মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সাথে সাক্ষাতের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “উনি (মন্ত্রী) বলেছেন, সভা করার ব্যাপারে সাধারণত কোনো আপত্তি নাই। এ ব্যাপারে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সাথে আজকেই উনি কথা বলে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা অপেক্ষা করব তার কথার জন্য।”
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, জনসভার ব্যাপারে সরকারের কোনো আপত্তি নেই। এর অনুমতি যেহেতু পুলিশ কমিশনার দেন, তার কাছেই তিনি জানতে চাইবেন, সমাবেশে কোনো অসুবিধা আছে কি না।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ১৯ মার্চ দুই দফা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি বিএনপি।
এরপর সমাবেশের জন্য ২৯ মার্চ নতুন তারিখ ঠিক করে গত ১৯ মার্চ আবারও ঢাকা মহানগর পুলিশ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দেয় বিএনপি। কিন্তু এবারও অনুমতি না পেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে প্রবেশ করে। প্রতিনিধি দলের বাকি দুই সদস্য হলেন ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বেরিয়ে এসে নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার জন্য আমরা কয়েকবার তারিখ ঘোষণা করেছি। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় করতে পারিনি। আমরা আজ এসেছি ২৯ তারিখের জনসভাটি করার জন্য কথা বলতে।”
অনুমতির ব্যাপারে আশাবাদী কিনা জানতে চাইলে এই বিএনপি নেতা বলেন, “দেখেন, আশাবাদী তো সব মানুষের হওয়া উচিৎ। তবে নিরাশার অনেক ঘটনা আমাদের আছে। আমরা আরও নিরাশ হবে এটা আশা করি না। কিন্তু যে পর্যন্ত না ইতিবাচক ফল পাই, সে পর্যন্ত খুব বেশি পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না।”
আরেক প্রশ্নে নজরুল বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যে রেসপন্স, তা কোয়াইট পজেটিভ মনে হয়েছে। তবে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিম খানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আছেন নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে।
তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, গণ অনশন, স্বাক্ষর সংগ্রহ ও স্মারকলিপি পেশের মত কর্মসূচি পালন করে আসছে।
এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি ইতোমধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে পারলেও রাজধানীতে এখনও অনুমতি মেলেনি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন আসার পর এই প্রথম কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বিএনপি নেতারা সচিবালয়ে গেলেন।
নজরুল বলেন, মহানগর পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অধীনে বলেই সরকারের সহযোগিতা পাওয়ার প্রত্যাশায় তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গেছেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “জনসভার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। অনুমতির দায়িত্ব পুলিশ কমিশনারের। জনসভার নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও তার। কাজেই তিনি যখন মনে করেন যে, এখানে আশঙ্কা থেকে যায় কোনো কিছুর, তখনই তিনি স্থান পরিবর্তন কিংবা তারিখ পরিবর্তনের কথা বলেন কিংবা অন্য কোনো জায়গায় করার কথা বলেন।
“আমাদের পুলিশ কমিশনার যদি মনে করেন যে ২৯ তারিখ কোনো অসুবিধা নাই তাদের সভাটি করার জন্য, তখন তিনি সেই ব্যবস্থা নেবেন। আমাকে তারা অনুরোধ করেছেন একটু ভেবে দেখার জন্য। আমি নিশ্চই সংশ্লিষ্ট যারা তাদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের কাছে জানতে চাইব- অসুবিধাটা কোথায় এবং অসুবিধা আছে কিনা।”
বিএনপিকে ঢাকায় জনসভা করতে দেওয়া হচ্ছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি সভা করছে। সভা একদম করছে না সেটা নয়। কোনো সময় স্থান পরিবর্তন হচ্ছে কিংবা সময় একটু পরিবর্তন হচ্ছে। সভা তারা করছেন তো। এখানে যে দেয়া হচ্ছে না সেটা কথা নয়।”
মন্ত্রী বলেন, “আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব। … তারা যদি মনে করেন যে অসুবিধা নাই, তারা দেবেন।’’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনসভা ছাড়াও বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার- হয়রানি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।
“আমরা বলেছি, ভাই আমাদেরকে গ্রেপ্তার করেন অসুবিধা নাই। কিন্তু সাধারণ কর্মী ও নারী কর্মীদের এত বেশি গ্রেপ্তার করছে যে তারা কষ্ট পাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে বলেছি আমরা। উনি বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন। বলেছেন, সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন, যাতে এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমাদের না থাকে।”
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ছিল, আমরা তাদের নেতা-কর্মীদের অযথা গ্রেপ্তার করছি। আমরা বলেছি, ভিডিওর মাধ্যমে যাদেরকে সম্পৃক্ত পেয়েছি কিংবা যাদেরকে তাৎক্ষণিক কোনো অবস্থায় পেয়েছি, তাদের পুলিশ ধরেছে। কোনো অভিযোগ নেই কিংবা অপরাধ করে নাই- এমন কাউকে সাধারণত আমরা গ্রেপ্তার করি নাই। আপনাদের (বিএনপি) কাছে খবর জানা থাকলে জানাবেন।”
ঢাকায় বিএনপির কোনো জনসভায় বিশৃঙ্খলা হযেছে- এমন কোনো উদাহরণ মনে পড়ছে কি না, তা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান একজন সাংবাদিক।
উত্তরে কামাল বলেন, “এটা আসার সময়, যাওয়ার সময় নানাভাবেই হয়। এটা কমিশনার সাহেব জানেন, তিনি এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এখন আপনারা অন্য ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন… যথেষ্ট প্রশ্ন হয়েছে।”
বৈঠকে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কিনা- তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তারা বলেছেন, কারাগারে যে ই- দেওয়া হচ্ছে, তাতে উনারা সন্তুষ্ট। তিনি যেভাবে আছেন… আমরা সব কিছুর ব্যবস্থা করেছি।”
সূত্র, bangla.bdnews24.com