ডেস্ক নিউজ: ‘শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত আছেন, ততদিন পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকবে’- আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতার এই বক্তব্য স্বীকৃত স্বৈরাচারী সরকারেরই যথার্থ প্রতিধ্বনি। এই বক্তব্যে গণতন্ত্রকে চিরদিনের জন্য নির্বাসনে পাঠিয়ে বাকশাল পুরোদমে চালু রাখার ইঙ্গিতবাহী। তারা যে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চায়, তার বক্তব্য সেটিরই বহি:প্রকাশ।’
বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘দেশজুড়ে বেকারত্ব, রাজনৈতিক মতপ্রকাশে স্বাধীনতাহরণ, লুটপাট ও দমননীতির বেপরোয়া উত্থানকে আরও দীর্ঘায়িত করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনি কারাবাসে আটকে রেখে তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে তাঁর অসুস্থতা তীব্র থেকে তীব্রতর করার এক ভয়ঙ্কর মাস্টারপ্ল্যানের যে অংশ, তা হানিফ সাহেবের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে মানুষের উদ্বিগ্ন মনকে অন্যদিকে নিবদ্ধ করার জন্যই সরকারের নানা কারসাজির মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্ভট, ভুয়া ও হাস্যকর প্রশ্ন তোলা আরেকটি কারসাজি। হানিফ সাহেবের বক্তব্যে কী প্রমাণ হলো আপনারা সদলবলে ভারতে গিয়েছিলেন কী ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেনদরবার করতে? বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার জেনে গেছে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ২০/২২টির বেশি আসন পাবে না। তাই একতরফা নির্বাচনের পক্ষে নাক গলাতে তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। দেশকে গণতন্ত্রহীন করে আওয়ামী সরকার সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে গোটা দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে। হানিফ সাহেবের বক্তব্যে জাতির সামনে ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসলো, গণতন্ত্র বিধ্বংসী আওয়ামী লীগের পকিল্পনার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। কিন্তু জনগণ এবার আর বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সরকারি ষড়যন্ত্রের যেন শেষ নেই। তারেক রহমানকে নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে। সমালোচনার মুখে তিনি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট দেয়া সকল ডকুমেন্টস সরিয়ে নিয়ে এখন বলছেন তার ফেসবুক হেকড হয়েছে। মূলত প্রশ্নবিদ্ধ কাগজপত্র উপস্থাপন করে তিনি সবার কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছেন।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্রিটেনের আইন মোতাবেক সেখানে বসবাস করছেন যে কথাটি আমি এবং আমার দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে বার বার উপস্থাপন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র ও তদবির করে ব্যর্থ হয়ে তাঁর কেবিনেটের প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ কাগজপত্র উপস্থাপন করাচ্ছেন। দেশের মানুষের সমালোচনা ও প্রত্যাখানের মুখে শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক থেকে উপস্থাপিত কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছেন। বিনা ভোটের সরকারকে সবসময় জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েই চলতে হয়। আমি পরিষ্কার ভাষায় আবারও বলতে চাই- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেননি। যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে শত শত দেশের নাগরিকরা যেভাবে পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম নিয়ে অবস্থান করেন সেভাবেই তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের হোম ডিপার্টমেন্টে পলিটিক্যাল অ্যাসাইমেন্টের জন্য তাঁর পাসপোর্টটি জমা দিয়েছেন, সারেন্ডার করেননি।’
রিজভী আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার কাছে জানতে চাই-আপনি কীভাবে দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছিলেন? রাজনৈতিক আশ্রয়ে কীভাবে ছিলেন? আপনার ছোট বোন শেখ রেহানা কীভাবে ব্রিটেনে অবস্থান করেছিলেন? গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেখতে পেলাম। জাতির সামনে এর জবাব দিবেন কী?’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সস্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।