বর্ণিল আলোকসজ্জায় যেন ছেয়ে গেছে আকাশ। জোনাকির মতো ছোট ছোট বৈদ্যুতিক বাতির সাহায্যে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার এমপি হোস্টেল মাঠে আলোর সুরঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। তার ভেতর দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বর সেজে এলেন রাজকুমার। তার নাম মনজুর কাদের জিয়া। পেশায় সাংবাদিক। আলোর সুরঙ্গ পেরিয়ে পঞ্চাশ গজের মতো এগুতেই মেটাল ডিটেক্টর বসানো দরজা। দরজা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তরুণ বয়সী কয়েকজন। শেষবারের মতো তারা পরিকল্পনা সাজিয়ে নিচ্ছে। কতো টাকায় বরকে ছাড়া হবে, সেই পরিকল্পনা। গেটের ঝামেলা মিটিয়ে বর পা রাখেন লাল গালিচায়। এই লাল গালিচার শেষ মাথায় অপেক্ষা করছেন রাজকন্যা। তার নাম কোনাল। সমনুর মনির কোনাল সংগীতশিল্পী, ২০০৯ সালে চ্যানেল আই আয়োজিত ‘সেরা কণ্ঠ’ বিজয়ী।
বরের আগে চলছে ব্যান্ড পার্টি। তাদের বাদ্যে বাজছে বিয়ের গান। তার পরেই কয়েকজন অবিরাম নেচে যাচ্ছে। বর সলজ্জ পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন কনের দিকে।
কনের স্টেজ সাজানো হয়েছে পদ্ম ফুলের আদলে। চারপাশে পাঁপড়ি। মাঝে কোনাল বসে আছেন নিজের পছন্দে নওমির ডিজাইন করা বাংলাদেশী জামদানী পরে।
কোনাল বললেন, ‘আজ আমার জীবনে বিশেষ ও সেরা একটি দিন। এই দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাই এমন দিনে বাংলায় তৈরি পোশাকে নিজেকে সাজিয়েছি।’
প্রথম আলো পত্রিকার সাংবাদিক জিয়া আর সংগীতশিল্পী কোনালের বিয়ে হয় গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর। পারিবারিকভাবে তারা বিয়ে করলেও আগে থেকে দুজনের জানাশোনা ছিল।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ছিল তাদের বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে দুই পরিবারের আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন দেশের সংস্কৃতি জগতের তারকারা। ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিএনপির নেতা আমানুল্লাহ আমান, মেয়র আনিসুল হক, সুবর্ণা মুস্তাফা, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, সৈয়দ হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, তপন চৌধুরী, রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, শাহীন সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, শওকত আলী ইমন, কবীর বকুল, দিনাত জাহান মুন্নী, সামিনা নবী, ফাহমিদা নবী, লিলি ইসলাম, আসলাম সানি, নোবেল, আঁখি আলমগীর, বিজরী বরকতউল্লাহ, সম্রাট, তপু, তাপস, বিদ্যা সিনহা মিম, সৈয়দ শহীদ, চিরকুটের সুমি ও ইমন, অনন্যা রুমা, মৌসুমী বড়ুয়া, শিরিন বকুল, কনা, মেহজাবিন, রেদওয়ান রনি, মাসুদ হাসান উজ্জ্বল, ইমন সাহা, ফারহানা নিশো, তানিয়া হোসাইন, শাহেদ আলী, দীপা খন্দকার, স্বাগতা, সন্ধি, সাব্বির, মুহিন, পুতুল, নওরীন, রন্টি দাস আবেদ, সুজানা, স্বপ্নিল সজীব, লিজা, পিয়াসহ আরও অনেকে। একঝাঁক তারকার পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এমপি হোস্টেলের মাঠ।
আঁখি আলমগীর বলেন, ‘কোনাল আমার আদরের ছোট বোন। জিয়াও খুব প্রিয়। ওদের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করি।’
নোবেল বললেন, ‘জিয়া আর কোনালের জুটিটা চমৎকার হয়েছে। দুজনই মিষ্টি হাসির। তাদের হাসি দীর্ঘায়িত হোক এই কামনা সবসময়।’
নতুন দুলাভাই ও ভাবীর সঙ্গে সেলফি তুলে সময়টা ধরে রাখার চেষ্টায় মগ্ন দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজন। পাশাপাশি প্রিয় তারকারাও জিয়া আর কোনালের মধুর সময়ের স্বাক্ষী হতে হাসিমুখে দাঁড়াচ্ছেন ক্যামেরা আর মুঠোফোনের সামনে।
বিয়ের স্টেজের পাশে উইশ বোর্ডে আগত অতিথিরা লিখেছেন নতুন দম্পতির জন্য তাদের মনের কথা। সেখানেই ‘লিজা আন্টি’ নাম দিয়ে একজন লিখেছেন, ‘এই সুন্দর পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী হও তোমরা।’
এদিকে রাজকুমার জিয়া- রাজকুমারী কোনালের বিয়েতে, বর-কনেকে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ছাড়াও সকল শ্রেণী- পেশার কুয়েত প্রবাসীরা জানিয়েছেন, উষ্ণ অভিনন্দন,এবং সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দাম্পত্য জীবন কামনা করেছেন, কোনালের শৈশব ঠিকানার কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীরা।