প্রতিটি মানুষের কিশোর সময় থেকে নিয়মিত অথবা অনিয়মিত একটা একটা করে স্মৃতিতে আটকে থাকা ঘটনা প্রবাহ নিয়ে সামনের দিকে পথ চলতে হয়। প্রতিটি ঘটনাই তাদের জন্য এক একটি অভিজ্ঞতা। প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্র বিশেষে মানুষ বিভিন্ন চরিত্রে অবস্থান করে। মানুষের চরিত্রে ভাল মন্দ এ দুটি পথ বিদ্যমান। এটা কিন্তু সবার জানা। এখানে আমি কেবল মানুষ নামক প্রাণীর কথাই উল্লেখ করছি। মানুষ যেমন অসুস্থ্য হলে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করে ঠিক তেমনি চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষার প্রভাব লক্ষ্যনীয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় পাঠ্য বইয়ে পড়েছিলাম বিষাদ সিন্ধু রচনার একটি অংশ “অপূর্ব ক্ষমা”। তখন আমি কিশোর। স্কুলের শ্রেণী কক্ষে একজন বন্ধু ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত আমার পায়ের আঙুলের উপর বেঞ্চ ফেলে আমাকে মারাত্মক ভাবে আহত করে। ক্লাস টিচার বিচার করবার সময় আমি তাকে ক্ষমা করি। সেই সময় স্ত্রীর বিষ প্রয়োগে স্বামীর আহুতী সুখে থাকো তুমি আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম কথাটিই বারবার বিবেককে তারা করছিল। শিক্ষাটি আমি বিষাদ সিন্ধুর সেখান থেকে পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে সেই ছেলেটি আমার সাথে আজ অবধি যোগাযোগ রেখে চলছে। শিক্ষা মানুষের বিবেক নামক কুটিরের জানালা খুলে দেয়। মানুষের বিবেকই তাকে ভাল মন্দ বুঝতে শেখায়। নীতিগত বিষয়টি মানুষের বিবেকেরই একটি অংশ। কিছু কোমলমতি মানুষ টিকে থাকার লড়াইয়ে বিবেক থাকা সত্বেও পরিস্থিতির প্রতিকূলে অবস্থান করে। আবার কিছু অনুরূপ প্রকৃতির মানুষ তার বিচক্ষনতা দিয়ে প্রতিকুল পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করে তার নীতিগত বিষয়টি অটুট রাখতে চায়। অবশ্য এর জন্য তাকে কিছু মুল্যও দিতে হয়। কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষের বিবেকের আরেকটি ভালো দিক। অকৃতজ্ঞ কোন মানুষই বুঝতে পারে না কৃতজ্ঞতা বোধের অনুভূতি । নিজের স্বার্থ চারিতার্থের জন্য নিমিষেই ভূলে যায় অন্যের অবদানের কথা। এই প্রকৃতির মানুষ নিজ কর্মের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এরাই বোকা মানুষের দল ভারী করে। লোভ এবং হিংসা মানুষের চলার পথে তার বিবেক ভাইরাসের মতো আক্রমন করে। লোভ সংবরণ করা অতীব কঠিন একটি বিবেক যুদ্ধ। ভাল মন্দ না বুঝে লোভ করে মানুষ অনেক খারাপ কাজ করে। যা অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। কিছু মানুষ আছে যারা মানুষের জন্য ক্ষতি হবে এমন কিছু করতে গেলেই বিবেকের বাধায় বাধা পরে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিবেক যুদ্ধে তারা টিকে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত অনেক লোভ তাদের গ্রাস করে না। হিংসা মানুষের বিবেকের আরো একটি অন্তরায়। হিংসুক মানুষ একদিকে যেমন অন্যের ভালো দেখতে পারে না অন্যদিকে কেউ তাকে হিংসে করে সেটাও মেনে নিতে পারে না। হিংসা নামক অদৃশ্য ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ অন্ধের মতো আচরণ করে। এটা এত কঠিন ভাইরাস যে নিজের হিংসুকেরা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতে ও দ্বিধা করে না। অথচ বিবেকবান মানুষ সহজেই হিংসা সংবরণ করে নেয় যা তাদের জীবন চলার পথে সুস্থ্য ভাবে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়।