আব্দুল্লাহ আল মামুন, পার্বতীপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে হাতুড়ে ডাক্তারের ভূল চিকিৎসার কারনে মাদ্রাসা ছাত্রী মিনা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।
সে মোমিনপুর ইউনিয়নের হয়বতপুর দালালিপাড়া গ্রামের মোঃ রাজুর মেয়ে । প্রায় দেড় বছর আগে পায়ের গোড়ালীতে ছোট একটি টিউমার হয়েছিল।
সে স্থানীয় নীলকুঠির ডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত। পায়ের টিউমারটি দেখে মিনার পরিবারের কেউ রাজী না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকের দাবী নিয়ে মাদ্রাসার সুপার হোমিও ডাক্তার আনিসুল হক জোরপূর্বক তাকে দোকানে নিয়ে অপারেশন করে। যাতে ব্যবহৃত হয় ব্লেড। অপারেশন শেষে ৭টি সেলাই দেন তিনি। রক্ত বন্ধ না হলে মিনাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে বিভিন্ন পরীক্ষার নিরীক্ষার পর , হোমিও ডাক্তার কর্তৃক অপারেশনকৃত স্থানটি সেপটিক হয়ে ক্যান্সারের রুপ নিয়েছে বলে জানান হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক।
এরপরও তারা মিনাকে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার জন্য ছুটোছুটি করে। কিন্তু অর্থাভাবে মিনার সঠিক চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। ক্রমে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে সে। অবশেষে মিনার মা মর্জিনা বেগম হোমিও ডাক্তার আনিসুল হকের বিচারের দাবী জানিয়ে গত ১৩ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন জানান।
গত ১৭ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযুক্ত হোমিও ডাক্তার আনিসুল হক কে ডেকে নিয়ে মৌখিক ভাবে শাসিয়ে ছেড়ে দেন এবং সাত দিনের মধ্যে ঘটনার নিষ্পত্তির জন্য ৬নং মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আঃ ওহাবকে দায়িত্ব দেন। সাত দিনের স্থলে ১৪ দিন গত হলেও কোন পদক্ষেপ কেন নেয়া হয়নি জানতে চাইলে গতকাল বুধবার দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আঃ ওহাব জানান, মেয়েটি অসুস্থ্য হয়ে দিনাজপুরে চিকিৎসাধীন । সুস্থ্য হলে শালিস করে সমাধা করা হবে।
অসুস্থ্য মিনার কাছে অবস্থানরত মিনার খালা মনোয়ারা বেগম জানান, অপারেশনের জন্য ৫ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। এর মধ্যে ৩ ব্যাগ ম্যানেজ হয়েছে। এখনো দুই ব্যাগ রক্ত পাওয়া যায় নাই। রক্ত ও ৫ হাজার টাকার টাকার অভাবে ঔষধ কিনতে না পারায় গতকাল বুধবার অপারেশন হয় নাই। তবে মেয়ের অবস্থা খুব খারাপ।
অভিযুক্ত হোমিও ডাক্তার আনিসুল হক জানান, আমি একজন গভর্মেন্ট রেজিষ্টার্ড ডাক্তার। আমাকে সরকার চিকিৎসা করার পারমিশন দিয়েছে তাই চিকিৎসা করেছি। অপারেশন করার পারমিশন আছে কিনা জানতে চাইলে এড়িয়ে যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- দেশে আইন আছে, আইনে আমার যা হবার হবে।
এদিকে মিনাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে মর্জিনা বেগম অন্যের কাছে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে বর্তমানে অর্ধাহারে অনাহারে মিনাদের দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুষ্ট চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে কিশোরী মিনা। অসহায় মিনার মা মর্জিনা বেগম কান্নাকাটি করে সাংবাদিকদের জানায়, আমার মৃত্যু পথযাত্রী মেয়েকে বাঁচান। আমার মেয়ে খুবই অসুস্থ্য। ডাক্তার বলেছে তার পা কেটে ফেলতে হবে। সে হয়তো বাঁচবে না, কিন্তু আমি ঐ হাতুড়ে ডাক্তারের শাস্তি দেখতে চাই। আর যেন কোন মেয়ের এ রকম না হয়। তিনি মেয়েকে বাচাঁনোর জন্য সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সাহায্যের আকুল আবেদন জানান।