মনোহরদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর মনোহরদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
ভর্তি, ফরম পূরন, নিয়মিত কলেজে উপস্থিত না থাকা এবং কোচিংবাজ শিক্ষকদের কাছ থেকে মাসোয়ারা আদায়, শিক্ষক, অভিভাবক ও গভর্ণিং বডির সদস্যদের সাথে দূর্ব্যবহারসহ বহুবিধ অভিযোগ রয়েছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। যার ফলে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটি আজ হারাতে বসেছে তার পুরনো ঐতিহ্য। ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক কলেজে যোগদান করার পর একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। শিক্ষকরা অধ্যক্ষের অনিয়ম, দূর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাদেরকে শোকজ করা এবং চাকরীচুত করার হুমকি দেন। কলেজের সকল আয়ের অর্থ এককভাবে ভোগ করার জন্য বিভিন্ন উপ কমিটিও বিলুপ্ত করে দেন। অধ্যক্ষের দূর্নীতির বিষয়ে কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ আরতী রাণী রায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে অধ্যক্ষের দূর্ব্যবহার শিকার হন। যা জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
কলেজে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের স্বীকার অর্নাসের শিক্ষকগন। নিয়োগের সময় প্রত্যেক শিক্ষককে সম্মানী হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা থাকলেও গত ১ বছর ধরে কোন শিক্ষককে সম্মানী না দিয়ে অধ্যক্ষ নিজেই তা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন।
বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি থাকলেও ক্লাসে উপস্থিত পাওয়া যায় মাত্র ৫০-৬০ জন। নির্বাচনী পরীক্ষার ফরম পূরনের সময় অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কারণে এসব শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কলেজে উপস্থিতির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেষ্ঠ্য শিক্ষক জানান, শিক্ষকদের সাথে রূঢ় আচরণ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা অধ্যক্ষের নিয়মিত স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও আয়ের সকল অর্থ কোন হিসাব-কিতাব ছাড়া নিজে আত্মসাৎ করছেন। হয়রানীর ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর এক ছাত্র জানায়, উপবৃত্তির জন্য টাকা নেয়ার কোন নিয়ম না থাকলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০-৪০০ টাকা বাধ্যতামূলক নেয়া হচ্ছে।
মনোহরদী ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রয়াত মো. কাজী নজরুল ইসলাম বাদশার ছেলে অ্যাডভোকেট কাজী শরিফুল ইসলাম শাকিল বলেন, কলেজে আমার বাবার প্রাপ্য দেড় লক্ষাধিক টাকা অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক দেয় দিচ্ছি বলে দীর্ঘদিন ধরে ঘুরাচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি অ্যাড. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন আমার বাবার টাকা দেয়ার জন্য লিখিতভাবে নির্দেশ দিলেও অধ্যক্ষ তা মানছেন না।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. গোলাম ফারুক জানান, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার কারণে কলেজে নিয়মিত ক্লাস করানো সম্ভব হয়না। আয়-ব্যয় সহ বিভিন্ন কাজের কোন উপ কমিটি না থাকা এবং উপবৃত্তির নামে টাকা নেয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ এবং দূর্ণীতির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জানান, অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয় সম্পর্কে আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।