জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : তিন দফা বন্যার পরও রাঙ্গুনিয়ায় আমন চাষাবাদে শত শত কৃষক দমে যায়নি। আমন চাষাবাদের বীজতলা বার বার বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হলেও কৃষকরা চাষাবাদ করার লক্ষ্য থেকে পিছপা হয়নি। এবারের আমন চাষাবাদের মূখ্যম সময়ে রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে তিন দফা বন্যায় অনেকেই মনে করেছিল এবার বুঝি আর আমন চাষাবাদ করা যাবে না। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পর কৃষকরা গুমাই বিলে আমন চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে। গুমাই বিল এখন সবুজ আমন চারায় ভরে গেছে। যথাসময়ে আমন চাষাবাদ করা থেকে পিছিয়ে পড়লেও ভাল ফলনের প্রত্যাশা করছে কৃষকরা।
‘গেল সময়ে কয়েক হাজার টাকা ধার-কর্জ করে রোপা আমনের বীজতলা করেছিলাম। কিন্তু বন্যায় জমির সব বীজতলা নষ্ট হয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার ধারদেনা করে চাষাবাদ করছি। আশা করেছি এবার জমিতে ভাল ধান হলে ধারদেনা থেকে মুক্তি পাবো।’ সরেজমিনে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের শষ্যভান্ডার খ্যাত গুমাই বিলে গেলে এমন কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার গুমাই বিলের কৃষক চন্দ্রঘোনা পাঠান পাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছ। বন্যার কারণে লোকসানের ক্ষোভ ও কষ্ট থাকলেও লাভের আশায় জমিতে ধানের চারা লাগাচ্ছেন তিনি। এভাবে আশায় বুক বেঁধে কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আবার কখনো ভারী বৃষ্টি কিংবা প্রখর রোধ এবং মেঘের লুকোচুরি খেলা উপেক্ষা করে আমন রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কয়েক দফা বন্যার পানি তাদের চাষাবাদকে দমাতে পারেনি। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জমিতে নেই পানির সংকট। সার, বীজ প্রাপ্তিতেও কৃষককে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। বিলের অধিকাংশ জমিতে চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী জমিতেও চলছে আমন রোপণের ধুম। দেখা গেছে কৃষকদের ব্যস্ততার চিত্র। কেউবা জমি তৈরি, কেউবা বীজতলা থেকে বীজ তোলা, কেউবা পানিতে টইটুম্বুর জমিতে উৎসবমুখর পরিবেশে চালিয়ে যাচ্ছেন চারা রোপণের কাজ। দেখা মিলছে দল বেঁধে চারা লাগানোর চিত্রও।
এভাবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি আমন চাষাবাদ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কাজী রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘কৃষকরা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল ফলাতে পারে সেদিকে লক্ষ রেখে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে আশা করি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমন চাষাবাদ হবে।’
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, ‘বার বার বন্যাতে কৃষকরা যাতে আমন চাষাবাদ থেকে পিছিয়ে না যায় সে লক্ষে তাদের মাঝে পর্যাপ্ত প্রণোদনা প্রদান করে উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে কৃষকরা নব উদ্যোমে আমন চারা লাগিয়ে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চাষ হয়েছে। আবাহাওয়া অনূকুলে থাকলে কৃষকরা ভাল ফলন পাবে।’
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, ‘বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা পুরোদ্দমে আমন চারা লাগাচ্ছে। চাষাবাদে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।’