প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
উদ্বোধনের সময় দেওয়া ভাষণে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী প্রচারে এই মসজিদগুলো ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইসলামের মর্মবাণী যেন এ দেশের মানুষ জানতে পারে, বুঝতে পারে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, স্ব স্ব ধর্ম যত্নসহকারে লালন-পালন করি এবং সংরক্ষণ করি। ইসলাম আমাদের সেই মানবতার শিক্ষাই দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে সঠিক ইসলামি মূল্যবোধের চর্চা ও উন্নয়ন এবং ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যেই আমরা প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এ-সংক্রান্ত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
‘ইসলামের মর্মবাণী যেন এ দেশের মানুষ জানতে পারে, বুঝতে পারে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, স্ব স্ব ধর্ম যত্নসহকারে লালন-পালন করি এবং সংরক্ষণ করি। ইসলাম আমাদের সেই মানবতার শিক্ষাই দিয়েছে।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি উন্নত মসজিদ নির্মাণের
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকার সারা দেশে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্বে এ ধরনের প্রকল্প নজিরবিহীন। পদ্মা বহুমুখী সেতুর পর নিজস্ব অর্থায়নে এটা সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প।
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়িত করেছে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর।
চারতলাবিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অন্যদিকে, তিনতলাবিশিষ্ট মডেল মসজিদগুলোয় একত্রে ৯০০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। গণভবন থেকে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ পিএমও এবং গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ইসলাম প্রচারের পথিকৃৎ’ শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
সরকারপ্রধান অনুষ্ঠান থেকে খুলনা জেলা মডেল মসজিদ, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ এবং সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মডেল মসজিদের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ প্রকল্পের আওতায় জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা এবং উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকায় তৃতীয় তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। মূল মসজিদটি হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। নারীদের জন্য পৃথক নামাজকক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের নামাজকক্ষে সহজে প্রবেশের সুবিধার্থে র্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
চারতলাবিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অন্যদিকে, তিনতলাবিশিষ্ট মডেল মসজিদগুলোয় একত্রে ৯০০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
এ ছাড়া মসজিদে পবিত্র কোরআন চর্চার জন্য হিফজখানা, হজযাত্রী ও ইমামদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুসল্লিদের জ্ঞান আহরণের জন্য মসজিদে নববির আদলে ইসলামিক লাইব্রেরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে পৃথক ভবনে ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে থাকবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অফিস, কনফারেন্স হল, গবেষণাকক্ষ, প্রতিবন্ধী কর্নার, হজযাত্রীদের প্রাক্-নিবন্ধন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা ইত্যাদি।
মডেল মসজিদ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) শফিক তালুকদার গতকাল বুধবার সাভার উপজেলা মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে এ প্রকল্পে মসজিদগুলোর অবস্থান এবং নির্মাণশৈলী এবং সরকারের ব্যয়ের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, দেশে যুগান্তকারী ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৫০টির মতো মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও ১০০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। তিনি জানান, বিশ্বে এই প্রথম কোনো সরকার একসঙ্গে এই বিপুলসংখ্যক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে।
এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে শফিক তালুকদার বলেন, ইসলামি মূল্যবোধ ও মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের প্রচারণার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের মূল বাণী প্রচার করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
যে ৫০টি মডেল মসজিদ নির্মিত হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ঢাকার সাভার উপজেলায়, ফরিদপুরের মধুখালী ও সালথা উপজেলায়, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও কুলিয়ারচর উপজেলায়, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলায়, শরীয়তপুর সদর ও গোসাইরহাট উপজেলায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও কাহালু উপজেলায়, নওগাঁর সাপাহার ও পরশা উপজেলায়, সিরাজগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলায়, পাবনার চাটমোহর উপজেলায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায়, দিনাজপুরের খানসামা ও বিরল উপজেলায়, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায়, পঞ্চগড় সদর ও দেবীগঞ্জ উপজেলায়, রংপুর জেলা, সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলায়, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায়, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায়, ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও তারাকান্দা উপজেলায়, চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলায়, জামালপুর সদর ও ইসলামপুর উপজেলায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বিজয়নগর উপজেলায়, ভোলা সদর, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায়, কুষ্টিয়া সদর, খুলনা জেলা, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায়।
সূত্র, প্রথম আলো