জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : আশির দশকে নির্মিত ভোলার গোট্টা সড়কটি রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার উত্তর ঘাটচেক ও লক্ষীরখীল এলাকার এক সময় তিন গ্রামের হাজার হাজার মানুষের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ঐ সড়ক পথে ইছাখালী খালের উপর নির্মিত বাঁেশর সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ায় সড়কটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গ্রামের কৃষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার পথচারীর বিকল্প সড়ক দিয়ে চলাচলে তাই দুর্ভোগের অন্ত:নেই।
সরেজমীন পরিদর্শনে জানা যায়, এই সড়ক পথে রাঙ্গুনিয়ার ঐতিহ্যবাহী নলুয়ার বিলের দুই পাড়ের কৃষকরা তাদের কৃষি কাজে সার, বীজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা নেওয়া ও কম খরচে বাজারজাত করতে পারে। সড়কটির পূর্ব প্রান্ত উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিসি সড়কের সাথে মিলে যোগাযোগের নতুন ও সহজ মাধ্যম সৃষ্টি করেছিল। অন্যদিকে গ্রামের শিক্ষার্থীরা নির্বিঘেœ স্বল্প সময়ে তাদের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যেতে পারে এই পথ দিয়েই। উত্তর ঘাটচেকের মানুষ এই পথ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে পারে সহজেই। কিন্তু এখন বাঁশের সাঁকোটি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ায় এলাকার লোকজনের যাতায়ত বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিকল্প সড়ক পথে যাতায়ত করতে গিয়ে এলাকার মানুষের সময় ব্যয় ও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। এছাড়াও স্বাস্থ্য ও কৃষিকাজ সহ সব দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে এলাকাটি। এখন দশ মিনিটের পথটি যেতে তাদের এক ঘণ্টায় ঘুরে আসতে হয়। অন্যদিকে ঐ পৌর ওয়ার্ডের ইছাখালী খালের দুই পার্শ্বে অবস্থিত গুচ্ছ গ্রাম, লক্ষির খীল ও উত্তর ঘাটচেকের কৃষকদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে যোগাযোগের এই স্বল্প পথ হারিয়ে। স্বাস্থ্য সেবা নিতে যেতে হচ্ছে দীর্ঘ পথ ঘুরে। অথচ মাত্র ষাট গজ দুরুত্বের এই খালটির উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে উত্তর ঘাটচেক ও লক্ষীরখীল গ্রামবাসীর মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টিকারী পথটি পাল্টে দিতে পারতো কৃষক, শিক্ষার্থীসহ তিন গ্রামের মানুষের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রা।
উত্তর ঘাটচেক নলুয়ার বিলের কৃষক আকবর আলী জানায়, খালের অপর প্রান্তে তার বাড়ি। কৃষি জমি থেকে দেখা যায়। কিন্তু খালের উপর ব্রীজ না থাকায় তার কৃষি জমিতে উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে ইছাখালি হয়ে কাপ্তাই সড়ক দিয়ে দীর্ঘ পথ পারি দিতে হয়। এতে তার কৃষি কাজে খরচ বাড়ায় ফসল ভাল হলেও লাভের মুখ দেখছেন না। রহিম মিঞা নামে অপর এক কৃষক জানায়, একবার বাঁশের সাকো দিয়ে তার ধান নিয়ে যাওয়ার সময় সাকোর বাঁশ ভেঙ্গে তার ধান পানিতে পরে যায়। ফলে তাকে প্রচুর ক্ষতির স্বীকার হতে হয়েছে। লক্ষিরখীল এলাকার শিক্ষার্থী মোহছিনা আক্তার জানায়, সে দক্ষিণ ঘাটচেক উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে পথের ব্রীজটি ভেঙ্গে যাওয়ায় দীর্ঘ কাপ্তাই সড়ক পারি দিয়ে যেতে হয়। উত্তর ঘাটচেক এলাকার দিনমজুর দুলা মিঞা জানায়, তার বাড়ি খাল পারে। দীর্ঘ দিন ধরে এই বাঁশের সাকোটি নির্মাণে বিভিন্ন মহলে এলাকার অন্যান্যদের সাথে তিনিও দাবী জানিয়ে আসছেন। কারণ এই সাঁকোটি হলে তার কৃষি জমির ফসল উৎপাদনে খরচ অনেকটা কমে আসবে। এতে সে লাভের মুখ দেখবে।
স্থানিয় পৌর কাউন্সিলর মো.সেলিম জানান ইছাখালী খালের উপর ব্রীজ নির্মাণ করে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম সৃষ্টি করা অত্র এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী। তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে এই খালের উপর পূর্বে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতি বছর ভরা মৌসুমে খালের পানি বেড়ে তা ভেঙ্গে যায়।
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র শাহজাহান সিকদার জানায়, স্থানীয়দের দাবী এই খালের উপর ব্রীজ নির্মাণ করা। এই ব্যাপারে আমি শুনেছি। এটি নির্মাণ করা খুবই জরুরী। তাই ব্রীজ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সকলের দাবী ইছাখালী খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করে অকার্যকর সড়কটি কার্যকর করে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব করা হোক।