ধর্মীয় দর্শন ডেস্ক: বছর ঘুরে আবারো আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে ইবাদাতের মাস মাহে রামাদান ।এ তাৎপর্যময় মাসের আগমন সারা বিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
রমজানে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত বেশি। মাহে রমজান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে মোবারকবাদ দিয়ে সুসংবাদ দিয়েছেন, ‘তোমাদের সামনে রামাদানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’ (সহীহ মুসলিম)
‘রামাদান’ শব্দটি আরবি ‘রামদুন’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম ও কৃচ্ছ্রপূর্ণ জীবনযাপন করে এবং ষড়রিপুকে দমন করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতেন এবং রজব মাসের চাঁদ দেখে মাহে রমজান প্রাপ্তির আশায় বিভোর থাকতেন। শাবান মাসকে রমজান মাসের প্রস্তুতি ও সোপান মনে করে তিনি বিশেষ দোয়া করতেন এবং অন্যদের তা শিক্ষা দিতেন। সাহাবায়ে কিরাম শাবান মাসে আসন্ন রমজান মাসকে নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে অতিবাহিত করার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। শাবান মাসের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে সাহাবায়ে আজমাঈন অধিক পরিমাণে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শুরু করতেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত ব্যক্তিরা হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করে জাকাত প্রদানের প্রস্তুতি নিতেন। প্রশাসকেরা কারাবন্দী লোকদের মুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন শাবান মাসে উপনীত হতেন, তখন মাহে রামাদানকে স্বাগত জানানোর উদ্দেশ্যে আবেগভরে আল্লাহর দরবারে এ প্রার্থনা করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) একদা শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ করে মাহে রামাদানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রতি একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এ মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ (মিশকাত শরীফ)
রামাদান মাস মুসলমানদের নিয়মতান্ত্রিক পানাহার, চলাফেরা, ঘুমসহ নানা ইবাদত-বন্দেগী তাদের আধ্যাত্মিক জীবনে নবজাগরণ সৃষ্টি করে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র রামাদান মাস ভালোভাবে যাপন করবে, তার সমগ্র বছর ভালোভাবে যাপিত হবে।’
তাই মাহে রামাদানের অসীম কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য আমাদের এখন থেকেই শারিরীক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।রাব্বে কারীম আমাদের সকলকেই সেই তাওফীক এনায়েত করুন । আমীন !
লেখকঃ
মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সিনিয়র লেকচারার , ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট,
সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটি।
ইমেইলঃ mostafakabir_seu@yahoo.com
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই