রীতি ছিল, এখনও অনেকের আছে। এদের মধ্যে অনেকে আবার নিজেদের কুকুর সম্পর্কে দু-চার কথা লিখেও গেছেন। প্রখ্যাত ফরাসী মনীষী ও গ্রন্থকার রমা রল্যা তার ‘জাঁ ক্রিসতফ’ বইতে এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, “শুধু মাত্র প্রভুদের শিক্ষাতেই পোষা প্রাণীরা ভাল বা মন্দ, সরল বা কুটিল, স্পর্শকাতর বা বোকা হয়ে ওঠে না, তারা আসলে হয়ে ওঠে ঠিক তাদের প্রভুদের মতো।সেই আদিম কাল থেকে কুকুরকে মানুষ বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে পালন করে আসছে। ধর্মের বিধি নিষেধ থাকার কারণে মুসলিম দেশে কুকুর পালনের তেমন প্রচলন না থাকলেও বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে রঙ বেরঙের কুকুর পালনের প্রচলন রয়েছে।
জাপানে এমন অসংখ্য ফ্যামিলি আছে যাদের ছেলেমেয়ে নেই বা কখনই বিয়ে করেনি কিন্তু কুকুর ছাড়া ফ্যামিলি খুজে পাওয়া দুষ্কর।
গত বছর ভারতের কেরালা রাজ্যকে পর্যটকবান্ধব করতে রাজ্য সরকার ‘কুকুর হইতে দূরে থাকার’ নীতি গ্রহণ করেছিল। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন প্রাণীপ্রেমী বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সানি লিওন।।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সানি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, এটা হাস্যকর সিদ্ধান্ত। ।মাত্র কিছু দিন আগের ঘটনা, ছয় বছর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার পর ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন তার মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকা টেরেসা মে-র হাতে।
বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে ব্রিটেনের রানির হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেবার মাধ্যমে তার প্রধানমন্ত্রীত্বের অবসান যেমন ঘটছে তেমনি এই সঙ্গে সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে সপরিবারে বিদায় নিয়েছিলেন ডেভিড ক্যামেরন।
তবে সেসময় বেশি করে আলোচনায় এসেছিল ডাউনিং স্ট্রিটে পোষা বিড়াল ল্যারির কথা।২০১১ সালে ডাউনিং স্ট্রিটে ইঁদুরের উৎপাত বন্ধ করার জন্য ল্যারিকে নিয়ে আসা হয়েছিল পোষা জন্তুদের দেখাশোনার একটি আশ্রয়ভবন থেকে।
ক্যামেরন তার ব্যক্তিগত বিষয় আশয় সব নিয়ে গেলেও রেখে গিয়েছিলেন প্রায় ৫ বছরের পোষা বিড়াল ল্যারিকে।তখন ল্যারি পেয়েছিলেন নতুন মনিব – নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে।
ব্রিটেনের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ল্যারির গল্প এতটা ফলাও করে ছাপানোর একটা কারণ ব্রিটিশদের কুকুর ও বিড়াল প্রীতি সুবিদিত।
এদিকে কুয়েতে জাবরিয়া এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশের মেয়ে মিমের বিড়াল প্রীতি সত্যি অবাক করেছে অনেককে।
মিমের স্কটিশ পুরুষ বিড়ালটিও পিচ্ছি মুনিবের ভালোবাসায় সম্পূর্ণ মুগ্ধ।
রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক আব্দুর রউফ মাওলার সর্বকনিষ্ট কন্যা সন্তান রাজিয়া সুলতানা মিম।
মিম কুয়েতের জাবরিয়া ইন্ডিয়ান স্কুলের ক্লাস ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।লেখাপড়ায় যেমন মেধাবী; ঠিক তেমনই সে একজন প্রতিভাবান ক্ষুদে নৃত্যশিল্পী ও পাশাপাশি সে কবিতা আবৃতিও করে থাকে।
মিমের দুই বোন রাবেয়া আঞ্জুমান ও রাফিয়া সুলতানা, এক ভাই মোঃ রায়হান আকাশ।
মিমের মাতা নুর জাহান রউফ পেশায় একজন বিউটিশিয়ান।
মিমদের বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা চমৎকার একটি সংসার।
মিমের বিড়াল প্রীতি কখন থেকে, একথা জানতে চাইলে মিম জানায়, আমি যখন বুঝতে শিখেছি ঠিক তখন থেকে আমি বিড়ালকে প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসি।
এই স্কটিশ বিড়ালটি কবে থেকে তোমার আদরে যত্নে আছে? এই তো মাস তিনেক ধরে।
আচ্ছা বিড়ালকে পোষে কী লাভ বলো? আমি লাভ-ক্ষতি কিছু বুঝিনা; আমি আমার বিড়ালকে ভালোবাসি।
বিড়ালের প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় কী রয়েছে? সকালে ওকে টুনা দেয়া হয়, বিকেলে বিস্কুট ও দুধ দেয়া হয় এবং রাত্রে শুধুমাত্র দুধ দেয়া হয়।
আচ্ছা, বিড়ালকে পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে কী শাওয়ারের প্রয়োজন হয়? জী, ওকে আমি প্রতি সপ্তাহে একদিন শাওয়ার করিয়ে থাকি।আচ্ছা কী নামে বিড়ালকে ডাকো ? আল্-বিন জুজু নামে বিড়ালকে ডাকলে; সে পাগলের মতো ছুঠে আসে আমাদের পাশে।
মিমের বিড়াল প্রীতি, কুয়েতে পরিচিতজনদের মধ্যে একধরনের বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
মিম নিজ খাবার সেরে নেয়ার আগে সবসময়’ই বিড়ালের খাবার নিশ্চিত করেই নিজে খেতে যাবে, এটি প্রত্যহ এক ধরনের রুটিনে পরিণত হয়েছে।
মিম ঘুমোতে যাবার আগে, অনেকটা সন্তানের আদরে বিড়ালকে সে আগে ঘুম পারাবে।
তারপরেই মিম ঘুমোতে যাবে, সত্যি এযেনো বিড়াল প্রীতি ১১বছরের মেয়ে মিমের পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য কোনো এক বেবির প্রতি মিমের অফুরন্ত ভালোবাসা।
আল্-বিন জুজু নামের বিড়ালটিও মিমদের ঘরের প্রতিটি কোণে কোণে বিরামহীন খেলা করে বেড়ায়।তবে এক্ষেত্রে মিমদের পরিবার থেকে নেই কোনো অভিযোগ কিংবা বিড়ালের উপর বিরক্তিবোধের কোনো কারণও শুনা যায়নি।
মিমের বিড়ালের স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্যে নিয়মিত এনিমেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং রুটিনের বাহিরে তাকে কোনো খাবার দেয়া হয়না।
বর্তমান পৃথিবীর অনেক দেশে মানবসেবা যেখানে খুবই অপ্রতুল; সেখানে মিমের বিড়াল সেবা বা প্রীতি, যেটাই বলি না কেন, সত্যি এটি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।