সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি, সিদ্ধিরগঞ্জের একটি গ্রামে ১১ বছরের এক শিশুকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের শিকার হয়েছে একাধিকবার । যে বাসায় এই ঘটনা সে বাসার বাড়িওয়ালাকে অভিযোগ দিলে তিনি ‘কঠিন ব্যবস্থা নেবার’ আশ্বাস দিয়েছিলেন শিশুটির অসহায় পরিবারকে। তবে সুযোগ বুঝে দিন কয়েক পরে নিজেও ব্লাকমেইল করে ধর্ষণ করেছে শিশুটিকে!
এর আগে প্রথমদফায় এই অমানবিক ঘটনার পুরো দৃশ্য টিটু নামের এক ধর্ষক তার মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে রেখেছেন বলে জানিয়েছে ধর্ষণের শিকার শিশুটি ও তার পরিবার ।
ধর্ষণের শিকার শিশুটি জানান, ১০ দিন আগে তার বড় বোন কাকলীর বাড়িতে বেড়াতে আসে। আসার পর থেকে তাদের পাশের ঘরের ভাড়াটিয়া টিটু তাকে বিভিন্নভাবে কু-প্রস্তাব দিত। বোন কাকলী আদমজী ইপিজেড-এ একটি গার্মেন্টে চাকরি করে। সকালে কর্মস্থলে চলে যাওয়ার সুযোগে ১১ই মে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে তাকে বাসায় একা পেয়ে হাত ও মুখ বেঁধে কয়েক দফায় ধর্ষণ করে টিটু। পরে ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে ভয়ভীতি দিয়ে আরো কয়েকবার ধর্ষণ করে।
আকস্মিক এই ঘটনায় প্রায় বাকরুদ্ধ শিশুটি সেই অবস্থায় সারাদিন ঘরে পড়ে থাকে অসুস্থ্য অবস্থায়। সন্ধ্যায় বোন বাসায় ফিরলে বিষয়টি বাড়ির মালিক আলাউদ্দিনকে জানানো হয়। বাড়ির মালিক ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেবার কিছুক্ষণ পর কিশোরীর ঘরে গিয়ে বিষয়টি যাতে কেউ না জানে সেজন্য হুমকি দেয়। না হলে সে টিটুর কাছ থেকে ভিডিও নিয়ে ছড়িয়ে দেবে বলে জানায়। একপ্রকার লোকলজ্জা আর বাড়ির মালিকের রক্তচক্ষুর ভয়ে দরোজা বন্ধ করেই দিন রাত কাটে দুই বোনের। পরে একদিন সুযোগ বুঝে বাড়ির মালিক আলাউদ্দিনও ধর্ষণ করে শিশুটিকে।
মঙ্গলবার বিকালে পুলিশের উপস্থিতিতে ধর্ষিতা কিশোরী ও এক ধর্ষকের স্ত্রী মুন্নি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ঘটনাটি জানিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাগলাবাড়ী এলাকায় আলাউদ্দিনের বাড়িতে। ধর্ষকরা হলো- মিজমিজি পাগলাবাড়ী এলাকার মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন ও তার ভাড়াটিয়া চাঁদপুর জেলার মতলব থানার মুক্তিকান্দি গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে টিটু।
এ ঘটনায় প্রাথমিক অভিযোগ পাবার পরই পুলিশ মঙ্গলবার বিকেলে বাড়িওয়ালা আলাউদ্দিন ও ভাড়াটিয়া ধর্ষক টিটুর স্ত্রী মুন্নিকে আটক করেছে।
ধর্ষণের শিকার ওই শিশুর জবানবন্দী অনুযায়ী সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. সরাফত উল্লাহ সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানিয়েছে , শিশুটির বড়বোন মিজমিজি পূর্বপাড়ার আলাউদ্দিন মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ৬-৭ দিন আগে সে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসে। একই বাড়ির অপর ভাড়াটিয়া টিটু গত ১১ মে (বুধবার) বাসায় শিশুটিকে একা পেয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে।একইসাথে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে। পরে টিটু ওই ভিডিও চিত্র দেখিয়ে ওই শিশুকে আরও কয়েক বার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বাড়িওয়ালা আলাউদ্দিনকে ওই শিশুর বোন জানালে আলাউদ্দিন বিষয়টি দেখবে এবং কঠিন ব্যাবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দেয়। পরে ১৫ মে (রবিবার) বাড়িওয়ালা আলাউদ্দিন শিশুটিকে একা পেয়ে সেই ভিডিওর ভয় দেখিয়ে আবারো ধর্ষণ করে। এরপর থেকে ওই শিশুটি ভয়ে ফতুল্লা মামুদপুরের ফুফুর বাড়িতে চলে যায়। মঙ্গলবার আবারও সে মিজমিজি’র ওই বাসায় আসলে টিটু ধর্ষণের ভিডিও চিত্র দেখিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করতে তার ঘরে ঢুকলে বাহির থেকে ঘর আটকে দেয় ওই শিশুর বোন। পরে ধর্ষণকারী টিটুর স্ত্রী মুন্নি তার স্বামী টিটুকে ঘরের দরজা ভেঙ্গে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এরপর স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মঙ্গলবার বিকেলে বাড়িওয়ালার আলাউদ্দিন ও তার ভাড়াটিয়া টিটুর স্ত্রী মুন্নিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকিকুজ্জামান ঘটনাটি স্বীকার করে জানান, ১১ বছরের শিশুটি ধর্ষণের ঘটনা পুলিশের কাছে বর্ণনা দিয়েছে। এ সময় ধর্ষণের ঘটনাটি ভিডিও চিত্র ধারণ করেছে বলেও পুলিশকে জানায়। এ ঘটনায় বাড়ি মালিক আলাউদ্দিন ও টিটুর স্ত্রী মুন্নিকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. সরাফত উল্লাহ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ধর্ষণের শিকার শিশুকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে আসে। থানায় এসে ধর্ষণের শিকার শিশু স্বীকারোক্তি দিয়েছে টিটু তাকে একাই ধর্ষণ করেছে। টিটু পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতার অভিযোগে আলাউদ্দিন ও ধর্ষক টিটুর স্ত্রীকে আটক করে রাখা হয়েছে।