ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, মন্দিরে হামলার ঘটনার এক সপ্তাহ পরে এসেও স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দারা বলছেন, রাত নেমে এলেই আতঙ্ক ভর করে তাদের জীবনে।
বিশেষ করে যেসব পরিবারে বিবাহযোগ্য মেয়েরা আছেন, নিরাপত্তার আশঙ্কায় তাদেরকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন অন্য কোথাও। কেউ কেউ আশ্রয় নিচ্ছেন মুসলিম প্রতিবেশীদের বাড়িতেও।
আতঙ্কিত এলাকাবাসী নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নিজেরাই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
আর সূত্রধর পাড়া, ঘোষপাড়া, দাশপাড়া সহ কিছু এলাকার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক মানুষ এখনো ঘরে ফেরেননি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় হিন্দু কমিউনিটির লোকেরা।
লুটপাটের সময় অনেক নারীর শরীর থেকে স্বর্ণের গহনা খুলে নেয়া হয় এবং নির্যাতন করা হয় বলে জানান নাসিরনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি সুজিত চক্রবর্তী।“আমরা গ্রামের সাত আটজনের টিম মিলে রাতের বেলা পাহারা দিই”-বলেন চক্রবর্তী।
আইনজীবী রাকেশ চন্দ্র সরকার জানান এলাকার অনেক বাসিন্দাই রাত নেমে এলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই তাদের স্ত্রী কন্যাদের বাড়িতে রাখতে সাহস পাচ্ছেন না।
যাদের দূরে কোথাও যাওয়ার অবস্থান নেই এমন হিন্দু পরিবারের বিবাহযোগ্য মেয়েরা সন্ধ্যা নামার পর আশ্রয় নিচ্ছেন প্রতিবেশী কোনও মুসলিম পরিবারে।
এমনই একজন নারী নাসির নগর থেকে টেলিফোনে বলছিলেন “আমাদের ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে। তাদেরতো বাড়িতে রাখতে পারছি না”।
সন্তানসম্ভবা একজন নারী বলছিলেন তার বাড়িটি ইটের তৈরি পাকা বাড়ি হলেও তিনিও নির্যাতন হামলার আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করছেন।
“বাথরুমের ভেতর ঢুকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। আর চিৎকার করছিলাম। আমার বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকতে পারে নাই। বাইরে থেকে বিভিন্ন আক্রমণ হচ্ছে। আর সন্ধ্যা হলেই দোতলায় মুসলিম প্রতিবেশীর বাড়িতে এসে থাকে ৭/৮ জন মেয়ে। নিরাপত্তায় থাইকাও বিভিন্ন আতঙ্কের মধ্যে আছি”- বলছিলেন সন্তানসম্ভবা ওই নারী ।নাসিরনগরে হামলার ঘটনার পর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান নিশ্চিত করেছেন। আগেই প্রত্যাহার করা হয়েছিল নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আব্দুল কাদেরকে।
এর পর ওই এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হলেও এর মধ্যেই এক রাতে হিন্দুদের বহু ঘরবাড়ি ও মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেবার ঘটনা ঘটে।
এমনকি গত রাতেও (শনিবার) নাসিরনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় সাংবাদিক মাসুক হৃদয়।
এদিকে আজ স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এই হামলার ঘটনাকে ঘিরে বিতর্কের মুখে থাকা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক।
তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে গাল দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, কেউ তা প্রমাণ করতে পারলে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেবেন ।
গতকাল বিএনপি এ ঘটনায় সরাসরি স্তাস্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনকে দায়ী করলেও মন্ত্রী ছায়েদুল হক এ ঘটনার জন্য বিএনপি-জামাত চক্রকে দায়ী করেছেন।