ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন যে তাঁর সরকারের কাছে থাকা সুভাষ চন্দ্র বসু সংক্রান্ত সমস্ত অতি গোপনীয় ফাইল প্রকাশ করা হবে। গবেষকরা মনে করেন এইসব গোপন নথি প্রকাশ করা হলেই জানা যাবে যে সত্যিই সুভাষ চন্দ্র বসু তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন কি না।
দীর্ঘদিন ধরে এই নথি প্রকাশের দাবী উঠলেও এতদিন সব সরকারই তা নাকচ করে দিয়েছে। আজ বসু পরিবারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার পরে মি. মোদী এই কথা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে থাকা সুভাষ চন্দ্র বসু সংক্রান্ত অতি গোপনীয় একশোরও বেশী ফাইল জনসমক্ষে আনা হবে ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে। ওই দিন সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী।
এই অতি গোপনীয় ফাইলগুলি প্রকাশ করার দাবীর পাশাপাশি গবেষকদের আরও দাবী ছিল যে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশের কাছেও সুভাষ বসুকে নিয়ে অনেক গোপন তথ্য রয়েছে, সেগুলোও প্রকাশ করার উদ্যোগ নিক ভারত।
নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, সেই উদ্যোগও শুরু হবে রাশিয়ার কাছে ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিক অুনরোধ জানানোর মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সুভাষ বসুর আত্মীয় সুগত বসু বিবিসিকে বলেন, “নরেন্দ্র মোদীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কেন ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে – কেন এক সপ্তাহের মধ্যেই ফাইলগুলি প্রকাশ করা যাবে না, সেটা বুঝলাম না।‘’
তৃণমূল কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য সুগত বসু নিজে অবশ্য আজকের পারিবারিক প্রতিনিধিদলে ছিলেন না। একজন ঐতিহাসিক হিসাবে সুগত বসু বারে বারেই বলে এসেছেন যে তিনি এমন কোনও প্রমাণ বা নথি পান নি, যা থেকে মনে করা যেতে পারে যে তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনার পরেও সুভাষ চন্দ্র বেঁচে ছিলেন।
তবে কয়েক সপ্তাহ আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে থাকা সুভাষ বসু সংক্রান্ত কিছু গোপন নথি প্রকাশের পরে বসু পরিবারের সদস্যরা দাবী করেছিলেন যে সুভাষ চন্দ্র যে ওই দুর্ঘটনায় মারা যান নি এবং অন্তত ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন, সেই প্রমাণ রাজ্য সরকারের নথিগুলিতে আছে।
ওই নথি প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বি জে পি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপের মুখে ফেলে দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
কারণ ক্ষমতায় আসার আগে একাধিকবার নিজেকে সুভাষ চন্দ্রের অনুগামী বলে ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন সুভাষ বসু সংক্রান্ত সমস্ত গোপন নথি তিনি প্রকাশ করবেন যদিও সেই উদ্যোগ তাঁর সরকার নিচ্ছিল না যতদিন না তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তাদের হাতে থাকা তথ্য প্রকাশ করেছে।
গবেষকেরা মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো আর রিসার্চ এন্ড অ্যানালিসিস উইং – বা ‘র’-য়ের কাছে থাকা ফাইল প্রকাশ পেলেই জানা যাবে যে সুভাষ চন্দ্র সত্যিই ১৯৪৫ সালে তাইহোকুতে একটি কথিত বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন কি না।
তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের জট খোলার জন্য ভারতে একাধিক তদন্ত কমিশন তৈরি হয়েছিল – যার প্রথমটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুভাষ বসুর ঘনিষ্ঠ শাহনেওয়াজ খান। সেই কমিটি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তত্ত্বই মেনে নিয়েছিল – যাতে সায় ছিল জহরলাল নেহরুর। যদিও ওই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন বসু পরিবারের প্রতিনিধি।
সর্বশেষ যে বিচারবিভাগীয় কমিশন তৈরি হয়েছিল, সেই মূখার্জী কমিশন অবশ্য সাত বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছিল যে তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান নি সুভাষ চন্দ্র। কিন্তু তারপরে তাঁর কি হয়েছিল, সেটা জানতে পারে নি এই কমিশন। তবে মুখার্জী তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণ করে নি ভারত সরকার।