সংসদীয় কমিটি সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিক পাঠানোর অব্যাহত রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে, তারা অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানো নিয়ে আলোচনা হয়।
কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো শুরুর পর থেকে সেদেশে গৃহকর্তার হাতে নানা ধরনের নির্যাতনের খবর আসতে থাকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল না।
এ বছর জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে আসার পর তাদের মুখে সেখানে যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে আসার পর বিভিন্ন নারী সংগঠন সরব হয়।
রক্ষণশীল দেশটিতে নারী কর্মী না পাঠানোর দাবি উঠেছে জোরেশোরে ওঠার পর সম্প্রতি জাতীয় সংসদে আলোচনায় বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সৌদি আরবে আর কোনো নারী গৃহকর্মী না পাঠানোর দাবি তোলেন।
তবে সংসদীয় কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সোমবারের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, “নারী শ্রমিক পাঠানোর বন্ধের পক্ষে আমরা নই। আমরা মনে করি, তাদের পাঠানো অব্যাহত রাখতে হবে।
“তবে যেসব অভিযোগ আছে সেগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। নারীশ্রমিকদের নিরাপত্তার উপর জোর দিতে হবে।”
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, “সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানোর বন্ধ করা-না করার বিষয় দুটি পক্ষ রয়েছে বলে জানানো হয়। একটি পক্ষ বন্ধ করার পক্ষে। আবার অনেকে এটা চালু রাখতে বলছে।
“যারা নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে চাচ্ছেন, তাদের একটি অংশের অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও কমিটির বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।”
২০১৪ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত ৭৪টি দেশে কাজ নিয়ে আট লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৩ জন নারীকর্মী গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ জন।
সৌদি আরবে নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের খবরে সরকার ‘চিন্তিত’ জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ সম্প্রতি সংসদে বলেছিলেন, ঢাকায় সৌদি আরব দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের যিনি রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তাকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি তোলার জন্য।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, সৌদি আরবে কর্মরত গৃহকর্মী সংক্রান্ত অভাব-অভিযোগ শুনতে প্রবর্তিত অনলাইন ব্যবস্থা ‘মুসানেদ’ (সহায়তা) ২০১৫ সাল থেকেই কার্যকর রয়েছে। এই ব্যবস্থায় নির্যাতিত গৃহকর্মীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারে। তবে, এই ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট প্রসার পায়নি। এটার প্রসার ঘটলে গৃহকর্মীরা এক ধরনের সুরক্ষা পেতে পারেন।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে কর্মরত নির্যাতিত নারীকর্মীদের নির্যাতনরোধে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে নারী শ্রমিকদের নির্যাতন রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে গত ১০ বছরে ৪০ হাজার লাশ বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। লাশ পরিবহন ও দাফনে ৯৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে ৭২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
বৈঠকে কমিটি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ব্যাংকের জনবল বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
বৈঠকে বিদেশ ফেরত কর্মীদের বিমান বন্দরে হয়রানি দূর করার বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, মৃনাল কান্তি দাস, আয়েশা ফেরদাউস, পংকজ নাথ ও ইকবাল হোসেন অংশ নেন।