উহান থেকে তিনশ রও বেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে ফিরে গেলেও চীন অবস্থান করছে কর্মজীবী বাংলাদেশিরা। চীনে চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে কেউ কেউ বাংলাদেশে চলে গেলেও অসংখ্য চাকরীজীবী, ব্যবসায়ী বাংলাদেশি তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চীনেই থেকে গেছেন। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে তাদের মাঝেও।
এএমশিন টেক লিমিটেড সেনজেন কোম্পানির কর্ণধার হাসান মো. একরামুল হক বাপ্পা বলেন, “সেনজেন বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে সেনজেনে বসবাসরত একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী হিসেবে আমি বলবো যে, এখানে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সরকারি, আধা সরকারি অফিস আদালতের চীনা নববর্ষের ছুটি ১০ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কোনও প্রকার প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনও প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করার কথা বারবার বলা হয়েছে।”
চীনা নববর্ষের ছুটির শেষদিন ছিল সোমবার।
ব্যবসায়ী হাসান মো. একরামুল হক বলেন, “আরেকটি ব্যাপার হলো, প্রথম যখন ভাইরাসটি ধরা পড়েছিল তখন শাক-সবজি বা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে ক্রাইসিস ছিল এখন সেটা নেই। সত্যিকার অর্থে বাইরে লোকজনের আনাগোনা খুবই কম। তবে যেহেতু এ মাসের দশ তারিখ থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের কাজ শুরু করতে পারবেন, সেহেতু বিভিন্ন প্রদেশের নাগরিক যারা সেনজেনে ব্যবসা করেন, তারা অনেকেই ছুটি শেষে সেনজেনে ফিরতে শুরু করেছেন।”
বাংলাদেশ থেকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সেনজেন বা চীনের অন্যান্য প্রদেশে যারা আসা-যাওয়া করেন তাদেরকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
করোনাভাইরাস নিয়ে সাংহাই এর উক্রিসেন্ট এ কর্মরত প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, “আমি টেকনিক্যাল লিড, এক্সচেঞ্জ অনলাইন এক্সপার্ট হিসেবে কর্মরত আছি গত আটমাস যাবত। আমার অফিস লোকেশন সাংহাই এর মিনহাং জেলাতে। এখানে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও বেশ খানিকটা আতংক আমাদের মাঝে বিরাজ করছে। প্রতিনিয়ত ছড়ানো বিভিন্ন গুজব পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর করে তুলেছে। তবে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স এবং অফিস কর্তৃপক্ষ তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কিছুটা হলেও আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।”
“যেমন, অফিস থেকে প্রতিনয়ত মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। একদম নতুন যারা কাজে যোগ দিয়েছেন অন্য প্রদেশ থেকে, তাদের ১৪ দিন এক জায়গায় রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তারপর কাজে লাগানো হচ্ছে। একইসাথে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ লবি, লিফট এরিয়া, কমনপ্লেসগুলো বারবার অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে পরিষ্কার রাখছে।”
“সবাই তাদের জায়গা থেকে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করছে। সর্বোপরি দেশে থাকা পরিবার, আত্তীয়স্বজনদের বলবো উদ্বিগ্ন না হয়ে, আমাদের জন্য দোয়া করার জন্য।”
এক্সপো ট্রেড গুয়াংজু লিমিটেডের মালিক হুমায়ুন কবির খাঁন বলেন, “আমি গুয়াংজুতে সপরিবারেই রয়েছি। বর্তমানে দুই-তিনটি বাংলাদেশি পরিবার এখানে আছে। আরও ১০/১৫টি চীনা পরিবার রয়েছে। চীনা নববর্ষের ছুটিতে এখন বাকি বাংলাদেশি পরিবারগুলো দেশে অবস্থান করছেন। এ মুহূর্তে করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে আমরা গুয়াংজুতে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি। আমাদের এই প্রদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের অবস্থা থমথমে।
“অপ্রয়োজনে কেউ ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় মেডিক্যাল টিম চেকআপ করছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা সীমিত করা হয়েছে। হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কাঁচাবাজারের সরবরাহ কম, ফলে দাম বাড়ছেই। ছুটি শেষ হয়ে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর যেকোনও দুর্যোগ মোকাবেলায লোকাল সরকারকে পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হল বাস, মেট্রো এবং বাসার এলাকায় প্রবেশ করার সময় শরীরের তাপমাত্রা দেখা হয়, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে; এতে বোঝা যায় সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ওরা বদ্ধ পরিকর।”