আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে চলতি সপ্তাহে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অং সান সু চি। মঙ্গলবার এশিয়া-ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন আসেমের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে মিয়ানমারের এই ডি ফ্যাক্টো নেত্রী বলেন, তিনি আশা করছেন, গত তিন মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিরাপদে ফেরাতে চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে দেশটির এক ডজন পুলিশি তল্লাশি চৌকি ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলার জেরে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে সেনাবাহিনী। অভিযান শুরুর পর থেকে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন থেকে এখন পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছেন।
মঙ্গলবার এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ে (আসেম) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সু চি। নেইপিদোতে আসেমের এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা চলছে।
নেইপিদোতে আসেমের দু’দিনের এই মিটিংয়ে এশিয়া এবং ইউরোপের ৫১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নিয়েছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পর আসেমের নেতারা রাখাইন প্রদেশের এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালের দিকে বৈঠক শুরুর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র এবং নিরাপত্তা নীতিমালা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে রাখাইন সঙ্কট নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বসেন। আলোচনায় মিয়ানমার, বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, এস্তোনিয়া, জার্মানি, মাল্টা, রাশিয়া, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা অংশ নেন।
ইইউ’র পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি রোহিঙ্গাদের নিজভূমিতে নিরাপদে ফেরাতে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিতে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আসেমের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ছবি তোলার পর ইইউর এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘শরণার্থীদের (রোহিঙ্গা) নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা আছে। এই প্রক্রিয়ায় ইইউর সমর্থন রয়েছে এবং চুক্তি বাস্তবায়নে পাশে থাকবে ইইউ।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের সময় রাখাইনে নৃশংস হত্যা, গণধর্ষণের অভিযোগ করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, আমরা এটা বলতে পারবো না, আসলেই সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কি না।
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া কি হবে তা নিয়ে গত মাস থেকেই দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনা শুরু করেছেন।’
‘আমরা আশা করছি, শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এর মাধ্যমে যারা সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে তাদের নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিলেও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখ করেননি শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিকত্ব দেয়নি এবং সেদেশের জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর সরকারি তালিকাতেও নেই তারা। সূত্র : রয়টার্স, এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।