সিলেট প্রতিনিধিঃ বাঁশের বেড়ায় ঝুলছে পুঁটি মাছ। মাঁচা ভর্তি চান্দা, চিংড়ি, বাইম, বোয়াল। রোদে শুকিয়ে পরিণত হচ্ছে শুটকিতে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই মাঁচা ভর্তি শুটকি।
এ দৃশ্য দেখা যায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের ‘শুটকির গ্রাম’ খ্যাত মাহতাবপুরে। যে গ্রামের বাতাসেও শুটকির ঘ্রাণ।
এখানকার অধিকাংশ লোকজন শুটকি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আশ্বিন থেকে ফাল্গুন। এই সময়টি শুটকি ব্যবসায়ীদের স্বর্ণকাল। বাজার কিংবা হাওর থেকে কাঁচা মাছ কিনে রোদে শুকিয়ে শুটকি উৎপাদন করেন ব্যবসায়ীরা। এসব শুটকি বিক্রি করেন সিলেট নগরীর মাছিমপরি আড়তে।
সরেজমিন দেখা যায়, জমির ওপরে মাঁচা ভরা শুটকি। প্রতিটি খালি জমিতে বাধা মাঁচা। শুটকি পাহারা দেওয়ার জন্য রয়েছে ঘর। এছাড়া বৈরী আবহাওয়া বা হঠাৎ বৃষ্টি থেকে শুটকি সুরক্ষায় মাঁচার সঙ্গে ঘর তৈরি করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, সব ধরনের মাছের শুটকি উৎপাদন করেন তারা। তবে বাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে পুঁটি, চান্দা, চিংড়ি, বাইম, বোয়াল, গজারসহ বিভিন্ন মাছের শুটকি উৎপাদন হয়। পাইকারি দরে কেজি প্রতি পুঁটি মাছ ২৫০-৩০০, চান্দা ২৫০-২৮০, চিংড়ি ৪শ’ বাইম ৮০০-৯০০ এবং বোয়াল মাছের শুটকি কেজি হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।
মাহতাবপুর নয়াবাজার এলাকার মো. ছায়েদ আহমদ অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, আশ্বিন থেকে ফাল্গুন এই ছয়মাস শুটকি উৎপাদন হয়। রোদ থাকলে সপ্তাহে দুই বার শুটকি উৎপাদন করে আড়তে নিয়ে বিক্রি করা যায়।
তিনি বলেন, নিজস্ব জায়গা না থাকায় মাঁচা তৈরি করতে ৬ মাসের জন্য ১২ হাজার টাকায় এক কেদার (৩০ শতক) জায়গা ভাড়া নেন।
গ্রামের শুটকি ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমান, শফিকুর রহমান, জাকির হোসেন, আব্দুল মান্নান, কালা মিয়া ও আনোয়ার মোল্লাসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শুটকি ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তারা। এই ব্যবসায় লাভ থাকলেও পুঁজির অভাবে সম্ভব হয় না।
ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, তাদের অনেকে যৌথভাবে শুটকি ব্যবসা করেন। বছরে ছয় মাস ব্যবসা হয়। বাকি ছয় মাস ভিন্ন পেশায়। সিলেটের বাজারে এই গ্রামের উৎপাদিত শুটকি সবচেয়ে বেশি বিক্রয় হয় বলে দাবি করলেন শুটকি ব্যবসায়ীরা।