প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রয়োজনে বাবার মতো জীবন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে গিয়ে আমার বাবা তার জীবন দিয়ে গেছেন, মা জীবন দিয়ে গেছেন, ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন। আমিও আমার জীবন বিলিয়ে দিয়েছি আপনাদের স্বার্থে, আপনাদের কল্যাণে, আপনাদের উন্নয়নে। আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করাই আমার প্রতিজ্ঞা।
লক্ষ্মীপুরের উন্নয়নের জন্য আপনাদের দাবি-দাওয়া করতে হবে না, কিছু বলতে হবে না, বাংলাদেশকে আমি চিনি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। আমি এ দেশকে চিনি, এ দেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল সবই আমার পরিচিত। বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দারিদ্র মুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। আপনাদের দোয়া চাই, ভালোবাসা চাই, আগামী প্রতিটি নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মা-বাবা, ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এরপর বাংলাদেশে হত্যা ও ক্যু’র রাজনীতি হয়েছে। অবৈভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি হয়েছে। একের পর এক খুন হয়েছে। মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নিরীহ নেতাকর্মীর ওপর জেল-জুলুম অত্যাচার হয়েছে। দেশ পিছিয়ে গেছে। গরিব আরো গরিব হয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে জাতির পিতা আদর্শগ্রাম তৈরির কাজ শুরু করে ছিলেন, গুচ্ছগ্রাম শুরু করেছিলেন, নদী ভাঙা মানুষের পুনর্বাসন করতে শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রায় সব কাজই স্থবির হয়ে যায়। ২১টি বছর এদেশের মানুষ কষ্ট পেয়েছে। ২১টি বছর এদেশের মানুষ শোষিত-বঞ্চিত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা ৯৬ সালে সরকার গঠন করে বাংলার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজ শুরু করি। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। কৃষক ভাইয়েরা, বর্গাচাষিরা ঋণ পেত না; আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ঋণের ব্যবস্থা করেছে। এ দেশের মানুষ যারা গৃহহারা, নদী ভাঙা তারা ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেককে আমরা বিনামূল্যে বাসস্থান তৈরি করে দেবো। একটি মানুষও যাতে কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থা আমরা করছি।
মেঘনা নদী ভাঙন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের (প্রথম পর্যায়) উদ্বোধন করেছি খুব শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করবো। আমরা নদী ভাঙন থেকে লক্ষ্মীপুরকে রক্ষা করবো। লক্ষ্মীপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। আমাদের লক্ষ্য দেশকে উন্নত করা। কিন্তু বিএনপি কী করেছে এ দেশে। এ লক্ষ্মীপুরে যেভাবে তারা অত্যাচার করেছে, আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারে নি। বিএনপি আসা মানেই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করা। ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের মানুষের জীবনের নাভিঃশ্বাস ওঠা। জোট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল এ লক্ষ্মীপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৩ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে তারা হত্যা করেছিল। বিএনপি ধর্মে বিশ্বাস করে না। ২০১৫ সালে বায়তুল মোকররমে শত শত কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। মসজিদে আগুন দিয়েছে। কৃষকলীগ নেতা আযম কোরআন শরীফ পড়ছিলেন, সেখানে তাকে খুন করা হয়েছে। যারা এভাবে মানুষ খুন করে, যারা কোরআন শরীফ পোড়ায়, যারা মসজিদে আগুন দেয় তারা কিসের জনকল্যাণে কাজ করবে? ওই বিএনপির নেত্রী হুকুম দিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন।
আমরা দেশের মানুষের কল্যাণ চাই। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি উপজেলায় এবং জেলায় একটি করে মসজিদ এবং ইসলামিক কালচারাল সেন্টার তৈরি করবো। যাতে ইসলামের সত্যিকারের শিক্ষা মানুষ পেতে পারে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে তিনি জনসভাস্থল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় লক্ষ্মীপুরের ২৭টি উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, লক্ষ্মীপুরে লক্ষ্মী ফিরে এসেছে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপির মিছিল করার এখন আর ক্ষমতা নেই। বিএনপি এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন। পকেট কমিটি করবেন না। ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি করেন। প্রধানমন্ত্রী অন্যায় পছন্দ করেন না। অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাজ জনগণকে খুশি করা ও জনগণের জন্য কাজ করা।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের সঞ্চালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন- যুব ও ক্রীড়া উপ-মন্ত্রী আরিফ খাঁন জয়, লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান, লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য লায়ন এমএ আউয়াল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদুন নাহার লায়লি, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের, আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মমিন পাটোয়ারী প্রমুখ।
এদিন প্রধানমন্ত্রী রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদ ভবন, সদর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম, কমলনগর উপজেলা পরিষদ ভবন, কমলনগর উপজেলা অডিটোরিয়াম, লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় ও চতুর্থ), কমলনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও প্রাণী হাসপাতাল উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করেন।
এছাড়া, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন ও নাবিক নিবাস-কোস্টগার্ড মজু চৌধুরীর হাট, পুলিশ অফিসার্স মেস- লক্ষ্মীপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, লক্ষ্মীপুর খাদ্যগুদামে ৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন গুদাম নির্মাণ, রামগঞ্জ উপজেলায় ১৩২/৩৩ কেবি গ্রিড উপ-কেন্দ্র নির্মাণ, পিয়ারাপুর সেতু, চেউয়াখালী সেতু, মজু চৌধুরীর হাটে নৌ বন্দর, লক্ষ্মীপুর পৌর আধুনিক বিপণী বিতান, রামগঞ্জে আনসার ও ভিডিপি ব্যাটালিয়ন সদর দফতর কমপ্লেক্স, লক্ষ্মীপুর পৌর আজিম শাহ (রা.) হকার্স মার্কেট, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ একাডেমিক ভবন কাম পরীক্ষা কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইন্স মহিলা ব্যারাক নির্মাণ, লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়কে পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, রায়পুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন এবং কমলনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় বক্তারা কমলনগরে মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে আরো সাড়ে ৫ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, কৃষি খামার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন, চন্দ্রগঞ্জ উপজেলা বাস্তবায়ন, লক্ষ্মীপুর-ঢাকা-লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম চার লেনে উন্নীতকরণ, নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাইফুর রহমান সোহাগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রাসেল মাহমুদ মান্না, নজরুল ইসলাম ভুলু প্রমুখ।