সাভার থেকে জাকির সিকদারঃ সাভারের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত সাভারে ভাল যাচ্ছে না দলটির দিনকাল। রাজপথে মিছিল, মিটিং নেই, দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীও নেই। এক কথায় ভালো নেই বিএনপি। মামলার ভারে জর্জরিত নেতা-কর্মীদের কেউ জেলহাজতে, কেউ মামলার হাজিরা আর বাকিরা গাঢাকা দিয়ে পিঠ বাঁচিয়ে চলছেন। দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাবেক সংসদ সদস্যরাও মাঠে না থাকায় বিএনপির দুর্গ এখন অরক্ষিত ঘাঁটিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিএনপি সাংগঠনিকভাবে সব সময় শক্তিশালী ছিল এখানে। সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন বাবুর অবস্থা করুন। আশুলিয়ায় তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে আগ্রাসী হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সম্প্রতি আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল তার কর্মচারীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল-হাজতে প্রেরণ করে। ৫ জানুয়ারির পর উপজেলা বিএনপির প্রায় সব নেতা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। মামলায় জড়িয়ে কেউ আছেন হাজতে, আবার কেউ পালিয়ে, কেউ বা পিঠ বাঁচিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিও শেষ হয় দায়সারা। ৫ জানুয়ারির পর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পেট্রলবোমা হামলাসহ নানা অভিযোগে মামলায় প্রায় ২শতাধিক নেতা এজাহারভুক্ত আসামি; যাদের অধিকাংশই উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা। এদের সঙ্গে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন। মামলায় প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন; যাদের অনেকেই কারাগারে। পুলিশ সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ২০-দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধ চলাকালে সাভারে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অর্ধ-শতাধিক মামলা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা দাঁড়িয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ডা: সালাউদ্দিন বাবু, যুবদল নেতা মো: খোরশেদ আলম, বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিন ও এডভোকেট মেহেদী হাসান মাসুম। উপজেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের বাইরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নামেও রয়েছে একাধিক মামলা। একটি সূত্র জানায়, সাভারে রাজনৈতিক দল বিএনপি ও এর অংগ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই ফেরারী আসামী হয়ে পালিয়ে রেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ একাধিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারবাস করছেন। তাদের পরিবারে আতংক বিরাজ করছে। এসব নেতারা দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় পারিবারিক, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অবস্থানও বিপন্ন প্রায়। এদের অনেকে মামলার জামিনে তদবীর অথবা হাজিরা দিতে দিতে আদালতপাড়ায় বেশিরভাগ সময় কাটছে। এক কথায় বলা যায় অসহায় জীবনযাপন করছেন। এ দিকে সম্প্রতি নির্বাচিত সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ� কফিল উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন বিপ্লব, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিনু আক্তারকে অপসারন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। এরা তিনজনই বিএনপি নেতা। এদের বিরুদ্ধে ডজন খানেক মামলা থাকায় গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘদিন পরিষদে অনুপস্থিত ছিলেন। সাবেক সাংসদ ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু দীর্ঘদিন আত্মগোপনে রয়েছেন। সাভার থানা বিএনপি�র সভাপতি মাহমুদুল হাসান আলাল নির্বাসনে না যেতে সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন নিজ বাড়ী থেকেই। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে সরকারী দলের সাথে আতাত করে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে ভ�মি ব্যবসায় মেতে আছে। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার ও সাভার থানা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হাসান আলাল বিরুলিয়ার আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ভ�মি ব্যবসার রাজনৈতিক অংশীদার। মিলে-মিশে চলে এদের ভ�মি ব্যবসা। এদিকে থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও সাভার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাও গ্রেফতার এড়াতে পলাতক রয়েছেন। রানাপ্লাজা ধ্বংসের পরে সাভার পৌর মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি রেফাত উল্লাহ রাজনৈতিক মামলা ও রানাপ্লাজা দূর্নীতির মামলার আসামী হয়ে একাধিক বার গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে পৌর মেয়র পদ থেকে অপসারিত হয়ে এখন শূণ্যের কোঠায় পৌছেঁছেন। রাজপথ কাঁপানো যুবদল নেতা ও সাভার পৌরসভা ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোরশেদ আলমও রাজনৈতিক মামলার কারনে পলাতক রয়েছেন। খোরশেদ আলম বিএনপির একজন সাংগঠনিক নেতা হওয়ায় সরকারী দলের নজরও বেশি রয়েছে তার উপর। গ্রেফতার ও নানা প্রকার হয়রানী এড়াতে তিনি পলাতক রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন যেভাবে দিক নির্দেশনা দিবেন আমরা সেভাবেই কাজ করবো। সাংগঠনিক ভাবে অনেকাংশেই দূর্বল হওয়ার কথা স্বীকার করলেও তাদের মনোবল দৃঢ় রয়েছে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন বলে দাবী করেন। এদিকে বিভিন্ন অংগ সংগঠনের তৃণমূলের কর্মীরা আক্ষেপের সূরে বলেন, আমাদের নেতারা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নেতা হয়ে গেছেন। এদিকে আমরা যারা মাঠ পর্যায়ের কর্মী বা নেতা মামলার খরচ, হয়রানী, পুলিশী গ্রেফতার নানা ভাবে নির্যাতিত। এসব খরচ যোগাতে গিয়ে নি:স্ব প্রায়। একদিকে আতংক আর অন্যদিকে পরিবারের গঞ্চনা নিয়ে পাগল প্রায়।