আব্দুস সাত্তার,টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর,কালিহাতী,বাসাইল,নাগরপুর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু,গরু,ছাগল, হাঁসমুরগি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। লক্ষাধিক মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
যমুনার পানি কমলেও বন্যায় যমুনা নদী তীরবর্তী ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা, নিকরাইল, গোবিন্দাসী ইউনিয়ন ও ভূঞাপুর পৌরসভার কয়েকটি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ গরু-ছাগল, হাস-মুরগি নিয়ে উঁচু স্থান ও বেড়িবাধের উপর আশ্রয় নিয়েছে।কিন্তু বেড়িবাধ ভাঙ্গার আশংকায় সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ আসছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থেকে। ফলে বাঁধে আশ্রয় নিতে পারছে না বন্যা দুর্গতরা। বন্যায় কবলিত ছিন্নমূল পরিবারগুলো অনাহার-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। গাবিন্দাসী গরুর হাট গোবিন্দাসী বাজার,গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে।
নাগরপুর উপজেলায় যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাটসহ প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্ধি পরিবারের লোকজন তাদের গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও তাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বর্ষার পানিতে উপজেলা সদর ইউনিয়ন বটতলা থেকে শাহজানী ভায়া চৌহালী (জার্মান প্রজেক্ট) সড়ক, নাগরপুর-সলিমাবাদ (বেকড়া) সড়ক, নাগরপুর ধুবুড়িয়া, ভাদ্রা, দপ্তিয়র সড়ক, উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বাসাইল উপজেলার ঝিনাই নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনের কারনে কাঞ্চনপুর, হাবলা ও কাশিল ইউনিয়নের কাশিল, দাপনাজোর, কামুটিয়া, নথখোলা, থোপিয়া, বালিনা ভৈরপাড়া, আদাজানের মানিকচর, কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া, সোনারচরসহ বিভিন্ন এলাকার নদী তীরবর্তী প্রায় আড়াই শতাধিক ভিটা-বাড়ি বিলিন হয়ে গেছে। কাজিরাপাড়ার কৃষক ওহাব আলী বলেন, আমি ৩টি ঘর সরিয়ে নিয়েছি। আমার ভিটা-বাড়ির সম্পর্ণ জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এখন থাকার জাগয়া টুকুও নেই। ঘর-ভিটা হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব। কাশিল ইউনিয়নের মেম্বার ছানোয়ার খান বলেন, গত কয়েকদিন যাবৎ কাশিল, কাঞ্চনপুর, হাবিলা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী অনেক ঘর-বাড়ির ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার ঘর-ভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কালিহাতী উপজেলার যমুনা ও লৌহজং নদীর তীরবর্তী এলাকায় শতশত ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।অব্যহত নদী ভাঙ্গনের ফলে নতুন নতুন জনপদ ভাঙ্গনের আশঙ্কা রয়েছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
প্রকাশ,উপজেলার পশ্চিমে দুর্গাপুর, গোহালিয়াবাড়ী, সল্লা ইউনিয়ন এবং এলেঙ্গা পৌরসভার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা ও লৌহজং নদী। এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই উজান থেকে নেমে আসা ¯্রােতে উপজেলার বেলটিয়া, শ্যামসৈল, আলীপুর, আফজালপুর, বিনোদ লুহুরিয়া, বিয়ারা মারুয়া, কুর্শাবেনু, বেনুকুর্শা, যোকারচর, মীর হামজানি, হাতিয়া, মগড়া, টিকুরিয়াপাড়া ও বাঁশি গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া প্রতিদিনই নতুন নতুন বাড়ি ঘর ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে অসংখ্য পরিবার। নদী ভাঙনে সহায় সম্বল সবকিছু হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়িতে কিংবা খোলা জায়গায়।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুুব হোসেন জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে নিদেশনা দেয়া হয়েছে বন্যায় কবলিত এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেয়া ও প্রয়োজনে সাহায্য সহযোগিতার করার জন্য।
টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোডের নিবার্হী প্রকৌশনী শাহজাহান সিরাজ জানান,বর্তমানে যমুনার নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধলেশ্বরী নদীর পানির বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনরোধে আমি এবং আমার অফিসাররা প্রতিনিয়তই কাজ করেছেন।