Menu |||

হজ্জের আধ্যাত্নিক শিক্ষা ও আবেদনঃ একটি পর্যালোচনা

ধর্মীয় দর্শন ডেস্কঃ পবিত্র হজ্জের সিদ্ধান্ত যখন একজন সম্মানিত বান্দা গ্রহণ করেন তখন তিনি কয়েকটি জিনিস অর্জন করেন। তার সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে তিনি আল্লাহর গোলাম, তিনি কুফরি আচরণ করতে আদৌ প্রস্তুত হন, তিনি হজ্জ না করে ইহুদী নাসারার সমতুল্য হতে রাজি নন। আল্লাহর এ বান্দা যখন ব্যাংকে টাকা দাখিল করেন তখন তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তিনি অর্থ পূজারী নন। তিনি খোদার হুকুমে তার উপার্জিত সম্পদ ব্যয় করতে প্রস্তুত। যেখানে অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর পছন্দ সেখানে তিনি অর্থ ব্যয় করবেন, যেখানে অর্থ ব্যয় আল্লাহর অপছন্দনীয় সেখানে তিনি হাত গুটিয়ে থাকবেন।

যথন তিনি পরিবার পরিজন ছেড়ে ঘর থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে বাইরে পা রাখেন, তখন তিনি মনে মনে এ শিক্ষা নেন যে, হে খোদা!আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য কেবল এ দীর্ঘ সফর নয় বরং সব ধরনের ত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছি। যখন তিনি গোসল করে ইহরামের ধবধবে সাদা চাদর পরিধান করেন ,তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, হে খোদা ! আমি তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে এ হজ্জের এক মাসের জন্য নয় বরং বাকি জীবনটা পবিত্র-পরিচ্ছন্ন হয়ে চলবো।

যখন তিনি ‘‘লাববাইকা আল্লাহুম্মা লাববাইক’’ বলে ইহরাম বাধেন তখন তিনি আল্লাহর গোলাম হিসেবে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) যে আহবান জানিয়েছিলেন,পিতার সে আহবানের বাস্তব সাড়াই হল এ হজ্জ। আর তালবিয়া হল তার মৌখিক হাজিরা। এ থকে তিনি শিক্ষা নেন, হে আল্লাহ!তুমি যখন যে কাজে ডাকবে আমি দ্বিধাহীন চিত্তে, নিঃসংকোচে তখন সে কাজটি করতে প্রস্তুত আছি ।

যখন তিনি হেরেম শরিফে পৌঁছান তখন তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সেই ঘর ,যে ঘর নির্মাণ করেছিলেন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.), পুনঃনির্মাণ করেছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.), এ ঘরের সংস্কারের সর্বশেষ কাজটি ‘‘হজরে আসওয়াদ’’ স্থাপন করেছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। ওই তো সেই কাবা! সেখানে ২ রাকাত নামাজ পড়লে ১ লাখ রাকাত নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। ওই তো ‘‘হজরে আসওয়াদ’’ যা চুম্বন করলে মানুষ পাপমুক্ত হয়। এমন একটি দিন ছিল যখন এ ঘরে নামাজ পড়তে দেয়নি কাফেররা নবী (সা.) কে। নামাজের সিজদার সময় ওরা নবী (সা.) এর ঘাড়ের ওপর উটের নাড়ি-ভূড়ি চাপাত, যা তার জীবনকে দুর্বিসহ করে দিত। ইতিহাস ও নবী (সা.) এর হাজারো স্মৃতি একজন হাজির চোখের সামনে ভেসে ওঠে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। সে অশ্রুর মধ্যদিয়ে তার প্রসারিত দৃষ্টি যখন জমজম কূপের দিকে পড়ে, তখন তিনি হারিয়ে যান ইতিহাসের পাতায়। আল্লাহর জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.) যে কুরবানি করেছিলেন, তা ভেবে তিনি তার জীবনের সঠিক দর্শন খুঁজে পান। যিনি সঠিক ভাবনা ভাবেন তিনিই লাভ করেন সঠিক জীবন দর্শন।

একজন হাজী যখন আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে পৌঁছেন তখন অজুত কণ্ঠের তালবিয়ার সুরের মূর্ছনায় নিজের অবস্থানের কথা তিনি ভুলে যান। লাখ লাখ হাজী অনাবৃত মস্তকে ধবধবে সাদা কাপড়ে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করতে থাকে। এ বিশাল প্রান্তরে এসে তার হাশরের ময়দানের কথা মনে পড়ে যায়। সেখানের জবাবদিহীতার চিন্তায় ভীত বিহবল হয়ে পড়েন তিনি। সত্যিকারের তওবা করে আগামী দিনগুলোতে ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করার শিক্ষা গ্রহণ করেন একজন সম্মানিত হাজী।
একজন সম্মানিত হাজী যখন মীনার কুরবানি গাহে পশু কুরবানি করেন, তখন মূলত তিনি তার ভিতরকার যাবতীয় পাশবিকতাকেও কুরবানি করেন এবং মানবীয় গুণাবলী বিকাশের শিক্ষা নেন। ‘‘ভোগে নয় ত্যাগেই জীবনের সার্থকতা’’ এ জীবন দর্শন তিনি খুঁজে পান কুরবানির মধ্যে।

তিনি যখন পশুর রক্ত প্রবাহিত করেন তখন শপথ পড়েন, ‘‘আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন-মৃত্যু সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য’’ পবিত্র কুরআনের সুরা আনআমের এ শপথ বাক্য পাঠ করে একজন হাজী আল্লাহর দ্বীনের জন্য সব ধরনের ত্যাগ স্বীকারের দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তার শপথ এতটা দৃঢ় ও ব্যাপক যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তিনি নিজের জীবনটাও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।

একজন সম্মানিত হাজী যখন জামরাতে (শয়তানের স্তম্ভে) পাথর নিক্ষেপ করেন তখন তিনি কেবল অভিশপ্ত শয়তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করেন না বরং শয়তানের সকল মত ও পথের বিরুদ্ধেও তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন। তার এ ঘৃণা শিরকের বিরুদ্ধে, তাগুতের (খোদাদ্রোহী শক্তি) বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, মানব রচিত মতবাদের বিরুদ্ধে। মোট কথা তিনি সকল বাতিল মতবাদ ও অপশক্তির বিরুদ্ধে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে আপোষহীন সংগ্রামের সূচনা করেন। তিনি মনে মনে দীক্ষা নেন জীবনের বাকি দিনগুলোতে আর শয়তানের মত পথ অনুসরণ করবেন না, কুরআনের পথ ছাড়বেন না।

এ ভাবে আল্লাহর একজন মেহমান (হাজী সাহেবানকে আল্লাহর মেহমান বলা হয়েছে) প্রতিটি পদে পদে নতুন নতুন জীবন্ত শিক্ষা গ্রহণ করে হজ্জ সমাপ্ত করে যান মদীনায় রসূল (স.)-এর রওজা জিয়ারত করতে। সেখানে গিয়ে তিনি নবী প্রেমে পাগলপারা হয়ে যান। মদীনার অলি-গলির ধূলোবালিকেও তার নিজের চেয়ে মূল্যবান মনে হয়। মনে হয় এ ধূলোবালি নবী (স.)-এর কদম মোবারক স্পর্শ করেছিল। মদীনার বাতাসে তিনি কান পেতে নবীর কণ্ঠ শুনতে চেষ্টা করেন। মদীনার বাতাসের ইথারে মিশে আছে নবীজীর কণ্ঠ। ব্যাকুল চিত্তে বিগলিত নেত্রে অতি আদবের সাথে তিনি হাজির হন রওজা মুবারকের পাশে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি, আর হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা ভাষার আবরণে বের হয়ে আসে আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ। আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিব আল্লাহ। তিনি মদীনায় কয়েকদিন অবস্থান করে মসজিদে নবুবীতে জামাতে নামাজ আদায় করেন এবং অবসরে ইতিহাস বিখ্যাত ও রসূল (সা.) স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন।

মদীনা সফর শেষ হলে দেশে ফেরার সময় বাকি থাকলে হাজী সাহেবরা আবার ফিরে যান মক্কায়। সেখানে গিয়ে ইবাদতে মশগুল হন, নফল ওমরা ও তওয়াফ করেন। বিদায়ের দিন ব্যথিত চিত্তে তারা শেষবারের মতো কাবা ঘরে ছুটে যান। প্রিয়জনকে ছেড়ে যাবার বেদনায় তাদের হৃদয় ছিঁড়ে যায়। তারা মুলতাজিম (হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মধ্যবর্তী ৬ ফুট জায়গা, এখানে দোয়া কবুল হয়) কে জড়িয়ে ধরে বুক, ডান গাল এবং ডান হাত দিয়ে কাবা শরীফকে স্পর্শ করে মনের শেষ ফরিয়াদ পেশ করেন মহান আল্লাহর কাছে। সময়ের দিকে খেয়াল নেই, মানুষের ধাক্কার দিকে লক্ষ্য নেই সম্মানিত হাজী সাহেবদের। মোয়াজ্জেমের তাড়ায় হুঁশ ফেরে তাদের। অশ্রুসিক্ত চোখে, ভগ্ন হৃদয়ে ঘরে ফেরেন তারা। কাঁধে ব্যাগ তুলে ইসলামের পথে চলার দীপ্ত শপথ নিয়ে পবিত্র মক্কাকে বিদায় জানিয়ে দেশের উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠেন আল্লাহর এ সম্মানিত মেহমানরা। দেশে ফিরে এসে অনেকেই হজ্জের যথার্থ শিক্ষা ধরে রাখেন। তাদের চিন্তা চেতনা, চরিত্র ও কর্মে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।

রাব্বে কারীম আমাদের সকলকে জীবনে অন্তত একবার হলেও তার পবিত্র ঘরে হাজিরা দেবার ও তার হাবীবের রওজায়ে আতহারে সালাম পেশ করার তাওফীক নসীব করুন। আমীন !!!

লেখকঃ
মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সিনিয়র লেকচারার , ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট,
সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটি।
ইমেইলঃ mostafakabir_seu@yahoo.com

অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে মুরাদুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা

» তাপপ্রবাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

» মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

» কুয়েতে সংবর্ধিত হলেন মুরাদুল হক চৌধুরী

» সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঝড়বৃষ্টিতে মৃত বেড়ে ৪

» তাপদাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ

» কুয়েতে প্রবাসী নারীদের সংগঠন উদযাপন করেছে পহেলা বৈশাখ

» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

» মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকায় ‘রেস্টুরেন্ট মনির ভাই’ উদ্বোধন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

হজ্জের আধ্যাত্নিক শিক্ষা ও আবেদনঃ একটি পর্যালোচনা

ধর্মীয় দর্শন ডেস্কঃ পবিত্র হজ্জের সিদ্ধান্ত যখন একজন সম্মানিত বান্দা গ্রহণ করেন তখন তিনি কয়েকটি জিনিস অর্জন করেন। তার সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে তিনি আল্লাহর গোলাম, তিনি কুফরি আচরণ করতে আদৌ প্রস্তুত হন, তিনি হজ্জ না করে ইহুদী নাসারার সমতুল্য হতে রাজি নন। আল্লাহর এ বান্দা যখন ব্যাংকে টাকা দাখিল করেন তখন তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তিনি অর্থ পূজারী নন। তিনি খোদার হুকুমে তার উপার্জিত সম্পদ ব্যয় করতে প্রস্তুত। যেখানে অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর পছন্দ সেখানে তিনি অর্থ ব্যয় করবেন, যেখানে অর্থ ব্যয় আল্লাহর অপছন্দনীয় সেখানে তিনি হাত গুটিয়ে থাকবেন।

যথন তিনি পরিবার পরিজন ছেড়ে ঘর থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে বাইরে পা রাখেন, তখন তিনি মনে মনে এ শিক্ষা নেন যে, হে খোদা!আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য কেবল এ দীর্ঘ সফর নয় বরং সব ধরনের ত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছি। যখন তিনি গোসল করে ইহরামের ধবধবে সাদা চাদর পরিধান করেন ,তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, হে খোদা ! আমি তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে এ হজ্জের এক মাসের জন্য নয় বরং বাকি জীবনটা পবিত্র-পরিচ্ছন্ন হয়ে চলবো।

যখন তিনি ‘‘লাববাইকা আল্লাহুম্মা লাববাইক’’ বলে ইহরাম বাধেন তখন তিনি আল্লাহর গোলাম হিসেবে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) যে আহবান জানিয়েছিলেন,পিতার সে আহবানের বাস্তব সাড়াই হল এ হজ্জ। আর তালবিয়া হল তার মৌখিক হাজিরা। এ থকে তিনি শিক্ষা নেন, হে আল্লাহ!তুমি যখন যে কাজে ডাকবে আমি দ্বিধাহীন চিত্তে, নিঃসংকোচে তখন সে কাজটি করতে প্রস্তুত আছি ।

যখন তিনি হেরেম শরিফে পৌঁছান তখন তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সেই ঘর ,যে ঘর নির্মাণ করেছিলেন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.), পুনঃনির্মাণ করেছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.), এ ঘরের সংস্কারের সর্বশেষ কাজটি ‘‘হজরে আসওয়াদ’’ স্থাপন করেছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। ওই তো সেই কাবা! সেখানে ২ রাকাত নামাজ পড়লে ১ লাখ রাকাত নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। ওই তো ‘‘হজরে আসওয়াদ’’ যা চুম্বন করলে মানুষ পাপমুক্ত হয়। এমন একটি দিন ছিল যখন এ ঘরে নামাজ পড়তে দেয়নি কাফেররা নবী (সা.) কে। নামাজের সিজদার সময় ওরা নবী (সা.) এর ঘাড়ের ওপর উটের নাড়ি-ভূড়ি চাপাত, যা তার জীবনকে দুর্বিসহ করে দিত। ইতিহাস ও নবী (সা.) এর হাজারো স্মৃতি একজন হাজির চোখের সামনে ভেসে ওঠে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। সে অশ্রুর মধ্যদিয়ে তার প্রসারিত দৃষ্টি যখন জমজম কূপের দিকে পড়ে, তখন তিনি হারিয়ে যান ইতিহাসের পাতায়। আল্লাহর জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.) যে কুরবানি করেছিলেন, তা ভেবে তিনি তার জীবনের সঠিক দর্শন খুঁজে পান। যিনি সঠিক ভাবনা ভাবেন তিনিই লাভ করেন সঠিক জীবন দর্শন।

একজন হাজী যখন আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে পৌঁছেন তখন অজুত কণ্ঠের তালবিয়ার সুরের মূর্ছনায় নিজের অবস্থানের কথা তিনি ভুলে যান। লাখ লাখ হাজী অনাবৃত মস্তকে ধবধবে সাদা কাপড়ে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করতে থাকে। এ বিশাল প্রান্তরে এসে তার হাশরের ময়দানের কথা মনে পড়ে যায়। সেখানের জবাবদিহীতার চিন্তায় ভীত বিহবল হয়ে পড়েন তিনি। সত্যিকারের তওবা করে আগামী দিনগুলোতে ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করার শিক্ষা গ্রহণ করেন একজন সম্মানিত হাজী।
একজন সম্মানিত হাজী যখন মীনার কুরবানি গাহে পশু কুরবানি করেন, তখন মূলত তিনি তার ভিতরকার যাবতীয় পাশবিকতাকেও কুরবানি করেন এবং মানবীয় গুণাবলী বিকাশের শিক্ষা নেন। ‘‘ভোগে নয় ত্যাগেই জীবনের সার্থকতা’’ এ জীবন দর্শন তিনি খুঁজে পান কুরবানির মধ্যে।

তিনি যখন পশুর রক্ত প্রবাহিত করেন তখন শপথ পড়েন, ‘‘আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন-মৃত্যু সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য’’ পবিত্র কুরআনের সুরা আনআমের এ শপথ বাক্য পাঠ করে একজন হাজী আল্লাহর দ্বীনের জন্য সব ধরনের ত্যাগ স্বীকারের দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তার শপথ এতটা দৃঢ় ও ব্যাপক যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তিনি নিজের জীবনটাও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।

একজন সম্মানিত হাজী যখন জামরাতে (শয়তানের স্তম্ভে) পাথর নিক্ষেপ করেন তখন তিনি কেবল অভিশপ্ত শয়তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করেন না বরং শয়তানের সকল মত ও পথের বিরুদ্ধেও তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন। তার এ ঘৃণা শিরকের বিরুদ্ধে, তাগুতের (খোদাদ্রোহী শক্তি) বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, মানব রচিত মতবাদের বিরুদ্ধে। মোট কথা তিনি সকল বাতিল মতবাদ ও অপশক্তির বিরুদ্ধে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে আপোষহীন সংগ্রামের সূচনা করেন। তিনি মনে মনে দীক্ষা নেন জীবনের বাকি দিনগুলোতে আর শয়তানের মত পথ অনুসরণ করবেন না, কুরআনের পথ ছাড়বেন না।

এ ভাবে আল্লাহর একজন মেহমান (হাজী সাহেবানকে আল্লাহর মেহমান বলা হয়েছে) প্রতিটি পদে পদে নতুন নতুন জীবন্ত শিক্ষা গ্রহণ করে হজ্জ সমাপ্ত করে যান মদীনায় রসূল (স.)-এর রওজা জিয়ারত করতে। সেখানে গিয়ে তিনি নবী প্রেমে পাগলপারা হয়ে যান। মদীনার অলি-গলির ধূলোবালিকেও তার নিজের চেয়ে মূল্যবান মনে হয়। মনে হয় এ ধূলোবালি নবী (স.)-এর কদম মোবারক স্পর্শ করেছিল। মদীনার বাতাসে তিনি কান পেতে নবীর কণ্ঠ শুনতে চেষ্টা করেন। মদীনার বাতাসের ইথারে মিশে আছে নবীজীর কণ্ঠ। ব্যাকুল চিত্তে বিগলিত নেত্রে অতি আদবের সাথে তিনি হাজির হন রওজা মুবারকের পাশে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি, আর হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা ভাষার আবরণে বের হয়ে আসে আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ। আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিব আল্লাহ। তিনি মদীনায় কয়েকদিন অবস্থান করে মসজিদে নবুবীতে জামাতে নামাজ আদায় করেন এবং অবসরে ইতিহাস বিখ্যাত ও রসূল (সা.) স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন।

মদীনা সফর শেষ হলে দেশে ফেরার সময় বাকি থাকলে হাজী সাহেবরা আবার ফিরে যান মক্কায়। সেখানে গিয়ে ইবাদতে মশগুল হন, নফল ওমরা ও তওয়াফ করেন। বিদায়ের দিন ব্যথিত চিত্তে তারা শেষবারের মতো কাবা ঘরে ছুটে যান। প্রিয়জনকে ছেড়ে যাবার বেদনায় তাদের হৃদয় ছিঁড়ে যায়। তারা মুলতাজিম (হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মধ্যবর্তী ৬ ফুট জায়গা, এখানে দোয়া কবুল হয়) কে জড়িয়ে ধরে বুক, ডান গাল এবং ডান হাত দিয়ে কাবা শরীফকে স্পর্শ করে মনের শেষ ফরিয়াদ পেশ করেন মহান আল্লাহর কাছে। সময়ের দিকে খেয়াল নেই, মানুষের ধাক্কার দিকে লক্ষ্য নেই সম্মানিত হাজী সাহেবদের। মোয়াজ্জেমের তাড়ায় হুঁশ ফেরে তাদের। অশ্রুসিক্ত চোখে, ভগ্ন হৃদয়ে ঘরে ফেরেন তারা। কাঁধে ব্যাগ তুলে ইসলামের পথে চলার দীপ্ত শপথ নিয়ে পবিত্র মক্কাকে বিদায় জানিয়ে দেশের উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠেন আল্লাহর এ সম্মানিত মেহমানরা। দেশে ফিরে এসে অনেকেই হজ্জের যথার্থ শিক্ষা ধরে রাখেন। তাদের চিন্তা চেতনা, চরিত্র ও কর্মে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।

রাব্বে কারীম আমাদের সকলকে জীবনে অন্তত একবার হলেও তার পবিত্র ঘরে হাজিরা দেবার ও তার হাবীবের রওজায়ে আতহারে সালাম পেশ করার তাওফীক নসীব করুন। আমীন !!!

লেখকঃ
মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সিনিয়র লেকচারার , ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট,
সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটি।
ইমেইলঃ mostafakabir_seu@yahoo.com

অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার (বিকাল ৩:০৬)
  • ২১শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: রবি, ২১ এপ্রি.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।