বাংলাদেশে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে পাসের হার বাড়ায় তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ উচ্ছ্বসিত হলেও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদরা।
রোববার দুদক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় বিষয়টি তুলে সাবেক সচিব ইকবাল মাহমুদ বলেন, “শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। শিক্ষার মান কমে গেছে। সম্প্রতি ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে এমন, বাচ্চারা স্কুলে গেলেই পাস হয়ে যায়, তাদের পড়ার টেবিলে বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।”
“শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। যদি কোনো বিদ্যালয়ে এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থীকে প্রমোশন দেয়া হয়, তাহলে আমরা মামলা করব,” বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
তার যুক্তি, এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার ক্ষেত্রে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করা হচ্ছে।
পাসের হার নিয়ে সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলে আসছেন, “বেশি পাসের ফলে শিক্ষার মান কমেছে না। শিক্ষার মান ঠিকই আছে…..কনজারভেটিভ ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন। আমরা শতভাগ পাস করাতে চাই।”
দুর্নীতি দমন কমিশনের তফসিলে আর্থিক অনিয়ম, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি সাধন, মুদ্রা পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো অপরাধের বিষয়গুলো রয়েছে।
কমিশন চেয়ারম্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যারের এই বক্তব্যটা ইউনিক। আপনাদের মতো আমরাও আজকে বিষয়টি প্রথম জানতে পারলাম।”
শিক্ষা ক্ষেত্রে এই ধরনের অনিয়ম তদন্ত দুদকের কাজের আওতআায় পড়ে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা তফসিলে নেই, তা ঠিক। তবে চেয়ারম্যান স্যার যা বলছেন, তাতেও কিন্তু ভুল নেই।
“কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে পাসের হার যেভাবে বাড়ছে, সেই অনুপাতে শিক্ষার মান বাড়ছে না। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের সঙ্গে বিভিন্নভাবে দুর্নীতিতে যুক্ত, সে বিষয়ে আমরা কাজ করতে পারি।”
পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার বাড়ার সঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টিও অস্বস্তিতে ফেলেছে সরকারকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‘কথা হয়েছে’ বলে দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এখনও জানি না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্যারের কী কথা হয়েছে।
“তবে ক্ষমতার অপব্যবহার দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। দুর্নীতির সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা সংশ্লিষ্ট কেউ যদি নিয়ম-বহির্ভূত কোনো কাজ করে, সেক্ষেত্রে কমিশনের আইনগত ব্যবস্থা নিতে কোনো বাধা নেই।”
মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কর্মস্থলে অনুপস্থিতি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও মামলার হুমকি দেন।
“যেসব চিকিৎসক সরকারের বেতন নিয়ে গ্রামে কাজ করেন না, সেটাও ক্ষমতার অপব্যবহার। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে।”